কলকাতা: সম্প্রতি ঈদ গেছে, এখন দুর্গাপূজার পালা। তবু দেখা নেই পশ্চিমবঙ্গের কেনাকাটার অন্যতম পীঠস্থান নিউমার্কেটে।
নিউমার্কেটের প্রেসিডেন্ট অশোক গুপ্তার তথ্য অনুযায়ী, এখানের ১০০ জনের মধ্যে ৫০ জন ক্রেতা বাংলাদেশি। এরমধ্যে ৬০ ভাগ নারী, বাকি ৪০ ভাগ পুরুষ। এরপরই ২৫ শতাংশ থাকেন শহর সংলগ্ন ও প্রতিবেশী জেলার মানুষ। বাকি ২৫ শতাংশ কলকাতাবাসী। এবং তারও ৭০ শতাংশ নারী। এ নিয়ে দৈনন্দিন ব্যবসা চলে নিউমার্কেট ব্যবসায়ীদের।
কলকাতার শপিং এলাকায় কলকাতাবাসীর সংখ্যা এত কম কেন? আশোক গুপ্তার মতে, কলকাতাবাসী কেনাকাটার জন্য সময় ব্যয় করে সবচেয়ে বেশি ভার্চ্যুয়ালি অর্থাৎ অনলাইন শপিংয়ে। এরপরই থাকে শপিংমলের চাহিদা। বাকি অংশটা আসে নিউমার্কেটে। ফলে নিউমার্কেট মানেই বাংলাদেশি এবং রাজ্যের অন্যান্য জেলা।
আর এ দুটোতেই বাধ সেধেছে পরিবহ ব্যবস্থা। যেমন বর্ডার বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশিরা আসতে পারছেন না, তেমনি লোকাল ট্রেন ও মেট্রোরেল বন্ধ হওয়ায় আসতে পারছেন না জেলার মানুষজনও। ফলে চরম অর্থসংকটে ভুগছে গোটা নিউমার্কেট।
নিউমার্কেটের ১২৫ বছরের পুরনো কাশ্মীরি শালের প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কর্নধার এজাজ আহমেদের মতে, গোটা অঞ্চলটাই বাংলাদেশিদের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশি না এলে এখানের বাজার কোনো মতেই উঠবে না। দোকানগুলোয় খোঁজ নিন, দেখবেন ব্যবসা তো দূরের কথা, অনেক দোকানের গত চার মাসে বওনি পর্যন্ত হয়নি।
হগ মার্কেটে বাসন ব্যবসায়ী পরিতোষ পাল। তিনি খুচরা ব্যবসার সঙ্গে ছোট মাপের পাইকারি ব্যবসা করে থাকেন বাংলাদেশিদের সঙ্গে। মূলত পাইকারি হিসেবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় মিক্সার গ্রাইন্ডার, জুসার, ননস্টিকের মতো সামগ্রী। তিনি বলেন, আমাদের সবার কথা এবার ভাবার সময় এসেছে সরকারের। এভাবে চললে দোকান বন্ধ রেখে বাড়িতে বসে থাকতে হবে।
দুর্গাপূজার মৌসুমে একই সুর শোনা যাচ্ছে চকলেট ব্যবসায়ী ইফতিকার আসলামের কণ্ঠেও। ঈদ গেছে, পুজা এলো। কিন্তু বাজার কই? বাংলাদেশি নেই বাজারও শেষ। জেলার লোকজনও আসতে পারছেন না। যেখানে দিনে পাঁচ লাখ রুপির সেল হতো, সেখানে ৫০০ টাকার সেল নেই। কলকাতার লোক চকলেট খায় কই!
যখন ব্যবসায়ীদের কণ্ঠে করুন সুর, তেল শেষ হয়ে যাওয়া সলতের প্রদীপের ক্ষীণ আলোর মতো, তখন আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন হোটেল ব্যবসীয়রা। সঙ্গে অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও। যেসব বাংলাদেশি চিকিৎসা, ব্যবসা এবং ভ্রমণের কারণে কলকাতায় আসেন, তারা থাকেন নিউমার্কেট সংলগ্ন অঞ্চলগুলোয়।
বর্তমানে এসব অঞ্চল দেখলে মনে হবে এখনও হয়তো ঘুম ভাঙেনি মহল্লার। ফজরের আজানে কাচা ঘুম ভাঙছে তাদের। দূরত্ব রেখে খোলা কয়েকটা হোটেল। ভীড়হীন চায়ের দোকানি ‘মাছি তাড়াতে’ ব্যস্ত। মানি এক্সচেঞ্জের একটা দোকানি মোবাইলে মগ্ন। আনমনা টানা রিকশা চালক। পানিহীন চামড়ার বস্তা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক ভিস্তিওয়ালা।
কিছুদিন আগেও এতটা বিবরণ করা যেত না এ অঞ্চেলের। যেহেতু চিকিৎসা ভিসা শুরু হয়েছে, তাই কিছু বাংলাদেশি আসা শুরু করেছেন। ফলে যার চল্লিশটা রুম তার মাত্র চারটে রুমে বাংলাদেশি। তাতেও স্বস্তি তাদের! শ্যামলী পরিহন কাউন্টার লাগোয়া এক হোটেলের ব্যবসায়ী আশফাকের মতে, এত বছর ব্যবসা করছি, এতদিনে বুঝতে পেরেছি বর্ডার বন্ধ হওয়ার কী জ্বালা!
গোটা টুরিস্ট অঞ্চলে মোট ৩৮ জন বাংলাদেশি রোগী নিয়ে ১১টা হোটেল খোলা। তবে আশার বাণী একটাই, বাংলাদেশ থেকে ফোনে বুকিং শুরু হয়ে গেছে। আগামী দু’সপ্তাহের পর আরও বাংলাদেশি চিকিৎসার কারণে আসবেন কলকাতায়। সব ঠিক থাকলে বছর শেষের আগেই খুলে যাবে বর্ডার। এমনটাই মত হোটেল ব্যবসীয় আসিফ ও বাবলুর।
মাটির ভাড়ে চায়ে চুমুক দিয়ে রিয়াজ বলেন, মুখে যাই বলি দাদা, তাড়াতাড়ি বর্ডার খুলে দেওয়া দরকার। বাস্তব বিষয় আমাদের একে অপরের দরকার। আমাদের, একে অপরের কতটা প্রয়োজন এবার তা বুঝেছি। করোনা যতটা ক্ষতি করলো, ততটাই বোঝার সময় দিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, সেপ্টম্বর ১০, ২০২০
ভিএস/টিএ