ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

নিউ মিডিয়ার থ্রিসি তত্ত্বের ‘বাংলানিউজ’

সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৩
নিউ মিডিয়ার থ্রিসি তত্ত্বের ‘বাংলানিউজ’

১ জুলাই, ২০১০। বাংলাদেশের অনলাইন সংবাদমাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে ‘বাংলানিউজ’।

পুরো সপ্তাহজুড়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টার তাৎক্ষণিক বার্তা জানাতে নামের সঙ্গে জুড়ে যায় টোয়েন্টিফোর ডটকম। এ দুয়ে মিলে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকম। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে সক্রিয় অনলাইন সংবাদমাধ্যম।

এরই মধ্যে বাংলানিউজ দেশি সংবাদমাধ্যমে ‘নিউ মিডিয়া’ হিসেবে নিজের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছে। এমনকি নিউ মিডিয়ার থ্রিসি শর্তও পূরণ করেছে বাংলানিউজ। থ্রিসির তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় পরে আসা যাক। এবারে বাংলানিউজ সৃষ্টি নিয়ে খানিকটা সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া যাক।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমের এডিটর-ইন-চিফ আলমগীর হোসেন। বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন সংবাদ সংস্থা ‘বিডিনিউজ’ তার ভাবনারই বাস্তব রূপ। এ দুটি সংবাদমাধ্যমের তুলনামূলক চিত্রে বাংলানিউজের শুরুটা স্বভাবতই অনেক এগিয়ে। তারুণ্যনির্ভর একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমের জন্য দ্রুত একটি নিবেদিত কর্মী বাহিনী তৈরি করা মোটেও সহজ ছিল না।

অনলাইন সংবাদমাধ্যমের জন্য দেশে খুব বেশি দক্ষ হাত তৈরি নেই। এটা এডিটর-ইন-চিফ আলমগীর হোসেন জানতেন। তাই অপেক্ষাকৃত সম্ভাবনাময় তরুণদের নিয়েই তিনি এ ঝুঁকি নেওয়ার চিন্তা করেন। আর স্বল্প সময়ের ব্যবধানে সুদক্ষ কর্মীও জড়ো করেন তিনি। পাস্থপথের বসুন্ধরা সিটির গ্রাউন্ড ফ্লোরে শুরু হয় বাংলানিউজের ক্যাম্প অফিস।

প্রতিদিনই আগ্রহী তরুণদের ভিড় লেগেই থাকত বাংলানিউজের ক্যাম্প অফিসে। বলতে গেলে শুরুতে পুরো দল গঠনে নবীন এবং প্রবীণদের সমন্বয় করা হয়। এরপর অভিজ্ঞদের অধীনে দেওয়া হয় তরুণ কর্মীদল। এদের অনেকেরই অনলাইন সংবাদমাধ্যমে কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না। তবে আগ্রহটাই এখানে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। আর তা দিয়েই তৈরি বাংলানিউজের তরুণ কর্মী দল।

২৭ জানুয়ারি বাংলানিউজের ক্যাম্প অফিসের সূচনা। এরপর ১ জুলাই পাস্থপথের বসুন্ধরা সিটির জমকালো অফিস সজ্জার মধ্যে দিয়ে বাংলানিউজ আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। সব মিলিয়ে ঢাকার অফিসে শতাধিক সম্ভাবনাময় কর্মী বাহিনীর একটি দল নিয়েই যাত্রা শুরু করে বাংলানিউজ।

এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক তালিকায় (অ্যালেক্সা) দেশি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে তৃতীয় অবস্থানে আছে বাংলানিউজ। অন্য দুটি শীর্ষ সংবাদমাধ্যমের তুলনায় বয়সে নবীন এবং মাত্র তিন বছরেই এ অর্জন মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু বাংলানিউজ এ পথ অতিক্রম করেছে। আর তাতে সফলতাও এসেছে। এজন্য অনেক চড়াই-উতরাই পার করতে হয়েছে বাংলানিউজকে।

আসলে নিউ মিডিয়া বলতে শব্দ, লেখা, ছবি আর ভিডিওচিত্রের সংমিশ্রণকে বুঝায়। তবে প্রথম শর্তই হচ্ছে তা হতে হবে তাৎক্ষণিক। এসবের প্রতিটি মাধ্যমে বাংলানিউজ তার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আলোচনায় এসেছে। দ্রুত সংবাদ পরিবেশনে কিছু ভুলক্রটি যে হয়নি, তা নয়। তবে অনলাইন সংবাদমাধ্যমে এ পরিবর্তন প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মতো সময়সাপেক্ষ নয়। অর্থাৎ দ্রুত সংবাদ সংশোধনেও বাংলানিউজ এগিয়ে।

এরই মধ্যে সময়ের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে নিজেকে সমৃক্ত করে বিশেষ আয়োজন আর পরিকল্পনা নিয়ে অনলাইন সংবাদে দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছে এ গণমাধ্যমটি। এর অর্থে গণমাধ্যম বলতে যা বোঝায় তা পূরণে বাংলানিউজ সব সময়ই সচেষ্ট ছিল। যেকোনো ঘটনার বিশ্লেষণমূলক মন্তব্য প্রতিবেদন বাংলানিউজ তার শীর্ষ ৬টি খবরের মধ্যে তুলে ধরেছে।

পাঠকের দৃষ্টিতে তাই বিশেষ ঘটনা মানেই বাংলানিউজের সরব উপস্থিতি। তা কোনো দুর্ঘটনাই হোক, কিংবা উত্তপ্ত রাজনৈতিক সমাবেশই হোক না কেন বাংলানিউজ সেখানে উপস্থিত। এসব ঘটনায় বাংলানিউজ দ্রুততার সঙ্গে ছবি, সংবাদ, মন্তব্য, বিশ্লেষণ এবং ভিডিওচিত্র সম্প্রচার করেছে।

শুধু শহুরে বা ঢাকাকেন্দ্রিক আবহ নয়, জেলা, উপজেলা এমনকি থানাভিত্তিক ঘটনাকেও সমভাবে গুরুত্ব দিয়েছে তা জাতীয় গণামাধ্যমে তুলে ধরেছে বাংলানিউজ। তাই ইন্টারঅ্যাকটিভ অর্থাৎ দ্বৈতমাধ্যম পাঠক-লেখকের সমন্বয়ে এখানে সংবাদ উপস্থাপন করা হয়।

এবারে আসা যাক নিউ মিডিয়ার ‘থ্রিসি’ তত্ত্বে। কানেক্ট, কোলাবরেট এবং ক্রিয়েট। কানেক্ট অর্থাৎ বন্ধু, সমাজ এবং পরিবারের সঙ্গে মিলিয়ে পূণাঙ্গ গণমাধ্যম হয়ে ওঠা। এতে বাংলানিউজ মানবিক বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছে সব সময়ই।

কোলাবরেট। অর্থাৎ সামাজিক গণমাধ্যম। চারপাশে যাই ঘটে তা ঘটনা। আর এসব ঘটনার সঙ্গে আমাদের কারো না কারো সম্পৃক্তা তো থাকেই। এ ঘটনাগুলোকে সমন্বয় করলেই তা হয়ে ওঠে সংবাদ। এমনকি কখনও কখনও শীর্ষ সংবাদ। এ সমন্বয়গুলোকেই কোলাবরেট বলে। এটি নিউ মিডিয়ার অন্যতম শর্ত।

একেবারে শেষের ‘সি’ এর অর্থ ক্রিয়েট। অর্থাৎ কোনো কিছুর সৃষ্টি। তা হতে পারে কনটেন্ট, সার্ভিস, কমিউনিটি বা যোগাযোগের শীর্ষ গণমাধ্যম। আর নিউ মিডিয়ার পাঠক হতে তেমন কিছুই প্রয়োজন হয় না। কম্পিউটার কিংবা মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই হয়ে উঠতে পারেন নিউ মিডিয়া একজন প্রত্যক্ষ এবং সক্রিয় পাঠক।

গতানুগতিক সংবাদমাধ্যমে ধরন বদলে এখন তাই নিউ মিডিয়ার চর্চা চলছে। এ ছাড়াও পরিবেশবান্ধব স্লোগানে প্রিন্টমাধ্যম মানেই পরিবেশের জন্য হুমকি। বিশ্বের বড় বড় এবং পুরোনো সংবাদপত্রগুলোও এখন ধীরে ধীর প্রিন্ট কপি কমিয়ে সার্কুলেশন নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।

এ মুহূর্তে নিউ মিডিয়ার এ থ্রিসি তত্ত্বকে পূরণ করেছে বাংলানিউজ। অর্থাৎ বাংলানিউজ এখন দেশি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে নতুন ধারণা দিয়েছে। হয়ে উঠেছে পরবর্তী প্রজন্মের অনলাইন মিডিয়ার মডেল। দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক বাড়ছে। একই যুক্তিতে বাড়ছে বাংলানিউজের পাঠক।

দেশের প্রতিটি ইন্টারনেট ভক্তকে পাঠক করতে বাংলানিউজ এখন নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। নিজেকে করে তুলছে আরও সমৃদ্ধ এবং তথ্যনির্ভর। সময়ের প্রতিটি প্রয়োজনে বাংলানিউজ নিজেকে মেলে ধরতে এগিয়ে যাচ্ছে।

বাধা থাকবেই, তবুও এগিয়ে যাবে বাংলানিউজ। এমন প্রত্যাশা প্রতিটি বাংলানিউজ পাঠকের। আর প্রতিটি পাঠকই নিউ মিডিয়ার প্রাণশক্তি। একই সূত্রে বাংলানিউজেরও প্রাণশক্তি।

এরই মধ্যে অনলাইন তারকা আড্ডা, কবিতাতর্ক, ব্লগ আড্ডা, মিডিয়া পার্টনার এবং ফটো কনটেস্টের মধ্য দিয়ে নিজেকে সব অঙ্গনেই মেলে ধরতে চেষ্টা করছে বাংলানিউজ। আর তাতে বিপুল পাঠক সাড়াও মিলেছে। এ ভিন্ন ধরনের গণমাধ্যমে পাঠকের সাড়াতেই বাংলানিউজ এতদূর এগিয়েছে। আর সামনে অবিরাম পথ চলার অঙ্গীকার করছে।

বাংলাদেশ সময় ১৫৫১ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।