ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

শেষ মুহূর্তে ‘শাটডাউন’ এড়ালো যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
শেষ মুহূর্তে ‘শাটডাউন’ এড়ালো যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া বা ‘শাটডাউন’ এড়াতে গতকাল শুক্রবার বিল পাস করেছে কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদ। শাটডাউন শুরুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে এক ভোটাভুটিতে অর্থ বিলটি পাস হয়।

এদিন রিপাবলিকানদের পাশাপাশি ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত সিনেটেও বিলটি পাস হয়েছে।  এখন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বাক্ষর করলেই এটি চূড়ান্ত হবে।

এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানের পরও (হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ) প্রতিনিধি পরিষদে শাটডাউন এড়াতে আনা সংশোধিত বিল পাসে ব্যর্থ হন রিপাবলিকানরা। এমনকি দলটির কিছু প্রতিনিধিও বিলের বিপক্ষে ভোট দেন।

নতুন এই বিলটি পাস না হলে আজ শনিবার (২১ ডিসেম্বর) থেকে শাটডাউনের মুখে পড়তো মার্কিন সরকার। এতে কিছু জরুরিসেবা বাদে অন্যান্য সেবা খাতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেত। অনেক সরকারি চাকুরের বেতনও বন্ধ যাওয়ার শঙ্কা ছিল।

তবে শেষ মুহূর্তে বিল পাসের মাধ্যমে সেসব জটিলতা থেকে রক্ষা পেল যুক্তরাষ্ট্র।  

এই বিল অনুসারে, সরকার আগামী মার্চ পর্যন্ত ব্যয় অব্যাহত রাখতে পারবে। এর মধ্যে যেমন আছে দুর্যোগের ত্রাণ, তেমনি কৃষিবিষয়ক ব্যয়। কিন্তু এ সময় পর্যন্ত সরকারকে জাতীয় ঋণের ঊর্ধ্বসীমা স্থগিত রাখার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।

চলতি বছরের ১৪ মার্চ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ফেডারেল ব্যয় বিল উত্থাপন করা হয়। তখন এই বিলের প্রবল বিরোধিতা করেন রিপাবলিকান সদস্যরা। সেই বিলকে ‘ভয়ানক ক্ষতিকর’ বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি ইলন মাস্ক। নভেম্বরে ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে বিলটি বাতিলের কথা ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার জনসন।

শনিবার বাংলাদেশ সময় ভোরে সরকারের ব্যয়–সংক্রান্ত তহবিল ফুরিয়ে যাওয়ার কথা। ফলে সরকারের ব্যয় মেটানোর অর্থ না থাকলে কার্যক্রম বন্ধ বা শাটডাউন হয়ে যেত। শেষমেশ তা হয়নি।

শাটডাউন এড়াতে গত বৃহস্পতিবার রিপাবলিকানরা নতুন একটি ব্যয় বিল উত্থাপন করে। এ নিয়ে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে ভোটাভুটি হয়। কিন্তু সেখানে ১৭৪-২৩৫ ভোটে হেরে যাওয়ায় বাতিল হয় সেই বিল। তবে কিছু সংশোধনীর পর বিলটি পাস হয়।

শাটডাউন এড়াতে আনা বিলটির বিরোধিতা করেছিলেন রিপাবলিকান সিনেটর র‍্যান্ড পল। এর পেছনে তার যুক্তি, এই বিলে এমন কিছু ব্যয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যেটি পাস হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও বেশি ঋণের ফাঁদে পড়বে।

মি. পল বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত যে এই বিল পাস হলে এটি ইউক্রেনকে অর্থায়নে সহযোগিতা করবে কি না, কিংবা ভবিষ্যতে অন্য কোনো সমস্যা তৈরি হবে কি না সেটি বিবেচনা করেই নতুন তহবিল পাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। ’

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় সংক্রান্ত বিল ইস্যুতে আলোচনায় এসেছে ইলন মাস্কের প্রভাব। মূলত ট্রাম্প ও মাস্কের তাগিদের কারণেই ঐকমত্যে পৌঁছানো প্রথম বিলটি খারিজ করেছিলেন রিপাবলিকানরা।

কিন্তু সংশোধন করে আনা দ্বিতীয় বিলটির বেলায় রক্ষণশীলদের অনেকে মাস্কদের কথা শোনেননি। বিপক্ষে পড়া ওই ৩৮ রিপাবলিকানের ভোটই ফলাফল নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখে।

এই নির্বাচনে ট্রাম্পের হয়ে প্রচারে ৩০ কোটি ডলার খরচ করেছেন মাস্ক। ‘প্রিয় বন্ধু’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) করা পোস্টে তিনি লেখেন, ‘জনগণের কণ্ঠ বিজয়ী হয়েছে। ’

বুধবার সকালে এই টেক টাইকুন তার মালিকানাধীন সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-এ প্রথম বিলটির বিপক্ষে প্রচারণায় নেমে পড়েন।  

হাউজ স্পিকার মাইক জনসন মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত সরকারি খরচ মেটাতে একটা সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন। সেটির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন ইলন মাস্ক।

একের পর এক পোস্টে যেসব বক্তব্য তিনি উপস্থাপন করেছেন তার কোনো কোনোটির যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, শাটডাউন হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন ছোট ব্যবসায়ীরা। সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো।  

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ ৩৬ ট্রিলিয়ন বা ৩৬ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এক সময় দেশটির জাতীয় ঋণসীমা ছিল ৩৩ ট্রিলিয়ন। কিন্তু কোভিডের সময় প্রণোদনা, চলমান যুদ্ধে ইউক্রেন ও ইসরায়েলকে সহায়তা দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে মার্কিন সরকারের ব্যয় বেড়েছে। সে কারণে তাদের ঋণসীমা স্থগিত করতে হয়েছে। যদিও এ নিয়ে ডেমাক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে মতবিরোধ ছিল।

মার্কিন কংগ্রেসের নেতারা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আংশিক শাটডাউন এড়াতে কেন্দ্রীয় সরকারের ২০২৪ সালের মোট ব্যয়ের বিষয়ে ঐকমত্যে আসেন। রিপাবলিকান হাউস স্পিকার মাইক জনসন তখন বলেন, চলতি বছরে মার্কিন সরকার মোট ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করবে। এর মধ্যে সামরিক খাতে ব্যয় হবে ৮৮ হাজার ৬০০ কোটি ডলার আর অন্যান্য খাতে ব্যয় হবে ৭০ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। যদিও এসব সংখ্যায় কিছুটা অসামঞ্জস্য এখনো রয়ে গেছে। এই ঐকমত্যের খসড়া এখন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ ও সিনেট সদস্যদের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, সিএনএন

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।