কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত কর্মসূচি ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’-এ বেরিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ধাক্কা খাচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও মন্ত্রীরা। বাঁকুড়া, বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদসহ জেলায়-জেলায় তৃণমূলের নেতাদের ঢুকতে দেখলেই বিক্ষোভের সুর চড়াচ্ছেন সাধারণরা।
শনিবারও (১৪ জানুয়ারি) তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবারের ঘটনাস্থল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দত্তপুকুর।
এ দিন দায়িত্বে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। তার এলাকায় পথ চলার অযোগ্য সড়ক নিয়ে অভিযোগ জানাতেই এক অভিযোগকারীকে সপাটে চড় কষালেন এক তৃণমূল নেতা। ঘটনার পরই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন মন্ত্রী নিজে। তাতে অবশ্য চিড়ে ভেজেনি। শাসকদলের বিরুদ্ধে এলাকায় ক্ষোভের মেঘ আরও গাঢ় হয়েছে।
শনিবার দিদির দূত হিসেবে মধ্যমগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ এলাকার অভিযোগ শুনছিলেন। মন্ত্রীকে সামনে পেয়ে স্থানীয় নানান সমস্যা নিয়ে সোচ্চার হন বাসিন্দারা। মন্ত্রীর সামনেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাগর বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি। ক্ষোভ দেখান স্থানীয়রাও। তাদের অভিযোগ, চলার অযোগ্য সড়ক কেন মেরামত হচ্ছে না। এরইমধ্যে এক তৃণমূল নেতা শিবেন রায় এগিয়ে এসে সপাটে চড় মারতে থাকেন অভিযোগকারীকে। যা নিয়ে হুলস্থূল বেঁধে যায়।
দলের নেতার এমন আচরণে অস্বস্তিতে পড়ে যান স্বয়ং খাদ্যমন্ত্রী। আক্রান্ত ব্যক্তির পিঠ চাপড়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে দেখা যায় তাকে। তবে তাতেও লাভের লাভ কিছু হয়নি। বরং এলাকার তৃণমূল নেতার এই আচরণে ক্ষোভে ফুঁসছেন বাসিন্দাদের অনেকে। যদিও মন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, সাগর বিশ্বাস বিজেপি করেন। স্থানীয়দের তাতাচ্ছিল। কিন্তু, তাই বলে মন্ত্রীর সামনেই নেতাদের মাতব্বরি? মন্ত্রী বলেন, আমি দূরে ছিলাম, জানি না কে মেরেছে, খোঁজ নিচ্ছি।
পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে সম্প্রতি জনসংযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ২ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে কলকাতার নজরুল মঞ্চ থেকে ওই কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে ছিলেন দলনেত্রী মমতা। সেখানেই ঘোষণা করা হয়, ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচির অন্তর্গত তৃণমূলের জেলার নেতা, সাংসদ, বিধায়কসহ সাড়ে তিন লাখ স্বেচ্ছাসেবী রাজ্যের প্রতিটি মানুষের বাড়িতে যাবেন। সেখানে সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধার বিষয়ে কথা বলবেন জনপ্রতিনিধিরা। কর্মসূচি চলবে দুই মাস।
কর্মসূচি শুরু হয়েছে বুধবার (১১ জানুয়ারি) থেকে। কিন্তু শুরুর দিন থেকেই কর্মসূচি নিয়ে হিতে বিপরীতের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ, রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, সাংসদ অভিনেত্রী শতাব্দী রায়, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্জুন সিং এবং দলের যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য। প্রত্যেকেই প্রতিদিন সাধারণ মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়ছেন।
দলের অনেকেই মনে করছেন, এটা খারাপ সংকেত। কেউ কেউ মনে করছেন, জনসংযোগ বাড়াতে গিয়ে বিপাকে পড়ছে দল। ক্ষোভের আগুনে দল এবং কর্মসূচি—দুটিই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তে পারে। তবে দলের একাংশ মনে করছেন, এটা ভালো লক্ষণ। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে গ্রামের মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দলকে ভুল শুধরে নিতে সাহায্য করবে। কোথায় কোথায় উন্নয়নের খামতি রয়েছে, সেটা স্পষ্ট হয়ে গেলে সমাধানের রাস্তা পাওয়া যাবে। পাশাপাশি যে সব নেতা-নেত্রীরা জনগণের দূরত্ব তৈরি করেছিল তারাও শীর্ষ নেতৃত্বের নজরে আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২২
ভিএস/এমজেএফ