নতুন জায়গায় বইমেলা জমিয়ে তুলতে কিছুটা হলেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তা মুখে স্বীকার না করলেও পরোক্ষভাবে মেনে নিচ্ছেন আয়োজক পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের কর্মকর্তারা।
এই সহায়তা কেন্দ্রের কথা জানাতে গিয়ে গিল্ড সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, এর আগে সায়েন্স সিটির পাশে মিলনমেলা প্রাঙ্গণে বইমেলা হতো। প্রথমবার সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্কের মাঠে বইমেলা হচ্ছে বলে কিছু সমস্যা রয়েছে। এবার মেলার মাঠটি লম্বাটে বলে অনেকের একদিক থেকে আরেক দিকে যেতে বেশ সমস্যা হচ্ছে। প্রতিবারই মেলায় স্টলের নকশা বিলি করা হয়। অনেকেই কিভাবে আসবে-যাবে বুঝে উঠতে পারছে না। তাই নকশায় বাড়তি যোগ ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা। এবার রাজ্য সরকার মেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রুটে বাড়তি ১৭৬টি বিশেষ বাস দিয়েছে।
তিনি জানান, বই পড়ায় আগ্রহ বাড়াতে এবারও লটারি করে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকার গিফট কুপন দেওয়া হচ্ছে পুস্তকপ্রেমীদের। এই কুপন দিয়ে বই কেনা যাবে। শেষ দিনের লটারিতে দেওয়া হবে গাড়ি। ক্যাশ মেমো দিয়ে লটারিতে অংশ নেওয়া যাবে। বইমেলার জন্য বিশেষ অ্যাপ চালু হয়েছে। অ্যাপ থেকে স্টলের অবস্থানসহ মেলা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য মিলবে।
গিল্ডের সভাপতি সুধাংশু শেখর দে বই বেচাকেনার খোঁজ দিতে গিয়ে বলেন, ভালোই বিক্রি শুরু হয়েছে। বিক্রির সঙ্গে লক্ষ্য রেখেছি এখানে জাল বই কেউ বিক্রি করছে কিনা। এখন পর্যন্ত মেলায় ১২টি স্টলে জাল বই বিক্রি হচ্ছিলো। এদের মেলা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং যে স্টলগুলো ওই প্রকশনাগুলো থেকে বই এনে বিক্রি করছিল তাদের সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া বইমেলার ষষ্ঠ দিনে এসে ত্রিদিববাবু বলেন, নতুন স্থানে কিছু সমস্যা থাকলেও ভালোই জমে উঠেছে। তার দাবি, শুধু রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টা পর্যন্ত মেলায় তিন লাখ ক্রেতা-দর্শনার্থী এসেছে। যদিও কলকাতা পুলিশের হিসেবে সংখ্যাটা দেড় লাখের কাছাকাছি। সল্টলেকে মেলা হওয়ায় ক্রেতা সংখ্যা বেশি বলে দাবি করেন তিনি।
মঙ্গলবার বিকেলের দিকটা মেলা প্রাঙ্গণ ফাঁকা লাগলেও সন্ধ্যার দিক থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। সল্টলেকের অফিসফেরত বহু মানুষ একবার বইমেলায় ঢুঁ মেরে গিয়েছেন। লিটল ম্যাগাজিন স্টলগুলোয় ভিড় এদিনও কম ছিল না।
নামকরা প্রকাশনা সংস্থাগুলোর সামনে লাইন না পড়লেও ভেতরে বই কেনার জন্য ভিড় ছিল ভালোই। তৃণমূল পার্টির মুখপাত্র ‘জাগো বাংলা’ এবং ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার’র মণ্ডপের সামনে দুটি আলাদা গানের আসর বসেছে। বাউল, তরজা গান, কীর্তন লেগেই রয়েছে সেখানে।
তবে যেকোন বইয়ের দোকানের তুলনায় খাবারের স্টলগুলোতে ভিড় বেশি। বইয়ের দোকানে গিয়ে নতুন বই উল্টেপাল্টে দেখা ছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে যোগ হয়েছে সেলফি তোলার ধুম। হাতে ধরা মোবাইল ফোনটি উপরে তুলে ক্লিক। ছবি তুলে তা ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা হোয়াটস অ্যাপে। রয়েছে বেনারসি পান, রকমারি আচার, চালের দানার উপর নাম লিখে দেওয়ার ব্যবস্থাও।
স্টলের সংখ্যা ৬শ’ থেকে একটু বেশি। বইমেলায় ফোকাল থিম ফ্রান্স। ফ্রান্স ছাড়া বাংলাদেশসহ মোট ২৯টি দেশ মেলায় অংশ নিয়েছে। সব মিলিয়ে এবারে ৪২তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা নতুন স্থানে সেন্ট্রাল পার্কে বেশ ভালোই জমে উঠেছে। যা চলবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময়: ০৪২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৮
ভিএস/আরআর