ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

ব্যাংককের আদলে এবার কলকাতায় ভাসমান বাজার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৮
ব্যাংককের আদলে এবার কলকাতায় ভাসমান বাজার কলকাতায় ভাসমান বাজার

কলকাতা: অনেকটা ব্যাংককের আদলে ভাসমান বাজার। মানে নৌকাতেই বসবে বাজার। সেখানেই মিলবে মাছ থেকে শাক সবজি। খোদ কলকাতা শহরেই শুরু হলো ভাসমান বাজার। বলা যায় বহু প্রতীক্ষার অবসান। বাজার হওয়ায় দক্ষিণ কলকাতার পাটুলি অঞ্চলবাসী যথেষ্ট খুশি। রাজ্য সরকারের দাবি ভারতে এটি প্রথম ভাসমান বাজার।

বাজার উদ্বোধনের পর নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরাদ হাকিম বলেন, এই ভাসমান বাজার আমাদের গর্ব। শহরের অন্য প্রান্তের জলাশয়গুলোতে একইরকম বাজার করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবা হবে।

সময়টা ২০১৩। ব্যাংকক বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকেই মাথায় আসে ভাসমান বাজারের কনসেপ্ট। তারপরই খুঁজে ফেলা হয় জায়গা। পাটুলি ঝিলকেই নতুনভাবে সাজিয়ে তোলার চিন্তা শুরু হয়ে যায়। মেট্রোরেলের কাজের জন্য মিলছিলো না ২২৫ জন বিক্রেতার পুনর্বাসনের জায়গা। বাজার সম্প্রসারণের কথা চিন্তা করেই পাটুলি ঝিলকেই বেছে নেওয়া হয় ভাসমান বাজার বানানোর কাজে। ‘দেশের মধ্যে প্রথম ভাসমান বাজার তৈরি হয়েছে কলকাতায়’, এমনই দাবি করেছেন মন্ত্রী।
 
মন্ত্রীর দাবি কি ঠিক?
তথ্য বলছে, কাশ্মীরের ডাল লেকে ভাসমান বাজার শতাব্দী প্রাচীন। সে এক ভাসমান জগৎ। শ’ শ’ হাউজবোট ভেসে বেড়ায় ডাল লেকে। রয়েছে ভাসমান চায়ের দোকান, স্টেশনারি দোকান। সেখানেই চলে কেনাকাটা। সিনেমার বদৌলতে সে বাজার দেখেছে সবাই। ১৯৬৪ সালে ‘কাশ্মীর কি কলি’ সিনেমায় ডাল লেকের বাজার বোধ হয় প্রথম আসে বলিউড ছবিতে।

ভারতের অন্যতম রাজ্য কেরালা। আলাপ্পুঝা জেলায় ২০০৯ সালে চালু হয় ভাসমান সুপার মার্কেট। এখন তা আরও উন্নত। জলবন্দি মানুষের দোরগোঁড়ায় পণ্য পৌঁছে দিয়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই বাজার। নাম তার ‘ত্রিবেণী সুপার মার্কেট’। পরিচালনা করছে রাজ্যের কনজিউমার ফেড বিভাগ।  
 
তবে কি রাজ্য সরকারের দাবি ভুল?
প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘ডাল লেকে ঘুরে ঘুরে নৌকায় বিক্রি নতুন নয়। বহু পুরোনো। নৌকা রয়েছে। হাউজবোটও রয়েছে। কিন্তু, আমাদের ‘ব্যাংকক কনসেপ্ট’। কাশ্মীরে শিকারাগুলো (নৌকা) মুভ করে বিক্রি করে। আর কলকাতার বাজারটি ভাসমান। এটা পার্মানেন্ট। যা একমাত্র ব্যাংককে আছে। ওদেরটা চলমান বাজার। আমাদেরটা ভাসমান বাজার।
ভাসমান বাজারে দোকান সাজিয়ে বসেছেন এক বিক্রেতাকীভাবে তৈরি হলো এই ভাসমান বাজার:
ঝিলের মাঝ বরাবর তৈরি হয়েছে মূল ভাসমান বাজারে চলাচলের রাস্তা। সেখান থেকে দু’দিকে ছ’টি করে মোট বারোটি শাখার মতো ছড়িয়ে গেছে চলাচলের রাস্তা। সেগুলোর কাছেই রয়েছে নৌকা। কাঁচা আনাজ, ফলমূল, শাক-সবজি, মাছ, মুদির দোকান, লেপ-তোষক বিছানাসব ধরনের দোকান আছে এখানে। শাল কাঠের খুঁটির উপরে তৈরি হওয়া ভাসমান রাস্তাগুলোর দিয়ে হেঁটে বিভিন্ন নৌকায় পৌঁছে যাবেন ক্রেতারা। চওড়া ওয়াকওয়েতে দেওয়া হয়েছে রেলিং। ঝিলের পানির ওঠানামা ভেবে তৈরি হয়েছে নৌকার নকশা। রয়েছে ঝরনা, ক্যাফেটেরিয়া, বসার জায়গাও।

ভাসমান বাজারের জন্য ঝিলে এসেছে মোট ১১৯টি নৌকা। নৌকাগুলো তৈরি হয়েছে হুগলি জেলার বলাগড়ে। এরইমধ্যে নৌকায় বসতে শুরু করেছেন বিক্রেতারা। কেউ কেউ বেশ উচ্ছ্বসিত নতুন জায়গায় বসে, অনেকেই আবার ভাবছেন নৌকার দুলুনিতে ঠিকঠাক ব্যবসা করা যাবে কি না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, নতুন জায়গা পেয়ে খুব ভালো লাগছে। কিন্তু কীভাবে বসবো বুঝতে পারছি না। নৌকা দুলে উঠলে টাল সামলাতে পারবো তো?

দুলাল বিশ্বাস নামে এক ক্রেতা বলেন, খুবই মনোরম পরিবেশ। কিন্তু একটা সমস্যা হচ্ছে। অনেকটা ঝুঁকে কেনাকাটা করতে হচ্ছে।  আবার এই ভাসমান বাজার তৈরির সময়ে কম দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি ঝিলের সামনের ফ্ল্যাটগুলোর বাসিন্দাদের। পাইপ ঢোকানো, রাস্তা তৈরির জন্য নভেম্বর থেকে প্রায় মাস দু‘য়েক রাস্তার অবস্থা বেশ খারাপ ছিলো। পা পিছলে, গর্তে পড়ে অনেকে আহতও হয়েছিলেন। তবে এখন সবই অতীত। নতুন করে রাস্তা তৈরি হয়েছে। তাই সবার আশা, কলকাতার নতুন ‘ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন’ হিসেবে উঠে আসবে পাটুলির ভাসমান বাজার।

মন্ত্রী বলেন, ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ সমস্যায় না পড়েন সেজন্য যাবতীয় পরিকাঠামোর লক্ষ্য রাখা হয়েছে। ঝিলে আরও পানি বাড়ানো হচ্ছে। বৃষ্টিতে বিশেষ ধরনের ত্রিপলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাতে বৃষ্টির পানিতে কেউ ভিজে না যায়।
 
রাজ্য সরকারের কথায়, কে কি বললো তা নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না। আগের থেকে কলকাতা অনেকটাই সেজে উঠেছে। তার উপরে এই ভাসমান বাজার তৈরি হলো। যা শুধু এ রাজ্যেই নয়, পুরো ভারতে প্রথম। এশিয়ার মধ্যে তৃতীয় ভাসমান বাজার। ভাসমান বাজারে যাবতীয় সামগ্রীর দাম আয়ত্তের মধ্যেই রাখা হবে। যাতে প্রতিটি মানুষ শুধু বাজার করতেই নয়, বিনোদনের জন্য আসতে পারেন। এই বাজারের মাধ্যমে পর্যটনের দিকটিও খুলে গেলো।  

উল্লেখ্য, বিপদ এড়াতে ছয় বছরের শিশুদের জন্য এই বাজারে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৪০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৮
ভিএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।