এই অবস্থায় এখন বড় প্রশ্ন- ভারত কবে পেঁয়াজ রফতানি ফের শুরু করবে বাংলাদেশে? এ নিয়ে বাংলানিউজ কথা বলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের টাস্কফোর্স মার্কেটিং কমিটির সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলের সঙ্গে। ভারতের অন্য রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি চলে তার তত্ত্বাবধানেই।
বাংলানিউজ: পশ্চিমবঙ্গে পাইকারি এবং খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেমন চলছে?
রবীন্দ্রনাথ কোলে: রাজ্যের খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দামটা ৬০ থেকে ৭০ রুপি হয়েছিল। তারপর দাম কিছুটা কমে ৩৫ রুপিতে নেমে এসেছিল। বর্তমানে পেঁয়াজের দাম ফের বেড়েছে। এর কারণ মহারাষ্ট্রের নাসিকে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকলেও এখনো ওই অঞ্চলে দুর্যোগ কাটেনি। সে কারণে পেঁয়াজ গাড়িতে (দূরে পরিবহনের জন্য) লোড করা যাচ্ছে না। তাই পশ্চিমবঙ্গে দামটা এখনো নামেনি। স্বাভাবিকভাবেই সরবরাহ কমলে দাম বাড়বে।
এখন পেঁয়াজের পাইকারি দর চলছে কেজিপ্রতি ৪২ রুপি। যা এই সময় হওয়া উচিত ছিল ১৫ রুপির মত। খুচরা বাজারে থাকতো ২০-২২ রুপি। কিন্তু সরবরাহ কমে যাওয়ায় ৪২ থেকে ৪৫ রুপির মধ্যে আছে। ফলে পেঁয়াজ কলকাতার খুচরা বাজারে ৫০ থেকে ৬০ রুপির মধ্যে চলছে।
বাংলানিউজ: পশ্চিমবঙ্গে পেঁয়াজ চাষ বাড়ছে না কেন?
রবীন্দ্রনাথ কোলে: মনে রাখতে হবে পেঁয়াজ সংরক্ষণের পদ্ধতি একটু ভিন্ন। কোল্ড স্টোরেজ বা ঠাণ্ডা সংরক্ষণ যেটাকে বলা হয়, তাতে কিন্তু পেঁয়াজ রাখা যায় না। পেঁয়াজ সংরক্ষণের জায়গা হতে হয় সাধারণত উঁচু। যেখানে পানি বা জলীয় আর্দ্রতা প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু ওই সংরক্ষিত জায়গায় হাওয়া-বাতাস খেলতে দিতে হবে। তবেই পেঁয়াজ ভালো থাকবে। এরকম পরিকাঠামো এখনো পশ্চিমবঙ্গে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। তাই সে কারণে অতিরিক্তভাবে পেঁয়াজ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আগের থেকে উৎপাদন বেড়েছে বিধায় পরিকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা চলছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে পারবো। তখন আর ভিনরাজ্য থেকে পেঁয়াজ আনতে হবে না।
বাংলানিউজ: পশ্চিমবঙ্গে কবে কমতে পারে পেঁয়াজের দাম?
রবীন্দ্রনাথ কোলে: এখন যে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে অর্থাৎ যে সমস্যাটা চলছে, ধারণা করা হচ্ছে যে আগামী পনেরো-কুড়ি দিন এই সমস্যাটা আরও চলবে। আশা করা যাচ্ছে নভেম্বরের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে পেঁয়াজের দাম এ রাজ্যে কমবে। ’
বাংলানিউজ: আপনি বলতে চাইছেন ভারতের যেসব রাজ্যে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় সেসব রাজ্যে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দামটা বেড়ে গেছে?
রবীন্দ্রনাথ কোলে: একদমই ঠিকই। কারণ পানি লাগলে পেঁয়াজ পচে যাবে। আর সে কারণেই পরিবহনের গাড়িতে লোড করা যাচ্ছে না।
বাংলানিউজ: মহারাষ্ট্র বা কর্ণাটকের মতো রাজ্যে কৃষকরা বলছেন- তাদের হাতে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রয়েছে। বাংলাদেশসহ অন্যান্য রাষ্ট্রে যেভাবে পেঁয়াজ রফতানি হতো, তা ফের শুরু করুক ভারত সরকার। কী বলবেন?
রবীন্দ্রনাথ কোলে: কেন্দ্রীয় সরকারের নিরিখে বলা যেতে পারে যে- কিছু কিছু ছাড় বা কিছু কিছু বাধা তৈরি করা হয়েছে, এটা ভারতীয়দের সুবিধার জন্য। তবে কিছুক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছে ভারত সরকার ব্যতিক্রম চিন্তাধারা শুরু করছে। আমরা শুনতে পাচ্ছি যে, দক্ষিণ ভারত থেকে কিছু পেঁয়াজ বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে বা দিয়েছে। তবে এখন তা কী অবস্থায় আছে সেটা এই মুহূর্তে আমার জানা নেই।
বাংলানিউজ: প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেটে গেলে কি পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ পেঁয়াজের দাম কমবে?
রবীন্দ্রনাথ কোলে: নিশ্চয়ই কমবে। বাংলাদেশে রফতানি বেশি দিন বন্ধ করে রাখা যাবে না। বাংলাদেশ আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। তার সঙ্গে সম্পর্ক পেঁয়াজ নিয়ে খারাপ হবে, এটা তো হয় না। খুব শিগগির এই সমস্যাটা মিটে যাবে। আমরা বুঝি বাংলাদেশে পেঁয়াজ ছাড়া মোটেই রান্না হয় না। ওদেশে পেঁয়াজ অনেকটা নুনের মতো। সব ঠিক থাকলে আর হয়তো একমাস (নভেম্বর) সময় লাগবে। তারপরই নিষেজ্ঞা তুলে নেবে কেন্দ্রীয় সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৯
ভিএস/এইচএ/