ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

শূন্য হয়ে গেল বাম-কংগ্রেস, বিজেপির ভবিষ্যৎ নিয়েও জল্পনা

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৬ ঘণ্টা, মে ৩, ২০২১
শূন্য হয়ে গেল বাম-কংগ্রেস, বিজেপির ভবিষ্যৎ নিয়েও জল্পনা ...

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে ঐতিহাসিক একুশের রায়। স্বাধীনতার পর এই প্রথমবার বাম, কংগ্রেসহীন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা।

এবারে নির্বাচনে মুখে না বললেও বিজেপির হিন্দুত্ববাদের আহ্বান অন্যদিকে মমতার সরাসরি মুসলিম ভোটারদের ভোট দেওয়ার আবেদন। এই ধর্মীয় মেরুকরণের মাঝে বাম-কংগ্রেস জোট বেঁধেছিল ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সঙ্গে। বামেদের পরিকল্পনায় গঠন হয়েছিল সংযুক্ত মোর্চা।

একুশের নির্বাচনে মোর্চার লক্ষ্য ছিল নতুন প্রজন্ম এবং সংখ্যালঘু ভোট। তার সঙ্গে তাদের ৭ পার্সেন্ট কমিটেড ভোট ব্যাঙ্ক। কিন্তু রোববার (০২ মে) নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দেখা গেল দক্ষিণ ২৪পরগনার ভাঙর আসন থেকে শুধু জয়ী হলেন আব্বাস সিদ্দিকির ভাই নওশাদ সিদ্দিকি। গোটা রাজ্য থেকে কর্পুরের মতো ভ্যানিশ হয়ে গেল সিপিআইএম এবং কংগ্রেস। বামেদের ভোট নেমে দাঁড়ালো ৬ শতাংশে।

এই প্রথমবার বিধানসভা অ্যাসেম্বিলি বাম-কংগ্রেসবিহীন। অ্যাসেম্বিলির সেই ফাঁকা বেঞ্চিগুলো পূরণ করবে এখন বিজেপি। আর দূর থেকে নির্বাক দর্শক হয়ে বসে থাকবেন নওশাদ সিদ্দিকি। এরজন্য আলিমুদ্দিনের সদস্যরা দায়ী করেছেন ধর্মীয় মেরুকরণকেই। তাদের কথায় বিজেপি ধর্মের রাজনীতি করতে চেয়েছিল, মানুষ তা মেনে নেয়নি। বিজেপিকে থামাতে বামেদের ভোট গেছে তৃণমূলে।

এক সিপিআইএম নেতা বলেন, আমাদের সমর্থকরা ভেবেছিলেন যে, বিজেপিকে থামাতে হলে তৃণমূলকেই ভোট দেওয়া উচিত। এভাবে তৃণমূলের কাছে আমাদের জেতা আসনগুলোও হারিয়েছি। তবে আমরা এখনও জনগণের পাশে আছি, কাজ করছি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য এখনও সাহায্য করছেন। যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য আমাদের আন্দোলন জারি থাকবে। হার-পরাজয় সময়ের খেলা।

ভোটের ফল দেখে ভেঙে পড়েছেন পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীও। তিনিও ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতিকেই দুষেছেন। তার কথায়, আমরা জনগণকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি যে কংগ্রেসই ধারাবাহিকভাবে বিজেপি এবং তার সাম্প্রদায়িক আদর্শের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

তবে সে যাই হোক, একই ঘটনা ঘটেছিল ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে। কংগ্রেস ঠেকাতে দ্বিতীয়বারের জন্য বিপুলভাবে জয়ী করেছিল মোদী সরকারকে। তার প্রভাব পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গেও। ৪২ টার মধ্যে ১৮টা আসন পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু এবার লোকসভা নির্বাচন নয়। তা ভুলে গিয়েছিল বিজেপি। সেই ভিত্তিতেই এবার বাংলা দখলের জয়ে স্বপ্ন দেখেছিল কেন্দ্রীয় নেতারা।

একই মত বামপন্থা কলকাতাবাসীদের। তারা নিশ্চিত জানতো সংযুক্ত মোর্চা আসন পেলেও সরকার গঠন করতে পারবে না। তাই বিজেপিকে রুখতে এবার দিদিকেই বেছে নিয়েছে তারা। তবে মমতার এই শক্তি আগামী দিনে অক্সিজেন যোগাবে মোদী বিরোধীদের। ফের তারা চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। সামনেই উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের ফল ঘোষণার পর থেকেই মোদী বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। এর পাশাপাশি ২০২৪ সালে ভারতে লোকসভা নির্বাচন। মমতার এই জয় তার ফলেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গবাসী।

এর কারণ পশ্চিমবঙ্গসহ গতকালই আরও চার রাজ্যে বিধানসভার ফল ঘোষণা ছিল। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, তামিলনাড়ু তিনটিতেই হার হয়েছে বিজেপির। জিতেছে আসাম এবং পদুচেরিতে। তবে এদিন ভারতবাসীর নজর ছিল পশ্চিমবঙ্গের উপর। ফলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ‘ভারতে বিজেপির শেষের শুরু নয়তো?’এর উত্তর তো সময়ই দেবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০২১
ভিএস/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।