ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

কলকাতায় শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে ঈদুল আজহার কেনা-বেচা

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৮ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০২২
কলকাতায় শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে ঈদুল আজহার কেনা-বেচা

কলকাতা: রোববার (১০ জুলাই) ভারতে ঈদুল আযহার প্রথম দিন। ত্যাগ আর উৎসবের মিশেলে গোটা বিশ্বের সঙ্গে ঈদ পালন করবে কলকাতাও।

সে কারণে শহর সেজেছে ভিন্নভাবে। বিগত বছরগুলোর মতোই কলকাতার অস্থায়ী পশুর হাটগুলোয় ভিড় বেড়েছে। তবে অন্যবারগুলোর তুলনায় এবার একটু দেরিতে সবকিছুর আয়োজন। শেষ বেলায় বাজার বসলেও তা সর্ব সাধারণের আয়ত্বের মধ্যেই আছে।

মূলত, ঈদুল আজহা উপলক্ষে শহরে বিভিন্ন প্রান্তে বসে অস্থায়ী পশুর হাট। এসব হাটে বিক্রেতারা আসেন কলকাতার বাইরে থেকে। অর্থাৎ, হাওড়া, মালদা, বসিরহাট, মুর্শিদাবাদের মতো জেলাগুলো আছেই, পাশাপাশি ভারতের উত্তরপ্রদেশ, বিহার, রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলোর ব্যবসায়ীরাও আসেন এই  শহরে। যে কারণে এ সময়টায় কলকাতায় বিভিন্ন পশুর দেখা মেলে। অন্য ভাবে সেজে ওঠে শহর কলকাতা।

এসব হাটে বিভিন্ন জাতের গরু আকারেও থাকে তারতম্য। সাধারণত দেশীয় গরু বলতে যা বোঝায় সেসব বাংলার গরু। তার চেহারার গঠন আর ভারতের ভিন রাজ্যের গরুর গঠনে অনেক ফারাক থাকে। বিশাল বিশাল আকারের গরু আসে ভিন রাজ্যগুলো থেকে। ওজন ৭ থেকে ৮ মণ, কোনোটা আবার নয় মণের কাছাকাছিও। কেজির হিসেবে একেটি গরুর ওজন ৩৪০ কেজি থেকে ৩৬০ কেজির বেশি। এবারে তাদের নাম দেওয়া হয়েছে বাহুবলী। এসবের দামই শুরু ৫ লাখ রুপি থেকে।

শহরের আরেক প্রান্তে দেখা গেল অন্য গঠন। লম্বা শিংযুক্ত সুঠাম চেহারার গরু। ওজন ৪-৫ মণের কাছাকাছি। দাম শুরু ৬০ -৭৫ হাজার রুপির মধ্যে। সাধারণত এ ধরনের গরু পশ্চিমবঙ্গে দেখা যায় না। আসল বিষয় হল বাংলার আবহাওয়ায় এ ধরনের গরু হয় না। এমনটাই  জানান হাওড়ার গরু ব্যবসায়ী জাফর। ঈদের কারণে ভিনরাজ্য থেকে গরু এনে কিছুদিন কলকাতায় ব্যবসা করেন। ফিরে গিয়ে সামাল দেন দেশি গরুর ব্যবসায়ে।

তবে, এবার দেশি গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কারণ বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারে পশ্চিমবঙ্গের খামারের গরুর দাম ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে। যেসব দেশি গরুর দাম  গতবার ৩৫-৪০ হাজার রুপি ছিল, এবার তা শুরুই হচ্ছে ২০ হাজার রুপি থেকে। সর্বোচ্চ ৭০ হাজার রুপি। ওজন দেড় থেকে আড়াই মনের মধ্যে। পাশাপাশি  সুবিধা হচ্ছে কেনার পর গরুগুলো ক্রেতাকে বহন করতে হয় না। ঠিকানা, আর ভাড়া মিটিয়ে দিলে বিক্রেতারই বাড়িতে পৌঁছে দেন এসব কোরবানির পশু।

কলকাতার বিশেষত্ব হল অস্থায়ী পশুর হাটগুলো অঞ্চল বিশেষ ভিন্নতা থাকে। যেমন গরু, উঠ মেলে মেটিয়াব্রুজ, গার্ডেনরিচ, রাজাবাজার মতিঝিলসহ আরও কয়েটি এলাকায়। পাশাপাশি শহর সংলগ্ন আরও কয়েকটি জায়গায় শুধুমাত্র গরু কেন্দ্রিক বাজার বসে। আবার অন্যত্র দেখা মেলে, নানা জাতের খাসি এবং দুম্বা। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কলকাতার জাকারিয়া স্ট্রিট। অর্থাৎ নাখোদা মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় বসে অস্থায়ী খাসির বাজার। এবার দেশি খাসির দাম ১৫ হাজার থেকে শুরু।

তবে ভিন রাজ্যের খাসি দাম শুরু হচ্ছে  ৫০ হাজার রুপি থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ। এসব প্রজাতির নাম মেমনি। চেহারা আর গঠনে বড় আকারের বাছুরের থেকে কোনো অংশে কম নয়। আর আছে দুম্বা। যার মাথার থেকে পেছনের অংশে মাংস বেশি। দেখলে মনে হবে উটের কুঁজটা, একেবারে শেষপ্রান্তে। গরুর পর শহরে দুম্বার চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। দাম এবার সাধ্যের মধ্যে। শুরু ৫০ হাজার রুপি থেকে। গঠন অনুযায়ী ১ লাখের উপরে। জাকারিয়া স্ট্রিটের পর সবচেয়ে বড় খাসির হাট বসে খিদিরপুরে। এছাড়াও ছোটছোট আরও কয়েকটি খাসি কেন্দ্রিক অস্থায়ী হাট বসে থাকে শহর কলকাতায়।

তবে শহরে এবার উটের চাহিদা নেই বললেই চলে। ব্যবসায়ীদের থেকে জানা গেল, যারা নিয়ত করেছেন, তারাই একমাত্র উট কিনছেন।

এছাড়া উৎসবকে কেন্দ্র করে পোশাকের জন্য কলকাতার নিউমার্কেট তো আছেই। এসময় অনেক বাংলাদেশির দেখা মেলে। ঢাকা থেকে আসা আনোয়ার হোসেন নিউমার্কেট ঘুরে ঘুরে সেরেছেন কেনাকাটা।

তিনি জানান, কলকাতায় এসছিলাম কাজে। শুক্রবার(৮ জুলাই) রওনা দেব ঢাকায়। তার আগে একটু কেনাকাটা। ঈদে তো নতুন বস্ত্র গায়ে দিতে হয়। কলকাতায় যখন আছি, সুযোগ ছাড়ব কেন বলুন। একই মত সাভারের বাসিন্দা সাবিনার। তিনিও এদিন রওনা দেবেন। তার মতে, অনেক আগেই আসতাম। তবে সমস্যা নেই, পদ্মাসেতু হয়ে গেছে। কম সময়ে বাসায় পৌঁছে যাব।

তবে এ সময় বাহারি নামাজি টুপি ও লুঙ্গির চাহিদা কলকাতায় সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সবের খুচরা ও পাইকারি মার্কেট কলকাতার বড় বাজারের অন্তর্গত নাখোদা মসজিদ সংলগ্ন জাকারিয়া স্ট্রিটে। এ সময় এ মার্কেটে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে বাংলাদেশি টুপি ও লুঙ্গির। নজর কাড়বেই তুরস্কের বাহারি টুপি। পাশাপাশি চাহিদা থাকে রান্নার বিভিন্ন মশলা, গ্রাইন্ডার মেশিন ও আনুষাঙ্গিক সরঞ্জামের। সে সবের দামও আয়ত্তের মধ্যে।

ফলে সবকিছু ভুলে এই মুহূর্তে প্রাক উৎসবের মেজাজে শহরবাসী। কলকাতা মানেই সাম্যের মধ্যে ঐক্য। প্রতিবারই পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে কলকাতায় ফুটে ওঠে এ ধরনের চিত্র। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, ৮ জুলাই, ২০২২
ভিএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।