কলকাতা: প্রায় তিন মাস ধরে হিংসার আগুনে জ্বলছে ভারতের মণিপুর রাজ্য। দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও প্রধানমন্ত্রী এই ইস্যুতে কিছুই বলেননি।
তবে গৃহীত হওয়ার পরেও কেন তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না, এ নিয়ে ফের সুর চড়ান বিরোধী সংসদ সদস্যরা। অবশেষে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে মুখ খুলতে চলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আগামী ৮ আগস্ট থেকে সংসদ ভবনে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। দুই দিন ধরে আলোচনার পর ১০ আগস্ট জবাবি ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
অনাস্থা প্রস্তাব কী, কীভাবে আনা হয়
ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, সরকার চলাকালীন যদি কোনো সংসদ সদস্য মনে করেন চলমান সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে, তাহলে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারেন। ওই অনাস্থা প্রস্তাবে যদি ৫০ জনের বেশি সংসদ সদস্যের সায় থাকে তাহলে লোকসভা স্পিকার তা গ্রহণ করেন এবং সেটা নিয়ে আলোচনা ও ভোটাভুটি হয়।
সরকার পক্ষ যদি সেই ভোটাভুটিতে হেরে যায়, তাহলে সেই মুহূর্তেই প্রধানমন্ত্রীসহ গোটা সরকারকে ইস্তফা দিতে হয়। সরকার পক্ষ যদি ভোটাভুটিতে জিতে যায় অর্থাৎ অনাস্থা প্রস্তাব যদি পাস না হয়, তাহলে আগের মতোই সরকার চালাতে পারেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। আগামী ছয় মাসের মধ্যে আর কোনো অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারবে না বিরোধীরা।
তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সংখ্যার বিচারে এই মুহূর্তে অনাস্থা প্রস্তাব এলেও চিন্তার কোনো কারণে নেই মোদি সরকারের। কারণ, ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে এই মুহূর্তে মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটের (এনডিএ) ঝুলিতে রয়েছে ৩৩১ আসন। শুধু বিজেপির অধীনে রয়েছে ৩০৩ আসন। সেখানে বিজেপি বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের দখলে রয়েছে মাত্র ১৪৪টি আসন। অন্যদিকে ‘এনডিএ’ বা ‘ইন্ডিয়া’ দুই জোটের কারো সঙ্গে নেই এমন সংসদ সদস্যের সংখ্যা ৭০ এর আশপাশে। সুতরাং কোনোভাবেই এই অনাস্থা প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে মোদি সরকারের ভিত হেলাতে পারবে না বিরোধীরা।
মোদি সরকারের বিরুদ্ধে হার নিশ্চিত জেনেও কেন অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন বিরোধীরা? ২৬ দলের বিজেপি বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট মনে করছে, মণিপুর নিয়ে কেন্দ্রের নীরবতা ভঙ্গ করাই তাদের লক্ষ্য। আর সেই কারণেই এই প্রস্তাব। এতে প্রধানমন্ত্রী বাধ্য হলেন সংসদ ভবনে মণিপুর ইস্যুতে মুখ খুলতে। এ ছাড়া কোন কোন দল তাদের সঙ্গে আছে, সেটাও স্পষ্ট হয়ে যাবে।
২০০৩ সালে তৎকালীন অটলবিহারি বাজপেয়ী সরকারের বিরুদ্ধে একইভাবে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল কংগ্রেস। সেবারও বাজপেয়ীর সরকার পড়েনি, কিন্তু সেই অনাস্থা প্রস্তাবকে সামনে রেখে দেশজুড়ে একটি বৃহত্তর জোট গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। বলা যেতে এবারেও পরিস্থিতি খানিকটা একইরকম।
তবে ইতিহাস বলছে, জহরলাল নেহেরু থেকে মোদি, সবার বিরুদ্ধেই এসেছে অনাস্থা প্রস্তাব। ভারতে মোট ২৭ বার অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৫ বার অনাস্থা প্রস্তাব এসেছিল ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে। প্রতিবারই তিনি জয়ী হয়েছেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, নরসিমা রাও-এর সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এসেছে ৩ বার করে। তারাও জয়ী হয়েছেন।
তবে অনাস্থা প্রস্তাবে পরাজিত হয়ে সরকার ছাড়তে হয়েছে এমন ইতিহাসও ভারতে আছে। মোরাজি দেশাই, চরণ সিং, ভিপি সিংদের প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয় অনাস্থা ভোটে হেরেই।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ