ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

চিলির খনিশ্রমিকদের দুই মাসের অগ্নিপরীক্ষা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১০
চিলির খনিশ্রমিকদের দুই মাসের অগ্নিপরীক্ষা

কোপিয়াপো: চিলির উত্তরাঞ্চলের অ্যাটাকামা মরুভূমির একটি খনিতে দুর্ঘটনার পর আটকে পড়েন ৩৩ শ্রমিক। খনি দুর্ঘটনার ইতিহাসে এটি সবচেয়ে আলোড়ন সৃষিটকারী ঘটনা।



খনিতে আটকে থেকে শ্রমিকরা মুখোমুখি হয়েছেন অগ্নিপরীক্ষার। শুধু শ্রমিকরা নয় উৎকণ্ঠায় কাটাতে হয়েছে শ্রমিকদের স্বজন, সরকার এবং দেশবাসীকে। শ্রমিকদের উদ্ধার অভিযানের সংক্ষিপ্তসার উল্লেখ করা হলো।

৫ আগস্ট: সান্তিয়াগোর ৫০০ মাইল উত্তরে চিলির কোপিয়াপো শহরের কাছের একটি ছোট তামা ও সোনার খনির ২ হাজার ৫০ ফুট নিচের একটি গুহায় ৩৩ জন খনিশ্রমিক আটকে পড়েন।

এ দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর খনির মালিকানাধীন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কোম্পানিয়া মাইনেরা সান ইসতেবান প্রিমেরা এ বিষয়টি নিশ্চিত করে।

৬ আগস্ট: ঘটনার পর পরই খনিমন্ত্রী লরেন্স গোলবর্ন ইকুয়েডর সফর সংক্ষিপ্ত করে চিলিতে ফিরে আসেন এবং কোপিয়াপোর উদ্ধার তৎপরতার নেতৃত্ব দেন।

আটকে পড়া শ্রমিকরা মাটির নিচে আগে থেকেই অক্সিজেন, পানি এবং খাবার মজুদ করে রাখা একটি আশ্রয়ের সন্ধান পেয়েছেন বলে খনি কর্তৃপক্ষ ধারণা করেন এবং তাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়।  

৭ আগস্ট: বায়ু চালিত হাতলের মাধ্যমে উদ্ধারকর্মীরা নিচে নামার প্রথম চেষ্টা করেন। কিন্তু পথের মধ্যে নতুন করে আরেকটি গুহা ভেঙ্গে পড়ার পর তারা ফিরে আসতে বাধ্য হন।

এসময় কলম্বিয়ায় তার সফর সংক্ষিপ্ত করে প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরা দেশে ফিরে আসেন। তিনি খনির কাছে অবস্থান করা আটকে পড়া শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গ দিতে সেখানে যান।

৮ আগস্ট: আটকে পড়া শ্রমিকদের অবস্থান জানতে উদ্ধারকর্মীরা ৫ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের গর্ত খোঁড়ার কাজ শুরু করেন।

১১ আগস্ট: প্রেসিডেন্ট পিনেরা জাতীয় খনি নিয়ন্ত্রকের প্রধান সেরনাজিওমিনকে বরখাস্ত করেন। একইসঙ্গে খনির নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের জন্য পুরো প্রতিষ্ঠানটিকে ঢেলে সাজানোর অঙ্গীকার করেন।

১৯ আগস্ট: খনন যন্ত্র প্রথবারের মত মাটির সবচেয়ে গভীর পর্যন্ত পৌঁছায়। তবে খনি শ্রমিকদের কাছাকাছি যেতে ব্যর্থ হয়।

২২ আগস্ট: দিনের প্রথমভাগে খননযন্ত্র ২ হাজার ২৬০ ফুট গভীরে পৌঁছে এবং উদ্ধারকর্মীরা খনন যন্ত্রে টোকা দেওয়ার শব্দ শুনতে পান। আটকে থাকা শ্রমিকরা খননযন্ত্রের সঙ্গে ‘আশ্রয়স্থানে থাকা আমরা ৩৩ জন ভাল আছি’ লিখা একটি নোট সেঁটে দেন বলে ওইদিন বিকালে পিনেরা ঘোষণা করেন।      

এর একঘণ্টা পর উদ্ধারকর্মীরা প্রথমবারের মত খনি শ্রমিকদের ভিডিও ছবি প্রকাশ করেন। এতে যতটা আশা করা হয়েছিলো তাদের অবস্থা তার তুলনায় অনেক ভাল বলে দেখা যায়।

খনির অস্থিতিশীলতা এবং ২ ফুট ব্যাসার্ধের নতুন আরেকটি গর্ত খোঁড়াসহ উদ্ধারকাজে ৩-৪ মাস লাগবে বলে গোলবর্ন ও উদ্ধার খনন অভিযানের প্রধান আন্দ্রে সুগারেট জানান।  

২৩ আগস্ট: আশ্রয়স্থানে খাবার ও পানীয় মজুদ কমে যাওয়ার কারণে তাদের জন্য খাবার, পানি এবং ওষুধ দেওয়া হয়।

১৭ সেপ্টেম্বর: একটি উদ্ধার খনন যন্ত্র শ্রমিকদের কাছে পৌঁছায়। তাদের বের করে আনতে ছোট এ গর্তটির আকার বড় করার কাজ শুরু হয়।

৪ অক্টোবর: অক্টোবরের দ্বিতীয়ার্ধে শ্রমিকদের উদ্ধারের ঘোষণা দেন গোলবর্ন। উদ্ধারের পর তাদের দেওয়ার জন্য উপহার সংগ্রহের কাজ শুরু করেন তিনি। এর মধ্যে পেলের স্বাক্ষর করা জার্সি এবং পোপের আর্শীবাদ করা জপমালা আছে।  

৮ অক্টোবর: যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উদ্ধার পথ খনি শ্রমিকদের কাছে পৌঁছাবে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের উদ্ধার কাজ শুরু হবে বলে গোলবর্ন জানান।

৯ অক্টোবর: উদ্ধারকর্মীরা ২ হাজার ৫০ ফুটের উদ্ধার পথ তৈরির খনন কাজ শেষ করেন। কয়েকদিনের মধ্যে উদ্ধার কাজ শুরু হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

১১ অক্টোবর: শেষ মুহূর্তের আর কোনো দুর্ঘটনা এড়াতে উদ্ধারকর্মীরা উদ্ধার পথে ধাতব নল জোরদার করার কাজ বন্ধ করেন। একইসঙ্গে সফলভাবে উদ্ধার ক্যাপসুলের পরীক্ষা করেন। মঙ্গলবার রাত থেকে উদ্ধার কাজ শুরু হবে বলে ওইদিন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

১৩ অক্টোবর: একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রায় কাঁধের সমান উদ্ধার ক্যাপসুলের সাহায্যে আটকে পড়া ৩৩ জন খনি শ্রমিককে একে একে তুলে আনার কাজ শুরু হয় এবং সফলভাবে প্রথমজনকে তুলে আনার পর উদ্ধারকর্মী, আত্মীয়-বন্ধুরা হর্ষধ্বনি করে আনন্দ উল্লাস করেন।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।