ঢাকা, শনিবার, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

৩২ বছর বয়সে যোদ্ধা থেকে হিজবুল্লাহ প্রধান হন নাসরুল্লাহ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪
৩২ বছর বয়সে যোদ্ধা থেকে হিজবুল্লাহ প্রধান হন নাসরুল্লাহ

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর দীর্ঘদিনের শীর্ষ নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে বিমান হামলায় হত্যা করার দাবি করেছে ইসরায়েল। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক স্বীকারোক্তিও দিয়েছে সংগঠনটি।

শুক্রবার হত্যার শিকার হওয়ার আগ থেকে যোগাযোগহীন ছিলেন তিনি।

হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর বর্তমান বয়স ৬৪ বছর। তার জন্ম ১৯৬০ সালে। তিনি বৈরুতের পূর্বাঞ্চলীয় উপকণ্ঠের বুর্জ হামুদ এলাকায় বেড়ে উঠেছেন। তার বাবা আবদুল করিম ছিলেন সবজি বিক্রেতা। ৯ সন্তানের মধ্যে নাসরুল্লাহ ছিলেন সবার বড়।

১৯৭৫ সালে লেবানন গৃহযুদ্ধের মুখে পড়ে। হাসান নাসরুল্লাহ যোগ দেন শিয়া মুভমেন্ট ‘আমাল’-এ। কিছুদিন পর ইরাকের নাজাফে শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাটান তিনি। ১৯৮২ সালে আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আমাল থেকে বেরিয়ে যান নাসরুল্লাহ।

এরপর প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইসলামিক আমাল’। ইরানের বিপ্লবী গার্ডের সহায়তায় সামরিক ও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয় দলটি। একপর্যায়ে এই দলটিই আত্মপ্রকাশ করে ‘হিজবুল্লাহ’ হিসেবে।

১৯৮৫ সালে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে ‘ইসলামের প্রধান দুই শত্রু’ হিসেবে আখ্যা দেয় হিজবুল্লাহ। একইসঙ্গে ইসরায়েলকে ধ্বংস করার ডাকও দেয় সংগঠনটি।

নাসরুল্লাহ ধীরে ধীরে হিজবুল্লাহর যোদ্ধা থেকে বালবেক এলাকার পরিচালক হন। পরে পুরো বেকা ভ্যালির দায়িত্ব পান তিনি। এরপর সংগঠনের বৈরুত শাখার দায়িত্ব নেন। ১৯৯২ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে হিজবুল্লাহর প্রধান হয়েছিলেন নাসরুল্লাহ। এর আগে ইসরায়েলের এক হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হন তার পূর্বসূরি আব্বাস আল–মুসাবি।

নাসরুল্লাহ লেবাননের দক্ষিণে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গেও তার যোদ্ধাদের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন। একপর্যায়ে ২০০০ সালে সেখান থেকে পিছু হটে দেশে ফিরে যায় ইসরায়েলি সেনারা। তবে নাসরুল্লাহর ব্যক্তিগত ক্ষতিও কম হয়নি। ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রাণ দিতে হয় তার বড় ছেলে হাদিকে।

২০০৬ সাল পর্যন্ত ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর মধ্যকার উত্তেজনাকর পরিস্থিতি মোটামুটি শান্ত ছিল। তবে ওই বছর হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা ইসরায়েল সীমান্তে হামলা চালালে আট সেনা নিহত ও দুজন অপহৃত হন। পরে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল ও বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে যুদ্ধবিমান থেকে ব্যাপক গোলাবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েল। হিজবুল্লাহও ইসরায়েলের অভ্যন্তরে প্রায় চার হাজার রকেট ছুড়ে জবাব দেয়।

৩৪ দিন ধরে চলা ওই লড়াইয়ে অন্তত ১ হাজার ১২৫ লেবাননি নিহত হন, যাদের বেশির ভাগ ছিলেন বেসামরিক লোক। নিহত হন ১১৯ ইসরায়েলি সেনা ও ইসরায়েলের ৪৫ বেসামরিক নাগরিকও। লড়াই চলাকালে ইসরায়েল নাসরুল্লাহর বাড়ি ও অফিসে যুদ্ধবিমান থেকে গোলাবর্ষণ করে। তবে তিনি অক্ষত থাকেন।

তবে শুক্রবার বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন তিনি। ইসরায়েল দাবি করে, হিজবুল্লাহর প্রধানকে হত্যা করেছে তাদের সামরিক বাহিনী। আইডিএফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানায়, হাসান নাসরুল্লাহ আর বিশ্বে সন্ত্রাসী কার্মকাণ্ড চালাতে পারবেন না। শুক্রবার সন্ধ্যায় বৈরুতে বিমান হামলার মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ হামলায় তিনি ছাড়াও নিহত হয়েছেন হিজবুল্লাহর দক্ষিণ ফ্রন্টের কমান্ডার।

বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।