কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে এক ছাত্রী হত্যার কারণে শিক্ষার্থী আন্দোলনে উত্তাল গোটা পশ্চিমবঙ্গ। আন্দোলন পরিস্থিতিকে ঘিরে এবার ভাঙলো বাংলা ভাষা শহীদদের ভাস্কর্য।
পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করেছে, ভাস্কর্য ভাঙার পেছনে বাম এবং বিজেপি মদত আছে। আন্দোলনকে উসকে দিতে ভাষা শহীদের মূর্তি ভাঙা হয়েছে। তারা পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে।
অপরদিকে, আন্দোলনকারীদের দাবি, বাংলা ভাষায় আমরাও কথা বলি। ভাস্কর্য ভেঙে আমরা কী প্রমাণ করব? আমাদের আন্দোলন থেকে মুখ ঘোরাতে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ভাস্কর্য ভেঙে দিয়েছে।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরই শেখ মুজিবসহ বাংলাদেশে বহু ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছে। তারই রেষ রাজ্যে পড়েছে বলে দাবি করছে তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ।
তবে শিক্ষার্থী আন্দোলনকারীদের দাবি, যেভাবে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আন্দোলন স্তব্ধ করার জন্য আরজিকর হাসপাতাল ভাঙচুর করেছে। সেভাবেই তাদের হাত পড়েছে ভাস্কর্য এ।
উত্তর কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের পাশেই বেলেঘাটা সিআইটি রোডের উপর ভাস্কর্যটি ছিল। সেই ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলর পবিত্র বিশ্বাস, ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি স্থাপনা করেছিল ভাস্কর্যটি। এভাবে ভেঙে ফেলায় তার অভিমত, বাম এবং বিজেপি বাংলাদেশকে অনুসরণ করছে।
তিনি দাবি করেছেন, হাসপাতাল ভাঙচুর করে বের হওয়ার সময় বাম এবং বিজেপি সমর্থকরা ভাস্কর্যটি ভেঙে দিয়ে গেছে। তার দাবি সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমি কয়েকজনকে শনাক্ত করেছি এবং কলকাতা পুলিশকে জানিয়েছে। এটা বাঙালির লজ্জা।
এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাস্তায় নামে তৃণমূল। এলাকার সাবেক কাউন্সিলর পবিত্র বিশ্বাস বলেছেন, রাত দখলকারী, ষড়যন্ত্রকারী আন্দোলনকারীদের কঠিনতম শাস্তি চাই। সবাই গর্জে উঠুন।
এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতার মুখেও উঠেছিল বাংলাদেশ প্রসঙ্গ।
বুধবার (১৪ আগস্ট) ভারতের প্রাক স্বাধীনতা উপলক্ষের অনুষ্ঠান থেকে সিপিএম, বিজেপি এবং কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে মমতা বলেছেন, বাংলাদেশে একটা ঘটনা ঘটে গেছে। তা টেনে ওরা ভাবছে এখানেও ক্ষমতা দখল করবে।
প্রসঙ্গত, রাত দখল কর্মসূচি নিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। সর্বত্র শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হলেও, দুষ্কৃতকারীরা ধ্বংসলীলা চালিয়েছে কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে। আন্দোলনে মিশে থাকা একদল দুষ্কৃতকারী আচমকা ব্যারিকেড ভেঙে হামলা চালায় হাসপাতালে। জরুরি বিভাগসহ ১৮টি বিভাগে ভাঙচুর করা হয়। তিনতলা অবধি উঠে যান হামলাকারীরা। প্রাণ বাঁচাতে পাঁচতলায় চলে যান রোগী ও চিকিৎসকরা। স্যালাইন বোতল নিয়ে ছুটতে দেখা যায় রোগীদের।
আচমকা এই তাণ্ডবে কার্যত হতবাক হয়ে যায় পুলিশ এবং আন্দোলকারীরা। দুষ্কৃতকারীরা ইটবৃষ্টি করতে থাকে পুলিশ, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ জনতার দিকে। মাথা ফাটে পুলিশের। পর মুহূর্তে চলে পুলিশের টিয়ার গ্যাস এবং লাঠিচার্জ। ভেঙে যাওয়া বিক্ষোভে, পরক্ষণেই আবার জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। দ্রুত এলাকা ছাড়ে দুষ্কৃতকারীরা। ভোর তিনটা অবধি উত্তাল হয়ে ওঠে উত্তর কলকাতার হাসপাতাল চত্বর।
বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, ১৫ আগস্ট, ২০২৪
ভিএস/এসএএইচ