ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

প্রতারক কোম্পানি বাংলালায়নের শাস্তি দাবি

মনোয়ারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৫ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৩
প্রতারক কোম্পানি বাংলালায়নের শাস্তি দাবি

ঢাকা: বাংলালায়নকে প্রতারক কোম্পানি হিসেবে চিহ্নিত করে শাস্তি দাবি করেছে তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের কর্মীরা। বাংলালায়নসহ ইন্টারনেট সার্ভিস নিয়ে প্রতারণা ও বিটিআরসির নিস্ক্রিয়তার প্রতিবাদে তারা মানববন্ধনও করেছেন।

আর বাংলালায়নের প্রতারণার শাস্তি দাবি করছে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা। বাংলালায়নের নেটওয়ার্ক সমস্যা, নিম্নমানের কাস্টমার সাপোর্ট, বারবার টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ।   বাংলালায়নের হয়রানির ওপর তৃতীয় ধারাবাহিক প্রতিবেদন।

প্রকৌশলী সীমান্ত আরিফ বাংলানিউজকে ফোনে রোববার সকালে জানিয়েছেন, গতকাল রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা অবধি বাংলালায়ন সংযোগ পাওয়া যাচ্ছিলো না। বাংলালায়নের হটলাইন নম্বর ০১১৯৮৯৮৯৮৯৮ ব্যস্ত করে রাখা ছিল। এরা মহাপ্রতারক কোম্পানি। প্রতিমাসে হয়রানির শিকার হচ্ছি। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমি বিটিআরসিতে অভিযোগ করবো। প্রয়োজনে মামলা করবো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইটি সোসাইটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইমরান বাংলানিউজকে বলেন, বাংলালায়ন কোন ধরনের অনুরোধ রাখেনা। সর্বশেষ প্রযুক্তি উৎসবেও এদের অংশগ্রহণ ছিলোনা। এরা শুধু টাকা বোঝে কিন্ত কোন সেবা বা দায়িত্ববোধের ধার ধারে না। এদের ব্যবসাটা এক ধরনের প্রতারণা।

তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের আহবায়ক জুলিয়াস চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, কোন সন্দেহ নেই বাংলালায়ন একটি প্রতারক কোম্পানি । এদের বিচার জরুরি। আমরা বাংলালায়নসহ অন্য প্রতারকদের শাস্তির দাবিতে ও বিটিআরসির নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে শনিবার মানববন্ধনও করেছি। প্রতারণা বন্ধ না করলে প্রয়োজনে আমরা বাংলালায়নের বিরুদ্ধে আরও আন্দোলন করবো। কয়েকটি কোম্পানি মানুষকে ঠকালেও বাংলালায়ন সবচেয়ে বড় প্রতারক কোম্পানী। তারা স্পেকট্যামের  টাকাও ঠিকভাবে পরিশোধ করছেনা।

তিনি বলেন, গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা দেখেছি বাংলালায়ন নেটওয়ার্ক ঠিকভাবে দেয়না। সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দেয়না। ইন্টারনেটের কস্ট মডিউল নির্ধারণের ক্ষেত্রে আইএসপিগুলো প্রতারণা করে। বাংলালায়ন প্রতারণায় একধাপ এগিয়ে। বাংলালায়ন প্রতারণার চেষ্টা করলে তাদেরকে আইনের আওতায়  এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। প্রতারণার মাধ্যমে বাংলালায়নের মতো কোম্পানিগুলো ডিজিটাল স্লোগানের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তারা কোনভাবেই ডিজিটাল বাংলাদেশ চায় না।

আর গ্রাহকদের সবসময় হয়রানি করে ও প্রতারণা করে চললেও বিটিআরসি কাদের স্বার্থে নিষ্ক্রিয় থাকছে তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম অনুসঙ্গ ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়া প্রয়োজন তাই অবিলম্বে প্রতিটি গ্রামে স্বল্পমূল্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট দিতে হবে। এসব কোম্পানি গ্রাহকদের ঠকানোর জন্য অসংখ্য প্যাকেজ বাজারে ছেড়েছে। তারা সময়মত ও সঠিকভাবে গ্রাহক সেবা দেয় না। কল সেন্টারে সেবার জন্য ফোন করা হলে সহজে হিউম্যান রেসপন্স করে না। ১ ঘণ্টা পর্যন্ত মিউজিক শুনিয়ে এবং অপেক্ষা করতে বলে চার্জ কেটে নেয়।

ইন্টারনেট সার্ভার ডাউন থাকলেও গ্রাহকদের জানার সুযোগ দেয় না উল্লেখ করে বলেন, বাংলালায়নসহ ওয়াইম্যাক্স কোম্পানি; ব্রডব্যান্ড ও টেলিকম আইএসপিগুলোর ৪/৫ দিন পর্যন্ত সার্ভিস বন্ধ থাকলেও মাসিক প্যাকেজ হিসেবে ব্যবহারকারী গ্রাহকদের ওই সময়ের ডাটা বা তার মূল্য আত্মসাত করে। বাংলালায়ন চলতি মাসের ১৪ এবং ১৯ তারিখ টানা চব্বিশ ঘণ্টা করে তাদের সার্ভিস বন্ধ করে রেখে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে। ওই সময় বাংলালায়ন তাদের কাস্টমার কেয়ারের নাম্বার ০১১৯৮৯৮৯৮৯৮ নাম্বারটিও অকেজো করে রাখে। তিনি বলেন, বিটিআরসি এসব জেনেও কাদের স্বার্থে নিষ্ক্রিয় থাকছে তা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে।

কমমূল্যে ইন্টারনেট সেবা ও এসব প্রতারক কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর  বরাবর স্মারকলিপি দেবো বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলালায়নের শাস্তি কি?

বাংলালায়নের ব্যপারে মহাজাগতিক পাগল নামের এক ব্লগার লিখেছেন, আমার মত অনেক ব্লগারেরই দুই জীবন । একটা রিয়েল লাইফের আরেকটা ভার্চুয়ালের । ভার্চুয়াল লাইফের প্রাণ শক্তি ইন্টারনেট । অন্যান্য অপারেটর এর নেট যারা ব্যাবহার করেন তাদের কথা জানি না কিন্তু যারা বাংলালায়ন ইউজার তারা যে আজ ভার্চুয়াল জাহান্নামে আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আমি অনেক দিন থেকে ব্রডব্যান্ড ইউজার । কিন্তু নতুন এলাকায় শিফট হওয়াতে অচল থাকা বাংলালায়ন (!) মডেমটা সচল করি । সচল করতে গিয়ে ও সম্মুখীন হতে হয়েছে অনেক ঝামেলার । কাস্টমার কেয়ার তো নয় যেন কাস্টমার হ্যাম্পার খুলে বসে আছে ।

তিনি লিখেছেন, মাসের এক তারিখ কানেকশন নিলাম । কানেকশন নেওয়ার পর থেকে শুরু হল ভার্চুয়াল অত্যাচার । ইন্টারনেট নিয়ে যত ভাবে টাল বাহানা করা সম্ভব সব উপায় জানা আছে এই বাংলা লায়নের । গুগলের পেইজ ওপেন হয় না । ইউটিউবে যেতে পারি না । ফেসবুকে নিজেদের গ্রুপে যে একটু আস্যাইনমেন্ট নিয়ে কথা বলবো সেই উপায় নেই । বাংলালায়ন সম্পুর্ন পঙ্গু একটা ইন্টারনেট প্রভাইডার ।

জুন মাসের একুশ দিনে ঠিক মত ৫ জিবিও ডাউনলোড করতে পারলাম না । অথচ আমি নিয়েছি আনলিমিটেড কানেকশন । শুরুতে ভেবেছিলাম সমস্যা বুঝি শুধু আমার । কিন্তু বেশ কিছু পত্র পত্রিকায় বাংলা লায়ন এর বিড়ম্বনা নিয়ে নিউজ দেখার পর সিউর হলাম পুরা সিস্টেমে সমস্যা । আর কাস্টমার কেয়ারে ফোন করলে গেলমান দের কথা শুনে মনে হবে তাদের সব ঠিক আছে শুধু আপনার মডেমে ই প্রব্লেম । একটু উইন্ডোজ সেট-আপ দিলেই নাকি সব ঠিক হয়ে যাবে ।

পত্র পত্রিকায় প্রতিদিন কত প্রতারণার খবর পড়ি , কত চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করা হয় । বাংলালায়ন যে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন লোভনীয় প্যাকেজ এর কথা বলে নিম্ন মানের সেবা দিচ্ছে , তাদের প্রচারিত বিজ্ঞাপনের সাথে যে তাদের সেবার কোন মিল নাই , সেটা কি প্রতারণা না ? প্রতারকদের শাস্তি কি ?

বেশিরর ভাগ সময় ই মডেমে কানেকশন পায় না । আর কানেকশন পেলেও আপলোড , ডাউনলোড জিরো জিরো । স্পিড শূন্য । রাতের বেলা  ওয়েবসাইট লোডিং করতে করতে টাইম আউট হয়ে যায় । মশারির ভেতর মডেম নিয়ে ঢুকলে নেটওয়ার্ক থাকে না । মডেমের সামনে কেউ এসে দাড়ালে নেটওয়ার্ক চলে যায় । জানালা বন্ধ রাখলে নেটওয়ার্ক থাকে না । ল্যাপটপ নিয়ে এই রুমে যাই , ওই রুমে যাই , জানালার খুব কাছে বসে থাকি , মাঝে মাঝে মডেমে তাল পাখার বাতাস দেই - হেন কাজ নেই করি না ।

নেটওয়ার্ক এর এতই বেহাল দশা যে শেষ পর্যন্ত একটা ইউএসবি এক্সটেনশন কেবল কিনলাম । কেবলে মডেম লাগিয়ে বাইরে রাখলে কোন দিনই কানেকশন পায় না যদিও ল্যাপ্টপ স্ক্রিন এ ফুল নেটওয়ার্ক শো করে ।

টাকার কি কোনো দাম নাই নাকি ? ১হাজার ১০০ টাকা দিয়ে লাইন নিলাম , ৩০০ টাকার এক্সটেনশন কেবল কিনলাম । কিছুতেই তো কিছু হয় না । এত অপচয় কারো সহ্য হয় ? তাই একটা উপায় বের করেছি । ৫ মিটারের যেই এক্সটেনশন কেবল টা কিনেছি সেটা সিলিঙ্গে বেধে নিজেই ঝুলে পড়ি । অন্তত এক্সটেনশন কেবল এর একটা গতি হবে ।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, আর ঝোলার আগে সুইসাইড নোটে তোদের বাংলালায়ন কোম্পানির নাম লিখে যাব । এতে যদি কিছু হয় । তবে এতেও কাজ হবে বলে মনে হয় না । তাই এই মাস ই শেষ । আর ঝাঁটা মারার আগে তোদের কোম্পানির জন্য সাংসদ শাম্মি6 আপার সেই গালিটা বরাদ্দ করে গেলাম । বাংলা লায়ন নিপাত যাক ।

মোমের মানুষ নামের এক ব্লগার বলেছেন: বাংলালায়নকে হলুদ কার্ড দেখাইয়া দিয়েছি আগেই। হাতে কিছু টাকা আসলে এবার লাল কার্ড দেখাবো।

সাইফুল আজীম বলেছেন, আমার আগের অফিসের মডেম আমার নামে নেওয়া। দুই দিন পরপর স্যরি ওয়ালা মেসেজ পাই আর অফিসওয়ালাদের কথা ভাবি।

ড. জেকিল বলেছেন: "বাংলাবিলাই" এর কাস্টমার কেয়ারে এমন ভাব নেয় যেনো মডেম কিনে মস্ত বড় কোন পাপ করে ফেলেছি, আর স্পিড কম পাওয়া যেন আমাদের নৈতিক অধিকার।

সপ্নাতুর আহসান বলেছেন, বাংলালায়ন বি.লাই(য়)ন। বাংলার মাটি থেকে প্রতারক বাংলালায়নকে উৎখাত করা হোক ।

রাইসুল সাগর বলেছেন, আল্লাহ আমাকে বাঁচাইছে, ভাবছিলাম কিনবো।

জাহিদ মজুমদার বলেছেন,  এতগুলো মন্তব্য পড়ার পর বাংলালায়নের ব্যাপারে আমার আর ভাষা নাই। তবে শাম্মি আপার গালিটা আমিও দিয়া গেলাম বাংলার বিলাইরে।

মোহাম্মদ আলমগীর খান বলেছেন,  বাংলালায়নের  এই অবস্থা ও চলার গতি দেইখা আমার মনে হইল তারা এই নামের অসম্মান করছে।

রাতুল রেজা বলেছেন, `বাংলালায়ন ছুরে ফেলে দিলাম`।

ফেরারিও বলেছেন: বাংলালায়নের মডেম নিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে এই রুমে যাই , ওই রুমে যাই , জানালার খুব কাছে বসে থাকি , হেন কাজ নেই করি না ।

আশরাফুল হক বলেছেন, গত কয়েকদিন আগে কিনছি। ভুলই করলাম নাকি?

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৩
এমআইআর/সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।