ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

মহাকাশে বাংলাদেশের নতুন দিগন্ত ‘ব্র্যাক অন্বেষা’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৭
মহাকাশে বাংলাদেশের নতুন দিগন্ত ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ ন্যানো স্যাটেলাইট ‘ব্র্যাক অন্বেষা’-ছবি-দীপু মালাকার

ঢাকা: মহাকাশ গবেষণায় বাংলাদেশ এগোলো আরও একধাপ। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের পর বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর তৈরি ন্যানো স্যাটেলাইট ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ মহাজগতে খুলছে নতুন দিগন্ত। কৃত্রিম এ উপগ্রহটির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টির হাত ধরে বাংলাদেশ সফল যাত্রা শুরু করতে চলেছে মহাকাশের পথে। ন্যানো স্যাটেলাইট ‘ব্র্যাক অন্বেষা’র এখন শুধু ওড়ার অপেক্ষা।

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) জাপানের কিতাকিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (কেআইটি) থেকে নিজ শিক্ষার্থীদের তৈরি ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ গ্রহণ করেছেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির উপাচার্য সৈয়দ সাদ আন্দালিব। ন্যানো স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

 

জাপানের কিতাকিউশু থেকে বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাখালী ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠানটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি দেখানো হয়।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথমেটিকস অ্যান্ড ন্যাচারাল সায়েন্স বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. জিয়াউদ্দিনের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, বাংলাদেশে জাপান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি তোশিয়ুকি নোগুচি, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের (স্পারসো) সদস্য ড. হাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

ভিডিও কনফারেন্সে জাপান থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়েরে উপাচার্য। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন কেআইটি-এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ইউজি অই ও ল্যাবরেটরি অব স্পেসক্রাফট এনভায়রনমেন্ট ইন্টারাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিচালক মেংগু চো। মহাকাশে উৎক্ষেপণের আগে এটিই ছিল বাংলাদেশে ব্র্যাক অন্বেষা দেখার শেষ সুযোগ।

 মহাকাশে বাংলাদেশের নতুন দিগন্ত ‘ব্র্যাক অন্বেষা’-ছবি-দীপু মালাকারসৈয়দ সাদ আন্দালিব বলেন, এটি একটি ছোট্ট পদক্ষেপ। কিন্তু অনেক বড় যাত্রার শুরু। এই ন্যানো স্যাটেলাইট নির্মাণের মাধ্যমে প্রমাণ হলো বাংলাদেশ শুধু কর্মী নয়, নির্মাতাও। আমরা প্রযুক্তিতেও অনেক দূর এগিয়ে গেছি।   

স্যাটেলাইটটির নকশা তৈরি, উপকরণ সংগ্রহ থেকে শুরু করে তৈরির সব কাজই করেছেন ব্র্যাকের তিন শিক্ষার্থী রায়হানা শামস্ ইসলাম অন্তরা,  আবদুল্লা হিল কাফি ও মাইসুন ইবনে মনোয়ার। তারা  ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল (ইইই) বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে  জাপানের কেআইটি’তে এখন স্নাতকোত্তর করছেন।

এই প্রকল্পের প্রধান মো. খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, মাত্র ১০ ইঞ্চির এ কৃত্রিম উপগ্রহটি যোগাযোগ ও উন্নয়ন কাজে সাহায্য করবে। এটা পৃথিবী থেকে ৪শ কিলোমিটার ওপরে থাকবে। ব্র্যাক অন্বেষার পৃথিবীর চারপাশ প্রদক্ষিণ করে আসতে সময় লাগবে ৯০ মিনিট। এটি বাংলাদেশের উপর দিয়ে দিনে চার থেকে ছয়বার উড়ে যাবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ন্যানো স্যাটেলাইট তৈরি বা উৎক্ষেপণের কাজ  জাপানে হলেও বাংলাদেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনটি নির্মাণে কাজ করছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক দল শিক্ষার্থী। এরা হলেন- মোজাম্মেল হক, সানন্দ জগতি, বিজয় তালুকদার ও আইনুল হুদা।

এই চার শিক্ষার্থীর প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে স্টেশন নির্মাণে সহায়তা করছে স্পারসো। স্টেশনটি থেকে দিনে ছয় মিনিট ব্র্যাক অন্বেষার সংগ্রহ করা তথ্য নামানো যাবে।

 মহাকাশে বাংলাদেশের নতুন দিগন্ত ‘ব্র্যাক অন্বেষা’-ছবি-দীপু মালাকার  উপাচার্য জানান, মহাশূন্যের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, দুর্যোগকালীন জরুরি সংকেত, সমুদ্রসীমা ও কৃষি পরিস্থিতির ছবি পাঠাবে এ স্যাটেলাইট। সে অনুযায়ী নগরায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ সহজ হবে।

স্যাটেলাইটটি নির্মাণে কয়েক কোটি টাকা খরচ হলেও এর সফলতা নির্ভর করছে আরও বেশি খরচের উপর। এ কাজে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেরও সহায়তা চান তিনি।

চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উদ্বোধন করতে যাচ্ছে জানিয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, তার আগে এই ন্যানো স্যাটেলাইট নির্মাণ বাংলাদেশের জন্য আরেকটি সাফল্য।

বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু-২ ও বঙ্গবন্ধু- ৩ নামে আরও দুটি স্যাটেলাইট নির্মাণের কাজ করছে জানিয়ে তিনি ব্র্যাক অন্বেষার তিন নির্মাতাকে এই দলে যোগ দেওয়ার আহবান জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৭

জেপি/আরআর/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।