প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে হর্টিকালচার শো করে থাকে রাজ্যটি। এটি ‘লালবাগ ফ্লাওয়ার শো’ নামে বেশি পরিচিত।
এবার গত ০৪ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে শো, শেষ হবে ১৫ আগস্ট। যথারীতি হাজারো মানুষের ঢল। ৫০ রুপি টিকিটে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে যেকোনো সময় দেখা যাবে।
কী হয় হর্টিকালচার তথা ফ্লাওয়ার শো-তে? এক লাইনে বললে, শিরোনামে যেমনটি লেখা, তেমনই। বরং কিছুটা কম। অর্থাৎ দুই হাজারেরও বেশি টবে রোপণ করা গাছ এবং দুইশোরও বেশি প্রজাতির ফুলের প্রদর্শনী। শুধু এই? না আরও অনেক কিছু রয়েছে, যদিও এই আয়োজন কিন্তু কম নয়।
২৪০ একর লালবাগ বোটানিকাল গার্ডেনের মেইন গেট থেকে টিকিট কেটে ঢুকলেই চোখজুড়ে কেবল গাছ আর গাছ। এমনি সময় টিকিট ২০ রুপি হলেও স্বাধীনতা ও প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনে আয়োজিত ফ্লাওয়ার শোয়ের সময় ৫০ রুপি।
ডানে-বায়ে গাছ দেখতে দেখতে পা এগিয়ে চলে। স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে বিশেষ ভাবে সেজে উঠেছে বাগান। চারদিকে পতাকার কমলা-সাদা-সবুজ রঙের ছড়াছড়ি। ফ্ল্যাগ-ফেস্টুন, বিশেষ ভাস্কর্যেরও কমতি নেই। ভেতরেই রাস্তার দু’ধারে বসেছে ছোট্ট মেলা। সেখানে ছেলে থেকে বুড়োদের ভিড়।
দূর থেকে ব্যান্ডের আওয়াজ কানে আসে। গ্লাস হাউজ যাওয়ার পথেই পড়বে চারদিক খোলা বাজনাঘর। বাজনদাররা অবিরাম কর্ণাটকার রাজ্য সঙ্গীত বাজিয়ে চলেছেন। কেউ দাঁড়িয়ে শুনছে, কেউ এগিয়ে যাচ্ছে গ্লাস হাউজের দিকে। সেখানেই মূল আকর্ষণ, ফ্লাওয়ার শো!
গ্লাস হাউজ প্রসঙ্গে দু-এক কথা এই ফাঁকে বলে নেওয়া ভালো। লালবাগের অসংখ্য শৈল্পিক স্থাপনার মধ্যে এটি অন্যতম। ক্রিস্টাল প্যালেস অব লন্ডনের আদলে ১৮৯০ সালে এটি স্থাপিত। ১৯৩৬ সালে দুর্ঘটনাবশত আগুন লেগে পুড়ে যায় ক্রিস্টাল প্যালেস। ঐতিহাসিক ওই স্থাপনার স্মৃতি বহন করে চলেছে লালবাগের এই গ্লাস হাউজ। অনেকে একে ‘ক্রিস্টাল প্যালেস অব ইন্ডিয়া’ও বলে থাকেন।
সোমবার (১৪ আগস্ট) কর্মদিবস হলে কী হবে, সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষের ভিড়। গ্লাস হাউজে তাই লম্বা লাইন পেরিয়ে ঢুকতে হলো। গোটা গ্লাস হাউজের এক ধার দিয়ে ফুল আর গাছের সমারোহ। দেখতে দেখতে এগিয়ে যেতে হলো। সেলফি শিকারীদের ঠেলাঠেলিতে এক জায়গায় বেশিক্ষণ দাঁড়ালো গেলো না!
সবচেয়ে ভিড় গ্লাস হাউজের কেন্দ্রে। এখানে দুইশোরও বেশি প্রজাতির ফুল দিয়ে বানানো হয়েছে রাষ্ট্রকবি কুভেম্পুর বাড়ি। বলে রাখা ভালো, স্বাধীনতা দিবসের পাশাপাশি এবারের হর্টিকালচার শো উৎসর্গ করা হয়েছে জ্ঞানপীঠ পাওয়া এ কান্নাড়া কবি, উপনাস্যিক, নাটক রচয়িতা, সমালোচক ও চিন্তককে। পুরো নাম, কুপ্পালি ভেঙ্কাটাপ্পা পুত্তাপ্পা। লিখতেন কুভেম্পু নামে। কর্ণাটকার রাজ্য সঙ্গীতও তার লেখা। আরও পেয়েছেন- পদ্ম বিভূষণ, পদ্ম ভূষণ, কর্ণাটকা রত্ন পুরস্কার।
ফুল ও গাছের পাশাপাশি পুরো গ্লাস হাউজ কুভেম্পুর প্রতিকৃতি, ভাস্কর্য,বইপত্র, কবিতার খাতা প্রভৃতি দিয়ে সাজানো। হাউজে ঢোকার ডানদিকে বিএসএফ’র আয়োজনে যন্ত্রসঙ্গীত। সারক্ষণ বেজে চলেছে দেশাত্মবোধক নানা সুর।
আয়োজন তো বটেই, এই বিশেষ হর্টিকালচার শো করার উদ্দেশ্যও কর্ণাটকাকে এগিয়ে রেখেছে অনেকখানি— বাচ্চা থেকে বুড়োরা যেনো হরেক প্রজাতির গাছ ও ফুল সম্পর্কে জানাতে পারে; সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষ যেনো বন সংরক্ষণ ও গাছ লাগানোয় আগ্রহী হয়ে ওঠে।
স্বাধীনতা দিবসকে বরণ করে নিতে এর চেয়ে ভালো উদ্যোগ ও আয়োজন আর কী হতে পারে!
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
এসএনএস/