এ মুহূর্তে ইন্টারনেট সেবাব্যয়ের গোলকধাঁধা এবং ধীরগতি সাধারণ মানুষকে ইন্টারনেট ব্যবহারের নিরুৎসাহিত করছে। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে দিন দিন অভিযোগ বাড়ছেই।
ইন্টারনেটকেন্দ্রিক এ সমস্যা আর সমাধান নিয়ে বাংলানিউজকে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন দিয়েছেন বিশেষ সাক্ষাৎকার। এ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম এবং মনোয়ারুল ইসলাম
একজন সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কাছে প্রতি বিট ব্যান্ডউইথ ন্যূনতম ১৪ থেকে ১৬টি স্তর অতিক্রম করে পৌঁছায়। ধাপে ধাপে ব্যান্ডউইথের পরিবহন ব্যয় আর সেবাব্যয়ের কারণে গতিহীন আর ব্যয়বহুল ইন্টারনেট সেবা পৌঁছাচ্ছে সাধারণ ব্যবহারকারীর কাছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ দুটি আইআইজির (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) মাধ্যমে বিদেশে থেকে ব্যান্ডউইথ ক্রয় করে। এদের একটি বিটিসিএল। অন্যটি ম্যাঙ্গো টেলিসার্ভিস। এ দুটি প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুর, ইতালি এবং ভারতের চেন্নাই থেকে সরাসরি ব্যান্ডউইথ ক্রয় করে।
এরপর এ দুটি প্রতিষ্ঠান ক্রয়কৃত ব্যান্ডউইথ দেশীয় ইন্টারনেট সেবাদাতার (আইএসপি) কাছে বিক্রি করে। পরে আইএসপিরা এ ব্যান্ডউইথ বিভিন্ন এলাকার ইন্টারনেট সেবাদাতা এবং সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে বিক্রি করে।
ইন্টারনেট বিপণনে এতগুলো স্তর বিন্যাস প্রসঙ্গে প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বাহিরের যে দেশ থেকে ব্যান্ডউইথ ক্রয় করা হচ্ছে তা প্রথমে সে দেশের ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে ওই দেশের ব্যাকহোলে পৌঁছায়। এই ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে ব্যাকহোলে ব্যান্ডউইথ পরিবহনের একটি নির্দিষ্ট খরচ যুক্ত হয়।
এ ব্যান্ডউইথ আবার ওই দেশের ব্যাকহোল থেকে বাংলাদেশের ব্যাকহোলে পৌঁছায়। এরপর তা কক্সবাজারে অবস্থিত ল্যান্ডিং স্টেশনে আসে। এ ব্যান্ডউইথ পরিবহনেও নির্দিষ্ট কিছু খরচ আছে। আবার কক্সবাজারের ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে বিএসসিসিএল এর বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিটিসিএল এবং ম্যাঙ্গো টেলিসার্ভিস ক্রয়কৃত ব্যান্ডউইথ গ্রহণ করে। ব্যান্ডউইথের এ পরিবহনের জন্য তারা বিএসসিসিএলকে নির্দিষ্ট অঙ্কের সেবাব্যয় প্রদান করে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠান দুটিকে আইআইজি লাইসেন্স ব্যবহারের কারণে বিটিআরসিকে রেভেনিউ শেয়ারিং ফি দিতে হয়।
বিটিসিএল এবং ম্যাঙ্গো টেলিসার্ভিস নিজেদের একটি নির্দিষ্ট মুনাফা রেখে এ ব্যান্ডউইথ আইএসপিদের কাছে বিক্রি করে। আইএসপিরা আবার নিজেদের মুনাফা রেখে সাধারণ জনগণের কাছে এ ব্যান্ডউইথ বিক্রি করে। অন্যদিকে জনগণের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছানোর জন্য লোকাল ডিস্ট্রিবিউশন লাইন সেবাদাতা ফাইবার অ্যাট হোম এবং সামিট টেলিকমিউনিকেশনকে আইএসপিরা নির্দিষ্ট সার্ভিস চার্জ প্রদান করে।
উল্লেখ্য, বিটিসিএল, ম্যাঙ্গো এবং লোকাল ইন্টারনেট বিপণনকারী লাইন সেবাদাতা এবং আইএসপিরা যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে এজন্য সরকারকে নির্দিষ্ট অঙ্কের ভ্যাট এবং ট্যাক্স প্রদান করতে হয়।
ইন্টারনেট সেবাব্যয় এখনও মধ্যবিত্ত গ্রাহকের নাগালের বাহিরে এ প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এতগুলো খরচ সমন্বয় করে জনগণের কাছে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছাচ্ছে। কাজেই ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যয় এই ধাপগুলোর উপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে শতকরা ১০ ভাগ ব্যান্ডউইথ চার্জ কমানো হলেও, এতগুলো বণ্টন স্তর পেরিয়ে ইন্টারনেট সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছায়। ফলে সাধারণ ব্যবহারকারীরা এর সুফল পুরোপুরিভাবে উপভোগ করতে পারছেন না। তবে এ মুহূর্তে বিটিসিএল ন্যূনতম ৩০০ টাকায় ১২৮ কেবিপিএস গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট প্যাকেজ সুবিধা দিচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে আরও বলেন, স্তরভিত্তিক দাম কমানো সম্ভব হলে সাধারণ জনগণও সরাসরি এর সুফল ভোগ করতে পারবেন। শুধু বিটিসিএল এবং বিএসসিসিএল দাম কমালে এর সুফল পাওয়া যাবে না। ইন্টারনেট সরবরাহের প্রতিটি ধাপেই দাম কমানো হলে সাধারণ জনগণ অপেক্ষাকৃত স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৯১২, অক্টোবর ২৬, ২০১০