হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অ্যানেসথেসিয়া পদে সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম ৩০ অক্টোবর অবসরে যান। এরপর থেকেই মূলত পদটি শূন্য।
অধিকাংশ রোগীরা সরকারি খরচে স্বল্প ব্যয়ে অপারেশন করার উদ্দেশ্যেই হাসপাতালে ভর্তি হন।
জয়পুরহাট সদরের ধারকী ঘোনাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মিনা বেগম (৫০)। তিনি জরায়ুতে বড় ধরনের একটি টিউমার নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন গত চারদিন ধরে। উদ্দেশ্য অপারেশনের মাধ্যমে সেটি নির্মূল করবেন। কিন্তু সিনিয়র অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট চিকিৎসকের শূন্যতায় তার অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে না।
শুধু জয়পুরহাট সদরের মিনা বেগমই নয়, জরায়ুর মুখ বড় হওয়ার সমস্যা নিয়ে বেশ কয়েক দিন অগে ভর্তি হন নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের বাসিন্দা নাজমা বেগম। এখন পর্যন্ত তারও অপারেশন সম্ভব হয়নি।
এছাড়াও ৫ নভেম্বরের হার্নিয়ার সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রোয়ার গ্রামের রোগী রিফাত হোসেন, ৯ নভেম্বর অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি হন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার খাসবাট্টা গ্রামের বাসিন্দা আকাশ হোসেন। তাদের প্রত্যেকের বড় ধরনের সমস্যা, অপারেশ করা খুব জরুরি। অথচ একজন সিনিয়র অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট চিকিৎসকের শূন্যতায় তাদের অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে না।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে ভর্তি হওয়া রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এসব সমস্যা জানা গেছে।
সার্জারি, গাইনি ও অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে অপারেশনের অপেক্ষায় ভর্তি থাকা রোগীদের স্বজন গোলাম রাব্বানী, সনি, স্বর্ণা, মিম্মাসহ অনেকেই জানান, আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। দিন আনা, দিন খাওয়া। সরকারি খরচে এ হাসপাতালে অপারেশন করাবো বিধায় আমাদের রোগীদের ভর্তি করে দেই। কিন্তু দিনের পর দিন সময় পার হলেও অপারেশনের কোনো তারিখ পাচ্ছি না। শুনেছি হাসপাতালের একমাত্র সিনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেসথেসিয়া) ডাক্তারের শূন্যতায় বড় ধরনের অপারেশন বন্ধ রয়েছে। যে কারণে আমরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছি।
হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করার সময় কথা হয় সার্জারি বিশেজ্ঞ ডা. মফিউর রহমান, গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. নাহিদ সুলতানাসহ একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে। তারা জানান, সিনিয়র অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট চিকিৎসকের পদ শূন্য হওয়ায় অপারেশন থিয়েটারে একজন মাত্র এমবিবিএস ডাক্তার দ্বারা অজ্ঞান করার কাজ চালানো হচ্ছে। এ জন্য অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে। এতে করে আগের মতো অধিক সংখ্যক অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে খুব জরুরি হয়ে পড়েছে শূন্য পদটি পূরণ করার।
জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের আরএমও ডা. সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তারের পদটি শূন্য হওয়ায় এমন ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি স্বল্প আয়ের রোগীরা যেখানে ২শ টাকা খরচে একটি অপারেশন সম্পন্ন করতে পারতেন, সেখানে একই অপারেশন বাইরের প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে সর্ব নিম্ন সাত হাজার টাকা তাদের ব্যয় করতে হবে। দ্রুত এ পদটি পূরণ করে রোগী ও তাদের স্বজনদের ভোগান্তি কমে আনতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ খুব তড়িৎ ব্যবস্থা নেবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ ব্যাপারে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছি। জনস্বার্থে খুব দ্রুত শূন্য পদটি পূরণ করে স্বাস্থ্য বিভাগ রোগীদের ভোগান্তি দূর করবেন বলেও আশা করছি।
উত্তরাঞ্চলের সীমান্ত ঘেঁষা এই আধুনিক জেলা হাসপাতালে জয়পুরহাটের ১২ লাখ মানুষ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েটি উপজেলার রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে বহির্বিভাগে রোগী দেখান ১ হাজার ও ইনডোরে চিকিৎসা নেন সাড়ে ৩শ রোগী। এর মধ্যে শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের ৬ দিন সার্জারি, অর্থোপেডিক ও গাইনি বিভাগে ভর্তিকরা জটিল রোগীদের অপারেশন করানো হয়। এছাড়াও ইমার্জেন্সি রোগীদের জন্য ২৪ ঘণ্টাই অপারেশন সার্ভিস দেওয়া হয়।
দেড়শ শয্যার এ হাসপাতালে একশ শয্যার জনবল দিয়েই চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে, যেখানে ৪৫ চিকিৎসকের স্থলে রয়েছেন মাত্র ২২ জন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৯
এসএইচ