ঢাকা, রবিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৮ জুলাই ২০২৪, ২১ মহররম ১৪৪৬

ভারত

মাইক বন্ধ করে ‘অপমান’, নীতি আয়োগ বৈঠক বয়কট মমতার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৪
মাইক বন্ধ করে ‘অপমান’, নীতি আয়োগ বৈঠক বয়কট মমতার

কলকাতা: ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আবার বিরোধ বেঁধে গেল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের।

শনিবার (২৭ জুলাই) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে রাষ্ট্রপতি ভবনে ‘নীতি আয়োগ বৈঠক’ চলাকালীন বৈঠক ছেড়ে বের হয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী।

বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের মমতা বলেন, আমাকে পাঁচ মিনিট বলতে দেওয়া হয়নি। তার আগেই মাইক বন্ধ করে আমাকে ‘অপমান’ করা হয়েছে।

যা নিয়ে গোটা দেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মূলত, বিরোধী জোটের সাতজন মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বাজেট বঞ্চনার অভিযোগ তুলে বৈঠক বয়কট করলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন নীতি আয়োগের বৈঠকে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বৈঠক ছেড়ে বের হয়ে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, অন্যদের বিশ মিনিট বলার সুযোগ দেওয়া হলেও আমাকে পাঁচ মিনিটও বলতে দেওয়া হয়নি। তার আগেই মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার প্রতিবাদে আমি বৈঠক ছেড়ে চলে এসেছি।

মমতা দাবি করেন, ওই বৈঠকে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু ২০ মিনিট বলার সুযোগ পেয়েছেন। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত, ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুদেও সাইও নিজেদের বক্তব্য রাখার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু তার বেলায় মাইক বন্ধের ঘটনাকে সরাসরি ‘অপমান’ বলে চিহ্নিত করেছেন মমতা।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদের মধ্যে একমাত্র আমি বৈঠকে হাজির ছিলাম। কিন্তু আমাকে বলতে দেওয়া হলো না। আমি আরও বেশি কিছু বলতে চেয়েছিলাম। তার আগে মাইক বন্ধ করে আমাকে অপমান করা হলো।

মমতা ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়েছেন, এরপর থেকে নীতি আয়োগের আর কোনো বৈঠকে তিনি আর থাকবেন না। যদিও বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মাইক বন্ধ করা বিষয়টিকে ‘মিসলিড’ (বিভ্রান্তি) বলে জানিয়েছে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি)। সংস্থাটি এক্সে জানিয়েছে, মমতা বৈঠকে নিজের বক্তব্য রাখার সময় পেয়েছিলেন। নির্দিষ্ট সময় শেষ বলে, তাকে ঘড়ি দেখানো হয়েছিল। ফলে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে দেওয়া হয়নি বিষয়টা ‘ভুল’। পাশাপাশি পিআইবি জানিয়েছে, ঘড়ি দেখানো হলেও, সময় শেষের আগাম সতর্ক করতে তাকে কোনো বেল (ঘণ্টা) বাজানো হয়নি।

মমতার এই অভিযোগে জবাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা আমরা সবাই শুনছিলাম। প্রত্যেক মুখ্যমন্ত্রীকে বক্তব্য রাখার নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, সেই সময় প্রতিটি টেবিলের ওপর রাখা স্ক্রিনে ডিসপ্লে করা হয়েছিল। ফলে তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ওনার মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এমন অসত্য দাবি করেছেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক। ওনার সত্যিটা বলা উচিত।

তবে বৈঠক চলাকালীন ঘটনা কী ঘটেছে, তা স্পষ্ট নয়। কারণ দুই পক্ষ তাদের নিজের বক্তব্য রাখলেও, বৈঠকের ফুটেজ প্রকাশ্যে আসেনি। এর আগে বাংলাদেশের কোট সংস্কারের দাবিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা এক মন্তব্য ঘিরে চলছে বিতর্ক। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার মমতাও পাল্টা কড়া জবাব দেন।

শুক্রবার বাংলাদেশ নিয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো আমি খুব ভালো জানি। আমি সাতবারের সংসদ সদস্য ও দুইবারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলাম। বিদেশনীতি অন্য কারও চেয়ে ভালো জানি। তাদের আমাকে শেখানো উচিত না। বরং পরিবর্তিত ব্যবস্থা থেকে তাদেরই শেখা উচিত। আমি যেটা বলেছিলাম, সেটা মানবিকতার দিকটি বিবেচনা করে।

গত ২১ জুলাই এক অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে মমতা বলেছিলেন, আমি বাংলাদেশ নিয়ে কোনো কথা বলতে পারি না। তবে সেই দেশ থেকে এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে কেউ আশ্রয় (শরণার্থী হয়ে) নিতে এলে আমি তাদের ফেরাব না। এর চেয়ে এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না। কারণ, বাংলাদেশ একটি স্বতন্ত্র দেশ। এ নিয়ে কিছু বলার থাকলে ভারত সরকার বলবে বলেও উল্লেখ করেছিলে তিনি। বাংলাদেশ নিয়ে মমতার ওই মন্তব্যের পরেই বিভ্রান্তি ছড়ায়।

মমতার ওই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন বিজেপি নেতারা এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও। এমনকি মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বিষয়টি উত্থাপন করে বলেছিলেন, আমরা ভারত সরকারকে একটা নোট দিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, ২৭ জুলাই ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।