ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

জলবায়ু সম্মেলন

ধরিত্রি বাঁচাতে বিভেদ নয়, দিতে হবে ছাড়

এহেছান লেনিন, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১০
ধরিত্রি বাঁচাতে বিভেদ নয়, দিতে হবে ছাড়

ঢাকা: কোপ-১৫ এর পর মেক্সিকোর কানকুনে জলবায়ু সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণের উপর আইনগত যে বাধ্যবাধকতাযুক্ত আইন আশা করা হচ্ছে তা অনেকটাই নির্ভর করছে উন্নত দেশগুলোর সমঝোতার উপর। আর তাই এ বিষয়ে অগ্রগতি নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা, আছে প্রশ্ন।

ন্যূনতম অগ্রগতি পেতে হলেও উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে, দিতে হবে দু’পক্ষকেই ছাড়।

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তাৎপর্যপূর্ণভাবেই উন্নত দেশগুলো দায়ী। সেক্ষেত্রে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী কার্বন নিঃসরণের মাত্রা হ্রাস করার ব্যাপারে কৌশল নির্ধারণের সব দায়-দায়িত্ব ধনী দেশগুলোর উপরই বর্তায়।

ওয়াশিংটন ভিত্তিক ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউটের (ডব্লিউআরআই) তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরিত হয়েছে তার মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগের জন্যই দায়ী শিল্পোন্নত দেশ। শুধু যুক্তরাষ্ট্র ১৯৫০ সাল থেকে এ পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণ করেছে ৫০ দশমিক ৭ বিলিয়ন টন। অন্যদিকে চীন ও ভারত নিঃসরণ করেছে ১৫ দশমিক ৭ ও ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন টন। অথব এই দেশ দুটির জনসংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে যথাক্রমে ৪ দশমিক ৬ ও ৩ দশমিক ৫ ভাগ বেশি।

শিল্পোন্নত দেশগুলো বাৎসরিক যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে এ হার মোট নিঃসরিতের ৬০ শতাংশ।

অন্যদিকে, শিল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের গড় মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের হার তুলনা করলে দেখা যায়- যুক্তরাষ্ট্রে এ হার ভারতের তুলনায় ২০ ভাগ বেশি, ব্রাজিলের চেয়ে ১২ গুণ, চীনের চেয়ে ৭ গুণ বেশি।

বিজ্ঞানীদের মতে, শিল্পোন্নত দেশগুলোকে ২০২০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ কমিয়ে এনে তা ১৯৯০ সালের পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে। এছাড়া ২০৫০ সাল নাগাদ এই হ্রাসের হার হতে হবে ৮০ শতাংশ। অবশ্য এসব দেশের কাছ থেকে যে আশ্বাস পাওয়া গেছে তা মোটেও সুখকর নয়। তারা অঙ্গীকার করেছে ২০২০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণের হার ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ কমিয়ে আনবে।

তবে সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ধনী দেশগুলো নিঃসরণ হ্রাসের যে অঙ্গীকার করেছিল সে বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়। শুধু তাই নয় যে ধনী দেশ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী তারাই তাদের দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে।

কানকুন সম্মেলনেও ফের যদি ধনী দেশগুলো তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যায় তাহলে এখান থেকেও শূন্য হাতে ফিরতে হবে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে।

আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণের ব্যাপারে কোনো মাত্রা দেওয়া হয়নি। তবে তাদের নিজ উদ্যোগে নিজেদের জন্যই প্রয়োজন অভিযোজন কৌশল নির্ধারণ।

গেল দুই বছর ধরেই উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে জলবায়ু ইস্যুতে আলোচনায় ফাঁড়াক দেখা যাচ্ছে। কোপেনহেগেন সম্মেলনে এই ব্যবধান বেড়েছে আরও বড় মাত্রায়। যদিও সেখানে আইনী বাধ্যবাধকতা সম্পন্ন চুক্তির কথা উঠেছিল তবে শেষতক যা পাওয়া গেছে তা হলো রাজনৈতিক কথামালার বিশদ বর্ণনা!

কানকুন সম্মেলনে সে ধরনের কোনো কথামালার বিশদ বর্ণনা সমৃদ্ধ অঙ্গীকার পেতে না চাইলে দুই পক্ষকেই কিছুটা ছাড় দিতে হবে। সেই সঙ্গে এ ব্যাপারে মনযোগী হতে হবে দ্বিগুণ। জলবায়ু ইস্যুতে সবাইকে হতে হবে একাট্টা।

(বার্তাসংস্থা সিনহুয়া অবলম্বনে)

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।