গতবছরও চার মিলিয়ন কেজি দার্জিলিং চা বিক্রি করে ৪শ কোটি রুপি রোজগার হয়েছিলো। এবার এক পয়সা রোজগারেরও সম্ভাবনা নেই৷
কারণ পাহাড়ে লাগাতার হরতাল-অবরোধের কারণে চা উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ।
দার্জিলিং চায়ের নিলাম হয় একমাত্র কলকাতা ও লন্ডনে। কলকাতায় নিলামে তোলার মতো দার্জিলিং চা আর নেই বললেই চলে।
কলকাতা চা নিলাম কেন্দ্রের সচিব কল্যাণ সুন্দরম বলেন, যতদূর জানি, দার্জিলিংয়ের আন্দোলনের জন্য সমস্ত বাগানে চা উৎপাদন বন্ধ। সে কারণে কলকাতায় চা আসছে না। আর চা না এলে নিলাম হবে কী করে?
তারপর কী হবে, এ নিয়ে কেউ কিছু বলতে পারছে না। চা শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের আশঙ্কা, এই ধাক্কায় একটা বিশ্বজোড়া ব্র্যান্ডই না মুছে যায়!
কেননা শুধু সেকেন্ড ফ্ল্যাশ চা নয়, থার্ড ফ্ল্যাশ বা অ্যাটম চা-ও তোলা সম্ভব হবে না। বন্ধের কারণে পরিচর্যার অভাবে চা গাছগুলি মানুষ সমান আকার নিয়েছে। নিয়মিত কাটিং, সার, ওষুধ ও কীটনাশক দেওয়া বন্ধ থাকায় ভীষণ ক্ষতি হয়েছে চা গাছের। এই মুহূর্তে বন্ধ প্রত্যাহার হলেও সেই গাছের পরিচর্যা করে তার থেকে উৎপাদন পেতে আরও একটা বছর সময় লাগবে। কারণ বর্ষা শেষ হলে শীত পড়বে। তখন উৎপাদন আর হবে না।
পেটেন্ট আইনের দৌলতে গোটা বিশ্বে দার্জিলিং চায়ের একচ্ছত্র বাজার ভারতের হাতে। স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয় দার্জিলিং চায়ের ধারে কাছে আসে না বিশ্বের অন্য কোনো চা। বিশেষ করে সেকেন্ড ফ্ল্যাশের চা।
গত ১৫ জুন থেকে মোর্চা পাহাড়ে আলাদা রাজ্যের দাবিতে লাগাতার বন্ধ ডাক দেওয়ায় সেই চায়ের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ। একশো বছরের পুরনো পাহাড়ের চা বাগানগুলির বছরে গড় উৎপাদন ৯ মিলিয়ন কেজি। এর মধ্যে তিন থেকে চার মিলিয়ন কেজি চা দেশীয় বাজারে বিক্রি হয়। বাকিটা রপ্তানি হয় বিদেশের বাজারে। বিদেশে রপ্তানি করে বছরে চায়ের থেকে রোজগার হয় প্রায় হাজার কোটি রুপি।
মার্চ মওসুমের প্রথম চা বা ফার্স্ট ফ্ল্যাশ ভালো উৎপাদনে আশার আলো দেখেছিল চা শিল্পমহলে। মে মাস পর্যন্ত পাহাড়ে প্রায় দুই মিলিয়ন কেজি ফার্স্ট ফ্ল্যাশ চা তৈরি হয়েছে। তারপর থেকে পুরোপুরি উৎপাদন বন্ধ।
অতএব চড়া দাম দিলেও আপাতত সুগন্ধি দার্জিলিং চা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিশ্ববাজারে এই সুগন্ধের জন্যই দার্জিলিং চায়ের ব্যাপক চাহিদা। দাম যতই হোক না কেনো, তার ক্রেতা আছে দেশে-বিদেশে। কিন্তু চলতি মাস কাটলে টাকার থলি নিয়ে বসে থাকলেও আর যাই পাওয়া যাক, দার্জিলিং চা পাওয়া যাবে না!
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৭
ভিএস/এএ