ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

হাসপাতালের সংকটাপন্ন প্রসূতিকে স্থানান্তর, পরে মৃত্যু

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৯
হাসপাতালের সংকটাপন্ন প্রসূতিকে স্থানান্তর, পরে মৃত্যু তানিয়া আক্তার এবং তার ২ বছরের মেয়ে আশফিয়া । ফাইল ছবি

মৌলভীবাজার: পুলিশের উপস্থিতিতে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংকটাপন্ন এক প্রসূতি রোগীকে অন্যত্র স্থানাস্তর এবং পরে ভুল চিকিৎসাজনিত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে সেই রোগীর ভূমিষ্ঠ কন্যাশিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে।

পারিবারিক সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সকাল শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তানিয়া আক্তার নামের এক প্রসূতির অস্ত্রোপচার শুরু হয়। গাইনি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রোকসানা পারভীনের তত্ত্বাধানে অপারেশন চলে।

সেই সময় একটি কন্যাশিশুর জন্ম হয়।

তারপর কিছুক্ষণ পর হঠাৎ হাসপাতালে পুলিশ এসে জড়ো হয়। পরবর্তীতে রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তানিয়া আক্তার (২২) মারা যান। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টায় তানিয়া আক্তারের দাফন সম্পন্ন হয়।

রোগীর স্বামীর নাম আশরাফ উদ্দিন রনি। তিনি শ্রীমঙ্গল উপজেলার হরিণছড়া চা বাগানের মসজিদের ইমাম। তাদের প্রথম কন্যা সন্তানটির নাম আশফিয়া আক্তার। বয়স দুই বছর।

তানিয়া আক্তারের স্বামী আশরাফ উদ্দিন রনি অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, ভুল চিকিৎসার করে আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলা হয়েছে। তার জরায়ু কেটে ফেলা হয়, ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। ডা. রোকশানা পারভিন আমার স্ত্রীর ডাক্তার। তার কথা মতো আমি আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে আমার স্ত্রীকে নিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করাই এবং সকাল সাড়ে দশটার দিকে সিজার শুরু হয়। কিছুক্ষণ পরে আমাকে আবার ফোন দিয়ে আমাকে ডা. রোকশানা পারভিনের স্বামী ডা. সাজ্জাদ বলেন বলেন, ‘আপনার স্ত্রীর তো অবস্থা ভালো না। ওনার জ্ঞান ফিরতেছে না। ’

‘আমি তখন উনাকে বলি এখন কি করা যায়? ডা. সাজ্জাদ তখন বলেন, ‘অপেক্ষা করেন, দেখা যাক কি করা যায়?’ এভাবে সাতপাঁচ করে আমাকে একটা বুঝ দিয়ে দেয়। তখন আমি হাসপাতালে বাইরে চলে আসি। কিছুক্ষণ পরেই ওরা আমার স্ত্রীকে সিলেট ওসমানীতে স্থানাস্তরের জন্য এম্বুলেন্স এবং আমার স্ত্রীর ছাড়পত্রও দ্রুত রেডি করে ফেলেছে তা আমি জানিই না। আমার সাথে পরামর্শ ছাড়াই তারা এক কাজটি করে।

তিনি আরো বলেন, ‘দুপুর দেড়টার দিকে আমরা শ্রীমঙ্গল থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। সিলেট ওসমানীতে নেয়া সাথে সাথে ডাক্তার বলেছেন যে, আপনারা তো ডেডবডি নিয়ে এসেছেন। তিনি ২ ঘন্টা আগেই মারা গেছেন। ’

আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রশ্ন করে আশরাফ উদ্দিন রনি বলেন, ‘আমার রোগীর অবস্থা যখন খারাপ তখন আমাকে আগে থেকে জানানো হলো না কেন? আগে তো শত শত টেস্ট করা হয়েছিল। তখন কি ধরা পরেনি আমার স্ত্রীর সমস্যা?’

পুলিশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী যখন ওটিতে, তখনই দুজন পুলিশ শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে ওটির ভেতর প্রবেশ করে। তখন আমার আপা পুলিশের বিষয় নিয়ে কয়েকজনের সাথে তর্কাতর্কি করেন। পুলিশ আসার সাথে সাথে পুলিশকে অপারেশন রুমে ঢুকিয়ে আমার মৃত স্ত্রীকে নিচে পাঠিয়ে দিয়েছে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্য। ’

তানিয়া আক্তারের অপর আত্মীয় শ্রীমঙ্গল পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবেদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘তানিয়া হেঁটে হেঁটে অপারেশন কক্ষে যায়। ডা. রোকশানা পারভিন সিজারের সময় তানিয়ার জরায়ু কেটে ফেলেছে এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। আমরা চিকিৎসকের এই অবহেলার বিচার চাই। ’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাখাওয়াত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, “এই রোগী আগেও একবার সিজার করা হয়েছিল। এবার যখন আসছে তখন রোগীর অবস্থা নাকি ভালো না। রোগীকে পরে সিলেট মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সিলেট মেডিকেলে নেওয়ার পর যে কোনো কারণেই হোক রোগীটা মারা যায়। আমি আসলে এতোটুকুই জানি। আমি আজ একটি সেমিনারে অন্যত্র ছিলাম। ’

পুলিশের উপস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দুই-তিন দিন আগে শ্রীমঙ্গল হাসপাতালে দুই পার্টির গণ্ডগোলের মাধ্যমে একজনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আরো তিনজন স্টেপ করা রোগী এখানে ভর্তি ছিল। দুই-তিন দিন আগের ঘটনায় তারা ভয় পেয়ে পুলিশ এনেছে। তবে আমি সিউর না যে পুলিশের উপস্থিতিতে সংকটাপন্ন প্রসূতিকে অন্য হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়েছে কি না। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৩০৭ ঘন্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৯
বিবিবি/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।