এছাড়া কপিরাইট লঙ্ঘন করে পত্রিকা বা অনলাইনসহ বিভিন্ন লেখা কপি করা হচ্ছে। শিল্পী বা সত্ত্বাধিকারীদের সম্মানে এসব বন্ধে প্রস্তাবিত রয়েছে একটি আইন।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার ভবনের অডিটোরিয়ামে ‘সমকালীন বিশ্বে কপিরাইট ও ডিজিটাল প্লাটফর্মে বিকাশ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিশ্ব কপিরাইট দিবস উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস সেমিনারটির আয়োজন করে।
সেমিনারে জানানো হয়, কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের আওতাভুক্ত বিষয়সমূহ হলো- সাহিত্য, গবেষণা তথ্য, কম্পিউটার, সফটওয়্যার, ডাটাবেজ, মোবাইল অ্যাপস, কম্পিউটার গেইম, সংগীত, রেকর্ড-(অডিও-ভিডিও), ইমেইল, ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, বেতার ও টেলিভিশন সম্প্রচার, চলচ্চিত্র, নাটক, কার্টুন, অ্যানিমেশন, বিজ্ঞাপন (ভিডিও, অডিও, পোস্টার, বিলবোর্ড সহ অন্যান্য) স্লোগান, থিম সং, ফেসবুক ফ্যানপেজ, স্থাপত্য, নকশা, ফটোগ্রাফ, স্কেচ, ভাস্কর্য, প্রিন্টিং সহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম এবং লোক সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি ইত্যাদি। উল্লেখিত বিষয় সমূহের প্রণেতা হিসেবে মৌলিক কর্মের কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন এবং সম্পাদনকারী হিসেবে আনুষঙ্গিক অধিকার সুরক্ষায় রিলেটেড রাইট রেজিস্ট্রেশন করা যায়।
বক্তারা বলেন, কপিরাইটের মূলত দু’টি উপাদান- একটি ভিডিও অপরটি কনটেন্ট। ভুল অথবা মালিকের অনুমতি না নিয়েই এগুলো সম্প্রচার করা হচ্ছে। সত্ত্বাধিকারী কোনো মূল্যায়ন ও অর্থনৈতিক ভাবে উপকৃত হচ্ছে না। কপিরাইট আইনটি প্রস্তাবিত রয়েছে। জাতীয় সংসদে পাস হওয়া জরুরি। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য রক্ষা করতে পারবো।
অন্যের সৃষ্টি চুরি করা বা অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে উল্লেখ করে বক্তারা আরও বলেন, কপিরাইট আগে লেখালেখির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন তার ব্যাপ্তি বিশাল। এ বিশাল ব্যাপ্তিতে কপিরাইটের অভাবে এসব সৃষ্টির শিল্পীরা অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছে। অনেক ভালো মানের সৃষ্টি দেশ ও জাতিকে উপহার দেওয়ার পরও অমানবিক জীবনযাপন করতে হয়েছে শেষ জীবনে। ইউটিউবসহ গুগলেও বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট ও ভিডিও আপলোড হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে সত্ত্বাধিকারীরা যদি কপিরাইট করিয়ে রাখেন তাহলে এসব পরিস্থিতির অবসান হবে। কেননা সরকারের কপিরাইট অফিস এক্ষেত্রে সব ধরনের সেবা দিয়ে থাকে।
সরকারের কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার অব কপিরাইট জাফর রানা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। এছাড়া সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নিজাম উদ্দিন, আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদফতরের মহাপরিচালক দিলীপ কুমার সাহা, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন এডিটিং বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক খান মাহাবুব, এলসিএসসিএফ (সিএনও)-এর সভাপতি ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন প্রমুখ।
এ সময় কপিরাইট অফিসের পক্ষ থেকে কপিরাইট এ বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননা তুলে দেওয়া হয় চারটি প্রতিষ্ঠানকে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এ-টু-আই) প্রকল্প, ঈপ্সিতা কম্পিউটার প্রাইভেট লিমিটেড, কাঠের গুড়া থেকে তেল তৈরি করে কপিরাইট নেওয়া আনোয়ারুল আজিম খান এবং লাইফ টেকনোলজি। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এ সব সম্মাননা তুলে দেন।
এর আগে বছরে মাত্র ৫৯৭টি কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন হতো। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ সংখ্যা ছিল প্রায় ১৬ হাজারেরও বেশি। তবে ব্যাপক প্রচারণা ও সচেতনতার দরুন গত বছর কপিরাইটের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৯৫টি তে। যেখানে ১৮৯টি গানেরও কপিরাইট নিশ্চিত করা হয়েছে। তাছাড়া খুব দ্রুত এবং ঝামেলাহীনভাবে কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করতে অনলাইন আবেদনের ব্যবস্থার জন্য ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। বর্তমানে মাত্র ৪০ দিনে কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৯
এমএএম/এসএইচ