ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

শীতকালীন ভ্রমণে ঢাকা-কলকাতায় দুই বাংলার মানুষ

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২৩
শীতকালীন ভ্রমণে ঢাকা-কলকাতায় দুই বাংলার মানুষ

কলকাতা: বিশ্বের উন্নতশীল দেশগুলো যখন মৌসুমভিত্তিক ভ্রমণের জন্য পর্যটক টানার নতুন পন্থা নিচ্ছে, তখন এ বিষয়ে অনেকটাই ব্যাকফুটে বাংলাদেশ ও ভারত। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ।

কিন্তু তাই বলে কী ভ্রমণপিপাসু বাঙালিদের দাবিয়ে রাখা যায়? শীত পড়লেই তারা নিজের মতো করে নেন ট্যুর প্ল্যান। এটাই বাঙালির বৈশিষ্ট্য। কারণ বাঙালি আর ভ্রমণ একে অপরের পরিপূরক। আর তাই শীত পড়লেই বাঙালিরা যেন কিছুটা ঘর ছাড়া। কখনও বেরিয়ে পড়েন একা, আবার কখনও স্বজন-বন্ধু-পরিবারের সঙ্গে। এ বিষয়ে কলকাতাবাসীরাও ব্যতিক্রম নয়। তবে অনেকের মতো মমতার সরকার রাজ্যের পর্যটন অঞ্চলগুলো সেভাবে প্রমোট করছে না।

কলকাতার ভ্রমণ প্রিয় দীপক দেবনাথ বলেন, এবার ঠিক করেছি বাংলাদেশ যাব। ব্যক্তিগতভাবে আমি অনেকবার গেলেও পরিবার নিয়ে যাওয়া হয়নি। পরিবারের সবার পাসপোর্ট হয়ে গেছে। ফেব্রুয়ারির দিকে যাব। যদিও বাংলাদেশকে বিদেশ বলে মনে হয় না। মনে হয় আমি যেন আমার রাজ্যেই আছি। এছাড়া বাংলাদেশের বেশ কিছু খাবার আছে যেমন কাচ্চি বিরিয়ানি, বিভিন্ন ধরনের ভর্তা এসব তো সচারচর কলকাতা পাওয়া যায় না। বাংলাদেশ যাব শুনে আমার স্ত্রী ইউটিউবে এসব দেখে আরও আগ্রহ বেড়েছে। এছাড়া পদ্মা সেতু যাওয়া হয়নি, পাশাপাশি ঢাকার মেট্রোরেলটা চড়ে দেখব এবং কক্সবাজার যাব। কারণ আমার ছেলে সমুদ্র ভালোবাসে। সেই অর্থে কক্সবাজারকে মূল ইস্যু করে বাদবাকি বাংলাদেশ ঘোরা হবে।

তবে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো পর্যটক টানতে মৌসুমেভিত্তিক হরেক রকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকলেও অনেকটাই পিছিয়ে পশ্চিমবাংলা। এ বিষয়ে তার অভিমত একদম ঠিক, যতই আমরা বলি শীতকাল, শীতটা দার্জিলিংয়ে বেশি পড়ে বা কাশ্মীরে বেশি পড়ে বা সিমলা কুলু মানালিতে বেশি পড়ে, কিন্তু সেই শীতেই আমরা সেসব জায়গায় উপভোগ করতে যাই। বিশেষ করে পশ্চিমাদেশগুলো থেকে এ সময় ভারতে বেশি আসেন।

সেই অর্থে ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোর থেকে সস্তায় দার্জিলিং ও সিকিমে ঠাণ্ডার সব বৈচিত্র্যই পাওয়া যায়। এখন তো সিকিমে শূন্য ডিগ্রি। বরফ পড়ছে। ফলে কেন রাজ্য সরকার শীতমুখী পর্যটন টানতে প্রমোট করছে না, জানি না। অথবা প্রমোট হয়ত করছে আমাদের কাছে খবর নেই। অথচ ইউরোপ আমেরিকা জার্মান এরা মৌসুমভিত্তিক পর্যটক টানতে কত কাজ করছে। এতে বিদেশি অর্থও আমদানি হয়। গরমের ছুটিতে কত রকম অফার দিয়ে থাকে তারা। এটাতো আমরাও পারি। তাই নয় কী? একটা ভারতে যা রসদ আছে, মরুভূমি বাদে সম্পূর্ণটা পশ্চিমবঙ্গে আছে।

অপরদিকে বলাই বাহুল্য বাংলাদেশিদের কাছে বাংলা ভাষায় বিদেশ ভ্রমণ বলতে কলকাতা। তাদের মতে সস্তায় বিদেশ ভ্রমণে কলকাতার কোনো বিকল্প হতে পারে না।

ঢাকাবাসী জাফর বলেন, এজন্যই বাংলাদেশের লোকজন বেশি করে কলকাতায় আসে। প্রথমত হলো- অল্প খরচ, দ্বিতীয়ত ভাষা আর তৃতীয় খুব তাড়াতাড়ি যাতায়াত করা যায়। সে কারণে শীতকে কেন্দ্র করে এখনও প্রচুর বাংলাদেশি আছেন কলকাতায়। গাইবান্ধাবাসী সীমা দাস পরিবারসহ প্রথমবার এসেছেন কলকাতায়।  

তিনি বলেন, আপনাদের সব বই ওখানে পাওয়া যায়। ফলে কলকাতা আমাদেরও পরিচিত শহর। বই ও সামাজিকমাধ্যমে গোটা কলকাতা চিনে ফেলেছি। আর এ সময়টা কলকাতা এত সুন্দর সেজে ওঠে। চারিদিকে এত আলো। খুবই ভালো লাগছে। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ।

তথ্য মতে, এ মুহূর্তে ভ্রমণের উদ্দেশ্য কলকাতায় অবস্থান করছেন ৩৫ হাজার বাংলাদেশি। শুধুমাত্র বেনোপোল হয়ে প্রতিদিন ভারতে আসছেন ৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি নাগরিক।

মারকিউ স্ট্রিটের শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বলেন, এ মুহূর্তে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শুধুমাত্র বেনাপোল-পেট্রাপোল পার হয়ে কলকাতায় আসছেন। বেশিরভাগটাই ভ্রমণের উদ্দেশে। এখনো যাত্রী চাপ ব্যাপক।  

তিনি বলেন, ডিসেম্বরের ২০ তারিখ থেকে জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহ ভ্রমণের উদ্দেশে হাজার হাজার বাংলাদেশি কলকাতায় এসেছেন। বলতে গেলে এ  অঞ্চলে বাংলাদেশিদের এতটাই ভিড় ছিল অনেকেই ফুটপাতে রাত কাটিয়েছেন। যদিও এখনও খুব একটা স্বাভাবিক বলা যাবে না। তবে সবকিছু এখন আয়ত্তের মধ্যে।

ফলে দুদেশ মৌসমভিত্তিক পর্যটনের কথা না ভাবলেও দুই বাংলার বাঙালি কিন্তু সেই পথে বহুকাল আগেই পা রেখেছেন। আর সে কারণেই শীতকে কেন্দ্র করে যেমন কলকাতাবাসীর ভিড় বাড়ছে কক্সবাজারে। একইভাবে কলকাতায় আসছেন বাংলাদেশিরা।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২২
ভিএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।