ঢাকা, রবিবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৮ জুলাই ২০২৪, ২১ মহররম ১৪৪৬

ভারত

শ্রেয়া ঘোষালের নামে বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সঙ্গে প্রতারণা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৯ ঘণ্টা, মে ৫, ২০২২
শ্রেয়া ঘোষালের নামে বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সঙ্গে প্রতারণা

কলকাতা: ভারতের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী শ্রেয়া ঘোষালকে অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানাতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন। অভিযোগের তীর মুম্বাইয়ের একটি সংস্থা হিটমেকার্স প্রোডাকশন্স প্রাইভেট লিমিটেডের দিকে।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।

ঘটনার সূত্রপাত চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি। বাংলাদেশের এক সরকারি অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে সেদিন গান গাওয়ার কথা ছিল শ্রেয়া ঘোষালের। কিন্তু শ্রেয়া ঘোষাল সেদিন বাংলাদেশে যাননি।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা যায়, অফিসারদের অনুষ্ঠানে শ্রেয়াকে বাংলাদেশে নেওয়ার দায়িত্ব পড়ে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ মিশনের এক কর্মকর্তার ওপর। সেই কর্মকর্তার মাধ্যমে একবার অঞ্জন দত্ত গান গেয়েছিলেন ওই অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে। ওই কর্মকর্তা মুম্বাইয়ের বিভিন্ন এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে বুঝতে পারেন, শ্রেয়াকে বাংলাদেশে নিয়ে যেতে প্রায় কোটি টাকা খরচ।

কলকাতার সঙ্গীতশিল্পী চিরন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়ই বাংলাদেশ মিশনে যেতেন। মিশনের হয়ে তিনি একটি মিউজিক ভিডিও করেছেন। তার কাছে ওই কর্মকর্তা শ্রেয়ার বিষয়ে জানান। চিরন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে জানাব। কয়েকদিন পর তিনি জানান, মুম্বাইয়ের এক সংস্থার সঙ্গে তার কথা হয়েছে। মাত্র ১৭ লাখ রুপিতে শ্রেয়াকে গানের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া যাবে।

মুম্বাইয়ের ওই সংস্থার কাগজপত্র দেখে বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন ভরসা পেলে গত বছরের নভেম্বরে মিশনের কাছ থেকে চিরন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় সাড়ে আট লাখ রুপি নিয়ে যান। এরপর ১৪ জানুয়ারির এক সপ্তাহ আগে মুম্বাইয়ের এক অথরাইজ লেটার দেখিয়ে বিশ্বজিৎ মন্ডল নিয়ে যান আরও সাড়ে আট লাখ রুপি। অর্থাৎ দুই ধাপে মিশন থেকে ১৭ লাখ রুপি নিয়ে যায় চিরন্তন ও বিশ্বজিৎ। কৃষ্ণ শর্মা নামে মুম্বাইয়ের ওই সংস্থার পরিচালকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়। সমস্ত নথিই আছে মিশনের কাছে।

শ্রেয়া ঘোষাল বাংলাদেশে না যেতেই নড়েচড়ে বসে মিশন। জালিয়াতি ধরা পড়ে মুম্বাইয়ের ওই সংস্থার। যোগাযোগ করা হলে তারা বলে, সময় দিন টাকা ফেরত দিয়ে দেবো। কলকাতা পুলিশকেও সমস্ত তথ্য দেয় উপ-হাইকমিশন কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ মিশন জানায়, ভারত থেকে যে কোনো শিল্পীকে বাংলাদেশে নিয়ে যেতে হলে কোনো না কোনো এজন্টের ওপর নির্ভর করতে হয়। মুম্বাইয়ের ওই সংস্থার কাগজপত্র দেখে সঠিক মনে হয়েছিল। তাই তাদের সঙ্গে যোগোগ করা হয়। তারা এখন জানিয়েছে, ১৭ লাখ রুপির সমস্তটাই ফেরত দিয়ে দেবে। তারা লিখিতভাবে মিশনকে জানিয়েছে—‘আমাদের একটু সময় দিন। আমরা সমস্ত টাকা ফেরত দিয়ে দেবো। প্রয়োজনে বাড়তি টাকা দেবো। ’ মুম্বাইয়ের সংস্থাটির কাছ থেকে ১৭ লাখ রুপি ফেরত চায় মিশন। এ নিয়ে এপ্রিল মাস অবদি মুম্বাইয়ের সংস্থাটির সঙ্গে কথা হয়েছে বাংলাদেশ মিশনের।

মুম্বাইয়ের সংস্থাটির সঙ্গে উপ-হাইকমিশনের যোগাযোগ করে দেওয়া চিরন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমান প্রজন্মের নামী সঙ্গীতশিল্পী। ২০০৮ সালে একটি রিয়েলিটি শো থেকে তার উত্থান। এরপর একাধিক সিনেমা, সিরিয়ালে গানের পাশাপাশি অভিনয়ও করেছেন। প্রতারিত হওয়ার পর বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের পক্ষ থেকে কলকাতার প্রতারণা দমন শাখায় চিরন্তনের নামে লিখিত অভিযোগ করা হয়। তারই ভিত্তিতে চিরন্তনকে সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

চিরন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও ওই কোম্পানির প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী নামে হওড়ার এক যুবকের মাধ্যমে মুম্বাইয়ের ওই সংস্থার সঙ্গে চিরন্তনের যোগাযোগ গড়ে ওঠে। প্রসেনজিৎ নিজেকে হিটমেকার্সের এজেন্ট বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। একটি গানের অ্যালবাম তৈরির জন্য ওই এজেন্টের মাধ্যমে মুম্বাইয়ের সংস্থাটির পরিচালক কৃষ্ণ শর্মার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০ লাখ রুপি দিয়েছিলেন চিরন্তন। কথা ছিল, রনবীর সিং ও ভিকি কৌশলের মতো তারকাদের সেই অ্যালবামে দেখা যাবে। কিন্তু সেই কাজ শুরুর আগেই উপ-হাইকমিশনের সঙ্গে প্রতারণার ঘটনা সামনে আসে।

বর্তমানে হাওড়ার এজেন্ট প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী এখন নিরুদ্দেশ। বন্ধ করে দিয়েছেন মোবাইল ফোন। এরপরই চিরন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার যাদবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় অন্য রাজ্যের প্রতারণা চক্র জড়িয়ে থাকায় তদন্ত এখনও বেশি দূর এগোতে পারেনি পুলিশ। এপর বাধ্য হয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন চিরন্তন।

এ বিষয়ে বাংলানিউজকে চিরন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমি চাইনি ঘটনাটা মিডিয়ায় জানাজানি হোক। আমাকে কলকাতা পুলিশ এবং আমার উকিল মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। এতে প্রতারকরা সজাগ হয়ে যাবে। আমি একজন শিল্পী। আমার আয়-রোজগার, স্টুডিও সব চলে গেছে এই প্রতারকদের হাতে। এখন সব জানাজানি হলে, প্রতারকদের পুলিশ ধরতে না পারলে, আমাকে পথে বসতে হবে। অনেক কিছু বন্দক দিয়ে ওই টাকা জোগাড় করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০২২
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।