কলকাতা: লোকসভা নির্বাচনে লড়তে দলীয় টিকিট চেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১৩ মার্চ) শিলিগুড়ির সাংবাদিক সম্মেলনে প্রকাশ্যেই মমতা বলেছেন, আমি পরিবারতন্ত্র করি না। যে যেখানে ইচ্ছে ভোটে লড়তে পারে। আমার কিছু যায় আসে না। ওর সঙ্গে আমাদের পরিবারের আর কোনো যোগ নেই।
এ দিন সকালেই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এবারে এমপির টিকিট চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে দেওয়া হয়নি। তাই হাওড়া আসন থেকে নির্দলীয় প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছিলেন বাবুন। এমনকি তার সঙ্গে বিজেপির ভালোই যোগাযোগ আছে বলে সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করেছিলেন।
এরপরই ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা বলেছেন, ‘আজ থেকে আমি ওর সাথে সব সম্পর্ক ত্যাগ করলাম। শুধু আমি নই, আমাদের পরিবার, যাদের সাথে ওর রক্তের সম্পর্ক, এমনকি তৃণমূল দলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক আজ থেকে ছেদ হয়ে গেল! আজ থেকে আমার ভাই হিসেবে ওকে আপনারা কেউ পরিচয় দেবেন না। ’
তৃণমূল সুপ্রিমো আরও বলেন, ‘বড় হলে অনেকের লোভ একটু বেশি বেড়ে যায়। তার অনেক কাজকর্ম আমার অনেকদিন ধরেই পছন্দ নয়। আমি অন্যায় কখনো সহ্য করি না। কিন্তু পরিবারের সব কথা তো আর বাইরে বলতে পারি না। অনেক সময় বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না। সুতরাং এই নিয়ে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। আমাদের দলীয় প্রার্থী প্রসূন ব্যানার্জি। সে (বাবুন) যেখানে ইচ্ছা যেতে পারে!’
পরিবারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা বলেন, ‘কিছু লোক আছে নির্বাচন এলেই কাউন্সিলর হিসেবে দাঁড়াতে হবে, এমএলএ হিসেবে দাঁড়াতে হবে, আবার এমপিতেও দাঁড়াতে হবে! আমার পরিবারের সবাই যদি বলে আমি এমপি ইলেকশনের টিকিট চাই। তাহলে তো আমি পরিবারতন্ত্র করব। আমি পরিবারতন্ত্র করি না। আমি মানুষতন্ত্র করি। ফলে আমার সাথে যে ওর (বাবুন) সম্পর্ক ছিল, সেটা আপনারা ভুলে যান। আমি এত লোভী লোকেদের পছন্দ করি না। ’
উল্লেখ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরেক এক ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী বর্তমানে কাউন্সিলর। সেবারও মমতার অনীহা থাকা সত্ত্বেও কলকাতা পৌরসভা ভোটে ভাতৃবধূকে টিকিট দিতে হয়েছিল।
বুধবার পরিবারের সদস্যদের নাম উল্লেখ না করে মমতা বলেন, ‘শুধু আজকে না, প্রত্যেকটা ইলেকশনে আমার ওপর অনেক অশান্তি চলে। ওরা ছোটবেলাটা ভুলে গেছে। আমার বলা উচিত নয়, তবু বলছি, বাবা যখন মারা গেলেন ওর (বাবুন) বয়স ছিল আড়াই বছর। সেই সময় আমি দুধের ডিপোতে কাজ করে ৪৫ রুপি পেতাম। তাই দিয়ে ভাইদের মানুষ করেছি। কিন্তু তখন থেকে আমি রাজনীতি করতাম বলে ওকে (বাবুন) মানুষ করতে পারিনি। আমাদের পরিবার অনেক বড় পরিবার। আপনাদের কাছে অনুরোধ ওর পাশে যেন আমাদের পরিবারের কোনো নাম না থাকে। ’
বিজেপির উদ্দেশে মমতা বলেছেন, ‘পরিবারটা বাদ দিয়ে আপনারা খেলুন। পরিবার জড়াবেন না। ’
এ দিনও ভারতের নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, সিএএ আর এনআরসি একে অপরের পরিপূরক। এটা বিজেপি ভোটের জন্য করেছে। এটা একটা ভুয়া বিষয়। দুই-একটা আসন বেশি পাওয়ার জন্য এসব করছে। তাই কোনো ফর্ম ফিলাপ করবে না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের কিছু পরেই দিল্লি থেকে তার ছোট ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘দিদির রাগ আমার কাছে আশীর্বাদ। আমি ফিরে দিদির সঙ্গে দেখা করব। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ