ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

যোগ করেই রোগে ভুগছেন যোগগুরুরা !

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৯ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
যোগ করেই রোগে ভুগছেন যোগগুরুরা ! ডা. রাজগোপাল ও যোগ গুরু রামদেব

ঢাকা: যেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বে যোগ সাধনার মাধ্যমে সুস্থতা লাভের ডাক দিয়েছেন, সেখানে কিনা ভারতেরই একজন অর্থোপেডিক সার্জন বলছেন, যোগ ধর্মীয় সাধনার জন্য ভাল হলেও হাটুঁ এবং গোঁড়ালির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

তিনি নিজেই অনেক যোগ গুরুর গোড়ালিতে অস্থি প্রতিস্থাপনের অস্ত্রপচার করেছেন বলেও জানিয়েছেন ডা. অশোক রাজগোপাল।

সারা বিশ্বে এই যোগ এখন হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য।

আর অনেকেই ধর্মীয় ধ্যান ছাড়াও যোগকে ভাল থাকার উপায় হিসেবে দেখছেন। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের এই সতর্কতা নিত্যদিনই ফুলতে থাকা ব্যাবসাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।

ভারতে বাবা রামদেবকে বলা হয়ে থাকে যোগের অাধ্যাত্মিক গুরু। তিনি টিভি চ্যানেলগুলোতে বিভিন্ন যোগের ভঙ্গিমা প্রদর্শন করে গড়ে তুলেছেন পৃথিবীব্যাপী যোগের এক বিশাল সাম্রাজ্য। বিশ্বাস করাতে শুরু করেছেন শ্বাস-প্রশ্বাসের এই ব্যায়ামের মাধ্যমে এউডসের মতো মরণব্যাধি থেকেও সেরে ওঠা যায়।

কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার যোগ ব্যায়াম সামগ্রী বিক্রি হয় এবং দেড় কোটি মানুষ নিয়মিত এই সাধনা করেন।

কিন্তু শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ অনেক বেশি সম্প্রসারিত ও টান টান করে এই ব্যায়ামের কারণে গাঁটগুলোতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। যার ফলে বাত পর্যন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন ডা. রাজগোপাল।

যোগ ব্যায়ামের অনুসারীরা শরীরের জয়েন্ট এবং হাড়ের রোগে ভোগেন বলেও জানান তিনি।

রাজগোপাল বলেন, নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মানুষকে প্রশিক্ষিত করে যোগ করা গেলে তার চমৎকার সাফল্য অাসবে। তবে গণহারে মানুষকে যোগ করাতে গেলে হঠাৎ করে যোগের ভঙ্গিমা রপ্ত করতে গিয়ে তারা বিপদে পড়বেন এবং অসুস্থ হয়ে যাবেন। যারা যোগের ভঙ্গীগুলোতে অভ্যস্ত নন, তারা এই ব্যায়াম করলে দেখা যাবে হাঁটু এবং গোড়ালিতে অতিমাত্রায় চাপ পড়ছে। এই অতিচাপের কারণে তরুণাস্থিগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং খুবই খারাপ পরিণতি ভোগ করতে হতে ‍পারে।

যোগ সাধনা অনুশীলন করা একশ’রও বেশি লোকের মধ্যে এই সমস্যা দেখতে পেয়েছেন রাজগোপাল।

তিনি বলেন, অনেক মানুষ ভালোভাবে প্রশিক্ষিত না হয়ে যোগ সাধনা করতে গিয়ে নিজেদেরই ক্ষতি করছেন। তাই ভঙ্গীমাগুলো সঠিকভাবে রপ্ত করে পরিপূর্ণভাবে যোগ সাধনায় যাওয়া উচিত।

যোগের জনপ্রিয় ভজ্রসানা ভঙ্গীটি থান্ডারবোল্ট নামেও পরিচিত। এতে নিতম্বের নিচে দুই পায়ের গোড়ালিকে অাটকে রাখা হয়। অনেক যোগ গুরুই অাজ এ অাসনের কারণে হাঁটু এবং পায়ের গোড়ালির সমস্যায় অাক্রান্ত বলে জানান ডা. রাজগোপাল।

ভারতের ইয়োগালাইফ সেন্টারের প্রশিক্ষক সাভিরা গুপ্তা বলেন, জটিল ভঙ্গীগুলোকে ধীরে ধীরে রপ্ত করা গেলে শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকে।

ডা. রাজগোপাল বলেন, যোগের মূল জায়গাটা হচ্ছে শরীরবিদ্যা। তবে সবার শরীর তো অার এক নয় এবং একইভাবে বেড়ে ওঠে না। আমাদের একটি ভঙ্গী থেকে অারেকটি ভঙ্গীতে যাওয়ার সময় খুবই সতর্ক থাকতে হবে, যেন মোঁচকে না যায়। নিজের শরীর কতটুকু নিতে পারে সে অনুযায়ীই ব্যায়াম করা উচিত। সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ ধরনের মোঁচকানো এবং সমস্যা দূর করা যায়।

১৯১০ সালে ব্রিটেনে প্রথম যোগ সোসাইটি যাত্রা শুরু করে। তবে ১৯৬৮ সালে বিখ্যাত মিউজিক ব্যান্ড বিটলসের সদস্যরা তাদের গুরু মহর্ষি মাহেস যোগীর শরনাপন্ন হলে তা জনপ্রিয়তা পায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
এমএন/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।