সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক রীতন্দ্র চন্দ্র দেব বলেন, ইতোমধ্যে পুলিশ ৪ দালালকে আটক করেছে। কিন্তু নিরাপত্তার অভাব থাকায় প্রভাবশালী দালালদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারছিনা।
জেলা প্রশাসক রোগীদের সেবা নিশ্চিতের স্বার্থে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের নির্দিষ্ট সময়ের আগে হাসপাতালে প্রবেশ করতে না দেওয়ার আহ্বান জানালে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, এখানে প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা আমাদের কথা শোনেন না। নিষেধ অমান্য করে যখন-তখন হাসপাতালে প্রবেশ করে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ ব্যাপারেও তিনি পুলিশের সহযোগিতা কামনা করেন।
এ সময় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন, ইতোমধ্যে পুলিশ কয়েকজন দালালকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীকালে তারা জামিনে বেরিয়ে পড়ে। হাসপাতাল আঙিনায় অযাচিত অ্যাম্বুলেন্স ও দালাল রোধে ব্যবস্থাপনা কমিটিকে তৎপর থাকতে হবে। এ ব্যাপারে পুলিশের সহযোগিতাও অব্যাহত থাকবে।
সভায় জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান বলেন, আমার ১৮ বছরের চাকরি জীবনে কোথাও বদলির জন্য তদবির করিনি। সুতরাং আমি দায়িত্বে থাকাকালীন আইন নিজ গতিতে চলবে। ওষুধের মূল্য বৃদ্ধিসহ হাসপাতালের সব সমস্যা নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দীর্ঘদিন ধরে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে দালালদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। প্রতিদিনই প্রতারিত হচ্ছেন বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল প্রকৃতির লোকজন। দালালদের খপ্পরে পড়ে অনুমোদনবিহীন বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে অনেক রোগীর প্রাণহানিও ঘটছে। শহরের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকের পৃষ্ঠপোষকতায় সক্রিয় রয়েছে এই দালাল গোষ্ঠি। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বার বার সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও কার্যকর না হওয়ায় কথা ওঠে- হাসপাতালে দায়িত্বরতদের যোগসাজশেই ব্যবসা করে যাচ্ছে দালালরা।
একপর্যায়ে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ২৮ দালালের তালিকা প্রকাশ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তালিকা প্রকাশের পর কিছুদিন তৎপর থাকলেও পরবর্তীতে আর এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিছু সংখ্যক চিকিৎসকদের যোগসাজশ ও এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় এসব দালালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
তালিকা অনুযায়ী দালালরা হলো- সদর উপজেলার ছোট বহুলা গ্রামের ইউনুছ মিয়া, হবিগঞ্জ শহরের মোহনপুর এলাকার সেলিম মিয়া, বানিয়াচং উপজেলার শাহিন মিয়া, একই উপজেলার কান্দিপাড়া গ্রামের অসিত দাশ, হবিগঞ্জ শহরের শংকরের মুখ এলাকার সজল দাশ, সদর উপজেলার হাতির থান গ্রামের নুরুল মিয়া, লাখাই উপজেলার বুল্লা গ্রামের সাদিকুন্নেছা, হবিগঞ্জ শহরের মোহনপুর এলাকার ছায়া বেগম, ছোট বহুলা গ্রামের রেজিনা বেগম, ইনাতাবাদ এলাকার সিরাজ মিয়া, বড় বহুলা গ্রামের জাফর মিয়া, চুনারুঘাট উপজেলার মাসুক মিয়া, মির্জাপুর গ্রামের শাহিন মিয়া, অনন্তপুর আবাসিক এলাকার আব্দুস সালাম, একই এলাকার আব্দুল মালেক, বানিয়াচং উপজেলার হিয়াল গ্রামের সেলিম মিয়া, অনন্তপুর এলাকার আব্দুল খালেক, অসিত, উত্তর সাঙ্গর গ্রামের সুজন, একই গ্রামের চয়ন, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার মাছুম, লাখাই উপজেলার করাব গ্রামের হাছান, চুনারুঘাট উপজেলার রেহেনা, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার যাত্রাবড়বাড়ি এলাকার টেনু মিয়া, বানিয়াচংয়ের মিজান, চুনারুঘাটের মাসুক ও শহরের রাজনগর এলাকার দীনুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৯
আরএ