ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় কসাই জিহাদ হাওলাদার এবং সিয়াম হোসেনকে আসামি করে পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত আদলাতে চার্জশিট দিয়েছে সে দেশের পুলিশ।
শনিবার (১৮ আগস্ট) উত্তর চব্বিশ পরগনা বারাসাত আদালতে প্রায় ১২০০ পৃষ্ঠার ওই চার্জশিট জমা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি পুলিশ।
সিআইডি সূত্রের খবর, চার্জশিটে ‘কসাই’ জিহাদ হাওলাদার এবং সিয়ামের নাম আছে। তবে হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে চার্জশিটে কিছু বলা হয়নি। তদন্তকারীদের একাংশের ব্যাখ্যা, তদন্ত শেষ না হলে খুনের কারণ বলা যাবে না। তাছাড়া, এই মামলায় মূল অভিযুক্তকে এখনও জেরা করা যায়নি।
কলকাতার গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত মে মাসে ঢাকা মহানগর পুলিশের তখনকার কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান বলেছিলেন, আনার হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করার পাশাপাশি চারজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও খুনের মূল রহস্য এখনো জানতে পারেনি পুলিশ।
তবে হত্যাকাণ্ডের ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলে আসল কারণ জানা যাবে বলে পুলিশের ধারণা ছিল।
আনোয়ারুল আজীম কলকাতায় সর্বশেষ যে ফ্ল্যাটে ছিলেন অর্থাৎ সঞ্জিভা গার্ডেনসে, বাংলাদেশের সাবেক গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদের অনুরোধে ওই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাঙ্কে তল্লাশি চালিয়ে সেপটিক ট্যাংক এবং বর্জ্য যাওয়ার পাইপ-লাইন থেকে মাংসের টুকরো, মাথার চুল উদ্ধার করেছিল ভারতের সিআইডি। সেগুলো আনোয়ারুল আজীমের কি না সে সম্পর্কে পরিষ্কার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পুলিশ তদন্ত করে জেনেছে, এমপি আনার হত্যার ‘হোতা’ তার বাল্যবন্ধু ও ঝিনাইদহের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিন মিয়া। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন খুলনার চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা ওরফে শিমুল। আনার কলকাতায় যাওয়ার পরদিন বৈঠক করার জন্য নিউ টাউনে আখতারুজ্জামান শাহীনের ভাড়া বাসায় যান। সেখানেই আসামিরা তাকে হত্যা করে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, কসাই জিহাদ হাওলাদারও খুলনার বাসিন্দা। আনারকে ‘খুনে’র প্রায় দুই মাস আগে অভিযুক্তরা জিহাদকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন। এর আগে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেন জিহাদ ।
জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে জিহাদও একই তথ্য দিয়ে বলেছেন, আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই তিনি ‘সব’ করেছেন। আরও চারজন বাংলাদেশি এই কাজে তাকে সাহায্য করেছেন।
এছাড়া শাহীনের সহযোগী সিয়াম হোসেনও হত্যাকাণ্ডের পর কাঠমান্ডু গিয়ে আত্মগোপন করেন। পরে কাঠমান্ডুর পুলিশ সিয়ামকে আটক করে কলকাতা পুলিশের হাতে দেয়।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন আনোয়ারুল আজীম আনার। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।
এরপর স্থানীয় থানায় গোপাল বিশ্বাস জিডি করলে তদন্ত শুরু হয়। এরই মধ্যে ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেনসে খুন হয়েছেন এমপি আনার।
এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হলেন- আমানুল্লা সাঈদ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুঁইয়া (৫৬), তানভীর ভুঁইয়া (৩০) ও সেলেস্টি রহমান (২২)।
পরে মে মাসে যশোর থেকে সাইফুল আলম মোল্লা মেম্বার নামে আরেকজনকে আটক করে ডিবি। তিনি পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা খুলনার শিমুল ভুঁইয়ার সহযোগী বলে জানা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২৪
এসএএইচ