স্বাস্থ্যখাত নিয়ে কাজ করা ডিজিটাল স্টার্টআপ ‘আমার আস্থা’ এর অন্যতম উদ্যোক্তা শরিয়ত রহমান বলেন, আমাদের এখন যেহেতু করোনা পরিস্থিতি মেনে নিয়ে জীবনযাপন করতে হবে তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিভিন্ন ধরনের সুরক্ষা সামগ্রীর প্রতি আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। মান সম্পন্ন পণ্যের বদলে মানহীন এবং অনুমোদন নেই এমন সামগ্রী ব্যবহার করলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে।
শরিয়ত রহমান আরও বলেন, পিপিই গাউন এবং মাস্ক উৎপাদন করতে হলে অবশ্যই ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নিতে হবে। বিদেশ থেকে আমদানি করলেও অনুমতি লাগবেই। বিভিন্ন পরীক্ষার পর তারা ছাড়পত্র দিলে তবেই সেগুলো উৎপাদন বা আমদানি করে বাজারজাত করা যাবে। একইসঙ্গে একজন ক্রেতা যখন এ ধরনের পণ্য ক্রয় করবেন তারা উৎপাদক সম্পর্কে যতবেশি তথ্য জানার চেষ্টা করবেন তত ভালো। উৎপাদকের অনুমতি এবং ছাড়পত্র আছে কি-না, তাদের পণ্যগুলো বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষায় পাস করেছে কি-না এবং করে থাকলে তার সনদও; এই বিষয়গুলো দেখতে হবে। আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে পিপিই বিক্রি করছি যেগুলোর উৎপাদক ফকির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আরমার পলিমার লিমিটেড। তাদের ছাড়পত্র আছে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ল্যাবের পরীক্ষায় পাসের সনদও আছে।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন সংস্থায় উন্নত মানের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেছে আরমার পলিমার লিমিটেড। পিপিই তৈরি এবং রপ্তানিতে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকা এই প্রতিষ্ঠানটি করোনাকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানি করছে এসব পণ্য। বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিশেষ করে পিপিই-গাউন এর মান যাচাই এর বিষয় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান সৌম্য বাংলানিউজকে বলেন, গাউন, শু কভার, সার্জিক্যাল ক্যাপ, মাস্ক ইত্যাদি সামগ্রী তৈরি করে বাজারে ছাড়ার আগে কমবেশি আট ধরনের টেস্ট করাতে হয়। এরমধ্যে পিপিই গাউনের কথা বললে লেভেল-১ এর জন্য এএটিসিসি ৪২ বা ইমপ্যাক্ট পেনিট্রেশন টেস্ট করাতে হবে। লেভেল ২ ও ৩ গাউনের জন্য এর সাথে এএটিসিসি ১২৭ বা হাইড্রোস্ট্যাটিক প্রেশার টেস্ট করাতে হবে। আর লেভেল ৪ এর জন্য এগুলোর সঙ্গে ভাইরাস পেনিট্রেশন টেস্ট করাতে হবে। এগুলোর মধ্যে লেভেল ৩ এবং ৪ গাউন ফ্রন্টলাইনার চিকিৎসকদের জন্য। আমরা সম্প্রতি ১ লাখ পিস লেভেল ২ ও ৩ পিপিই সেট বিদেশে রপ্তানি করেছি। একইসঙ্গে লেভেল ৪সহ আরও ৫৫ লাখ পিপিই গাউন রপ্তানির কার্যাদেশ আছে আমাদের। আমাদের সব পণ্যই এসব পরীক্ষায় বড় মার্জিন রেখে উত্তীর্ণ। এসব উৎপাদনের অনুমতি এবং ছাড়পত্র আছে আমাদের। আইএসও ১৩৪৮৫, এসজিএস এবং ইন্টারটেক এর সনদও আছে আমাদের।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী কেনার আগে গ্রাহকদের সতর্ক করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক এই শিক্ষার্থী বলেন, একজন গ্রাহক যখন এসব সামগ্রী ক্রয় করবেন বিশেষ করে পিপিই গাউন তাকে কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। যেহেতু তারা খুচরা গ্রাহক তাই হয়তো বিক্রেতার কাছ থেকে সব তথ্য পাবেন না তবুও কিছু জিনিস অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। যেমন পণ্যগুলোর উৎপাদকের এসজিএস, ইন্টারটেক এবং আইএসও সনদ আছে কি-না। গাউনের সেলাই দেখতে হবে; নরমাল নাকি ওভারলক স্টিচ। ফেব্রিক কি সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ; এসএমএস অথবা এসএফএস ফেব্রিক হতে হবে। আমরা অনেক সময়েই রি-ইউজেবল পিপিইর কথা শুনি। কিন্তু এসব পণ্য তৈরিতে বিশ্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ডুপন্ট এর গত এপ্রিলের আগ পর্যন্ত পরামর্শ ছিল পিপিই গাউন রি-ইউজেবল না। সম্প্রতি তারা বলছে যে, পলি লেয়ার হিট স্টেপিং যুক্ত পিপিই পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে। কাজেই কেউ যখন আপনাকে বারবার ব্যবহার করা যাবে এমন দাবি করে পিপিই গাউন দিতে চাইবে তখন এই বিষয়গুলো দেখে নিন।
মশিউর রহমান সৌম্য আরও বলেন, আমরা যারা অধিক সংখ্যায় পিপিই গাউন উৎপাদন করি তাদেরও ধরন ভেদে উন্নত মানের গাউন তৈরিতে প্রায় হাজার টাকা উৎপাদন খরচ হয়ে যায় প্রতি পিসে। কিন্তু বাজারে দেখবেন বিশেষ করে ফুটপাতে এবং কিছু অনলাইন শপে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়ও পিপিই বিক্রি করছে। রেইনকোটের কাপড় দিয়ে তৈরি করে ৫০০ টাকায় বিক্রি করে দিচ্ছে। এগুলোর মান কেমন তাহলে অনুমান করে নিন। পিপিই সম্পর্কে স্বল্প তথ্য জ্ঞান এবং দাম কম বলে অনেকেই হয়তো এগুলো কিনছেনও। কিন্তু কিছু টাকার বিনিময়ে নিজের ও পরিবারের সবার জীবন ঝুঁকিতে ফেলা কি ঠিক হবে?
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৩ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২০
এসএইচএস/এইচএডি