সমস্যা নেই আপনার দুর্ভাবনা দূর করতে রাজশাহীর তরুণ উদ্ভাবকরা তৈরি করেছেন ‘হিউম্যান সেন্সর’। আপনার অবর্তমানে বাড়ি দেখভাল করবে এ যন্ত্রটিই।
রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) তরুণ শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবন করেছেন এ অত্যাধুনিক ডিভাইস। রাজশাহী কলেজ মাঠে আয়োজিত ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় সেই ডিভাইসটি নিয়ে হাজির হয়েছেন তারা। ক্ষণে ক্ষণে স্টলের সামনে আসা দর্শনার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন যন্ত্রটির সঙ্গে।
তরুণ শিক্ষার্থীদের নতুন নতুন উদ্ভাবন দেখতে শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) ছুটির দিন মেলায় দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। বিশেষ করে আকর্ষণীয় উদ্ভাবন গুলোকে ঘিরে এগুলো সম্পর্কে জানতে দর্শনার্থীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। এর মধ্যে মেলার ৪৮নং স্টলের হিউম্যান সেন্সর দেখতে জট বাধছেন কৌতূহলীরা।
স্টলে দাঁড়াতেই ফিরোজ মোল্লা নামের টিসিসি তরুণ উদ্ভাবকদের একজন বাংলানিউজকে জানালেন গৃহকর্তার অনুপস্থিতিতে কীভাবে কাজ করবে তাদের তৈরি এ ইলেকট্রনিক হিউম্যান সেন্সর।
টিটিসি শিক্ষার্থী ফিরোজ বলেন, তাদের তৈরি এ হিউম্যান সেন্সরটি এমন একটি স্থানে বসাতে হবে যেখান থেকে সবকিছুই টের পাওয়া যায়। সাধারণত বাড়ির প্রবেশ পথেই এটি স্থাপনের জন্য সেরা স্থান। মূলত এখান দিয়ে সবাইকে ঢুকতে ও বের হতে হবে। তবে প্রবেশ পথের গোপন স্থানে এটি স্থাপন করা হলেও এক স্থানে বসেই পুরো বাড়ির খোঁজ-খবর রাখবে তাদের উদ্ভাবিত হিউম্যান সেন্সর।
বাড়ির মূল বৈদ্যুতিক সংযোগের সঙ্গে যুক্ত করা থাকবে এটি। এ থেকে কেউ বাড়ির মধ্যে ঢুকে লাইট, ফ্যান, টিভি, ফ্রিজসহ যে কোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্র অন করলেই সিগনাল চলে যাবে গৃহকর্তার মোবাইল ফোনে। কানের পর্দা ফাটানো ঝাঁঝালো অ্যালার্ম বেজে উঠবে বাড়ি জুড়ে। এ ক্ষেত্রে বাড়িতে থাকা অতি সুরক্ষিত কম্পিউটার থেকেও যদি কেউ কোনো ডাটা বা তথ্য চুরি করার চেষ্টা করে তবে সঙ্গে সঙ্গে তার সিগনালও চলে যাবে গৃহকর্তার মোবাইলে। এজন্য কেবল বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তার মোবাইল নম্বর সিস্টেমে সেট করে দিয়ে হিউম্যান সেন্সর ডিভাইসটি অন করে যেতে হবে।
কোনো কারণে যদি বিদ্যুৎ চলে যায় বা দুষ্কৃতিকারীরা বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়ে বাড়িতে ঢুকে তাতেও সমস্যা নেই। ডিভাইসের সঙ্গে থাকা স্পাই ব্যাটারি টানা ১২ ঘণ্টা তার কার্যক্রম সচল রাখতে ব্যাকআপ দেবে।
এছাড়া কেউ বাড়িতে ঢুকলে বা বের হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার মোবাইল নম্বরে কল চলে যাবে। কলটি রিসিভ করলেই হিউম্যান সেন্সরের অটোমেটিক সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত থাকা অপর মোবাইল ডিভাইসের কল্যাণে বাড়িতে অবস্থানকারীর কথা বা গলার শব্দও শুনতে পারবেন গৃহকর্তা। ওই সময় তাৎক্ষণিকভাবে তার প্রতিবেশী বা নিকট আত্মীয়ের সহযোগিতায় নিজের বাড়ির সম্পদ রক্ষা করতে পারবেন।
ফিরোজ মোল্লা জানান, টিটিসির প্রশিক্ষকদের সহযোগিতায় অনেক গবেষণা চালিয়ে তিনিসহ আরও পাঁচজন শিক্ষার্থী মিলে হিউম্যান সেন্সরটি উদ্ভাবন করেছেন। অল্প খরচের মধ্যে এ ছোট্ট ডিভাইসটি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি ও বাজারজাত করা হলে মানুষের অনুপস্থিতিতে তা পুরো বাড়ির নিরাপত্তা সুরক্ষা দিতে পারবে। এটি তৈরি করতে সব মিলিয়ে তাদের প্রায় ছয় হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
তরুণ উদ্ভাবক হিসেবে তারা এটি তৈরি করতে পেরে খুবই খুশি বলেও জানান ফিরোজ মোল্লা। এটি তৈরিতে নির্দেশনা ও পরামর্শের জন্য টিটিসির প্রশিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। ভবিষ্যতে তারা এ ডিভাইসটি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ের উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায়ও অংশ নেবেন বলেও জানান ফিরোজ।
এদিকে মেলার ওই স্টলে যাওয়া হারুন-অর-রশিদ নামের মহানগরীর সুলতানাবাদ এলাকার এক অধিবাসী বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস খুবই যুগোপযোগী। ডিভাইসটি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি ও বাজারজাত করা হলে অনেকেরই উপকারে আসবে। এজন্য টিটিসিসহ এমন তরুণ উদ্ভাবকদের পৃষ্ঠপোষকতা দিতে সরকারের কাছে দাবিও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৭
এসএস/আরআইএস/এমজেএফ