ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

জ্ঞানদেবীর আরাধনার সঙ্গে ইলিশ-খিচুড়িতে বুঁদ কলকাতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৮
জ্ঞানদেবীর আরাধনার সঙ্গে ইলিশ-খিচুড়িতে বুঁদ কলকাতা বিদ্যার দেবী, বাগদেবী সরস্বতীর পুজোর দিনে বাঙালির ইলিশ-প্রীতির মোচ্ছবও চলছে সমানে। ছবি-ভাস্কর সরদার

কলকাতা: আজ সরস্বতী পুজো। এই দিনে বাড়ি-বাড়ি ফুলকপি-কড়াইশুঁটির খিচুড়ি রান্না দস্তুর কলকাতায়। কিন্তু, পূর্ববঙ্গীয়, অর্থাৎ একসময় যারা ওপার বাংলা পার হয়ে এসেছে, সেসব বাড়িতে সরস্বতী পুজোয় জোড়া ইলিশ রান্না বাধ্যতামূলক। কারণ, প্রথা ও রীতি অনুযায়ী এদিন অসংখ্য গৃহস্থের হেঁসেলে জোড়া ইলিশ ঢুকবেই। 

নিষেধাজ্ঞা ওঠার ঘোষণা হলেও বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ কবে রাজ্যে ঢুকবে, তার নির্ঘণ্ট এখনও ঘোষণা হয়নি। তাই দুধের স্বাদ ঘোলে হলেও রসনা তৃপ্তির জন্য আজ বাগদেবীর আরাধনায় কলকাতার বাজারে মিয়ানমারের বড় ইলিশ।

সঙ্গে এ রাজ্যের ছোট সাইজের ইলিশও। জোড়া ইলিশের জোগানের জন্যই হিমঘরে সংরক্ষিত প্রায় ৪০ টন ইলিশ বাজারে আনা হয়েছে।  

রীতি-রেওয়াজ অনুযায়ী ঘরে জোড়া ইলিশ এলে, কাঁচা হলুদ-তেল-সিঁদুরের টিপ পরিয়ে তাকে বরণ করা হয়। তবে রীতি অনু্যায়ী, দুর্গাপুজোর পর ইলিশ খাওয়া বন্ধ হয় রাজ্যে। তারপর আবার ইলিশের প্রবেশ ঘটে আজকের দিনে। এটাই কলকাতার বাঙ্গালদের তথাকথিত রীতি। আর সেই সুযোগটাই বা  ছাড়বে কেন বিক্রেতারা! দামও হাঁকাচ্ছে চরম। কিলোপ্রতি দাম আজ ১২শ রুপি।

রাজ্য মৎস্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সাল থেকে পদ্মার ইলিশ পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ওই বছর থেকেই রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল তারা। শেষবার ২০১১ সালে বাংলাদেশ থেকে পদ্মার ইলিশ এসেছিল প্রায় সাত হাজার মেট্রিক টন।  

প্রতিবছর জামাইষষ্ঠীর সময় থেকেই বাংলাদেশের ইলিশের আমদানি শুরু হত। কলকাতার বাঙালির নববর্ষেও পদ্মার ইলিশ অঢেল পাওয়া যেত। তারপর পাওয়া যেত দুর্গাপুজোয়। যা বিজয়া দশমী পর্যন্ত চলত। গত এপ্রিল মাসে বাংলা নববর্ষের আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে সফরে এসে পদ্মার ‘তোফা’ (উপহার) স্বরূপ ৩০ কেজি ইলিশ সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। এবার ৮ জানুয়ারি মৎস্যমন্ত্রী নারায়ণচন্দ্র চন্দ ইলিশের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণাও করে দিয়েছেন। তাতে হাসি ফুটেছে পশ্চিমবাংলার ভোজন রসিকদের।

রাজ্যের ফিশ ইম্পোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অতুলচন্দ্র দাস বলেন, মিয়ানমার থেকে বিমানে করে আগেই বড় বড় ইলিশ আনা হয়েছে। এক একটির ওজন এক থেকে দেড় কিলো। দু-কিলো সাইজেরও রয়েছে। যেহেতু অনেকেই জোড়া ইলিশ কেনেন, তাই সব ধরনের ক্রেতার কথা ভেবেই এ রাজ্যের ছোট সাইজের (৫শ থেকে ৭শ গ্রাম) ইলিশেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, রোববার ১৫ টন ও সোমবার আরও প্রায় ২৫ টন ইলিশ কলকাতার বাজারে আনা হয়েছে। তবে পদ্মার মতো স্বাদে-গুণে অপরূপ না হলেও মিয়ানমারের এই বড় ইলিশের স্বাদও খারাপ না। নানা মেন্যুতে পাতে এক টুকরো ইলিশ যদি না থাকে, তাহলে কি চলে! তা-ও আবার যদি তা হয় সরস্বতী পুজোর দিনে।
চড়া রোদ থাকার কারণে গত বেশ ক’দিন ধরে কলকাতার তাপমাত্রা বেড়েছে। তবে শীতের আমেজটুকুও  আছে। তাই সোমবার জ্ঞানদেবীর আরাধনার দিনে উপভোগ্য শীত আর ইলিশ-খিচুড়ি নিয়ে আজ চূড়ান্ত ব্যস্ত কলকাতাবাসী।  
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৮
ভিএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।