ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

কোপেনহেগেন থেকে কানকুন

সময় এসেছে মুহূর্তটিকে কাজে লাগানোর

জেমস এফ. মরিয়র্টি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১০
সময় এসেছে মুহূর্তটিকে কাজে লাগানোর

ঢাকা: সারা বিশ্বজুড়ে আমরা এরই মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের তিকর প্রভাব প্রত্য করছি। যার প্রভাবে তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতি, হিমবাহ গলনাংকের নীচে নামা থেকে শুরু করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং দীর্ঘায়িত খরা মৌসুম উল্লেখযোগ্য।

  আমাদের এই গ্রহে জলবায়ু পরিবর্তনের তিকর প্রভাব আরো ত্বরান্বিত হবে যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনো এই সমস্যা মোকাবেলার জন্য জোর তৎপরতা না দেখায়। মেক্সিকোতে আসন্ন জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন একটি সুযোগ এনে দিচ্ছে এ ব্যাপারে দৃঢ় পদপে গ্রহণ করার- আমাদের অবশ্যই সম্মিলিতভাবে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা উচিৎ।

এই বৈশ্বিক পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং আমাদের অন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে বদ্ধপরিকর।

গত বছরের কোপেনহেগেন-এ আমরা যে অগ্রগতি অর্জন করেছিলাম এইবার আমাদেরকে তা অবশ্যই আরো এগিয়ে নিতে হবে কানকুনে।   তখনকার আলোচনার মূল বিষয়গুলোর অসমাপ্ত আলোচনাকে এগিয়ে নিতে হবে- এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, গৃহীত কর্মসূচির স্বচ্ছতা বজায়, অর্থায়ন, অভিযোজন, প্রযুক্তি ও আমাদের বন সংরণ। এ সমস্ত বিষয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য জোর তৎপরতা এবং একটি ভারসাম্যপূর্ণ ফলাফল খুঁজতে চেষ্টা করার পাশাপাশি আমাদের কোপেনহেগেনের অর্জনকেও গুরুত্ব দিতে হবে; যেখানে সারা বিশ্বের নেতারা এক হয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অর্থবহ পদপে গ্রহণ করেন এবং একযোগে কাজ করার জন্য সংকল্পবদ্ধ হন।  

‘কোপেনহেগেন চুক্তি’র সংকল্প থেকে দূরে সরে আসা কিংবা এর মূল বিষয়গুলো নিয়ে পুনরায় দর কষাকষি করতে থাকলে তা আমাদের পৃথিবী, আমাদের জনগণ ও আমাদের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে।  

‘কোপেনহেগেন চুক্তি’ অনুযায়ী-- যা বাংলাদেশসহ প্রায় ১৪০টি দেশ সমর্থন করেছে- এবারই প্রথম সব প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি আন্তর্জাতিক স্বচ্ছতার মানদণ্ড বজায় রেখে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে কাজ করার জন্য অঙ্গীকার করেছে।   এই চুক্তির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অর্থনৈতিক সাহায্য যা  সবচেয়ে তিগ্রস্ত দেশে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির উন্নয়নে, অভিযোজনে এবং বন সংরণে ব্যয় করা হবে। শর্তানুযায়ী, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং স্বচ্ছতার প্রোপটে  প্রথম পদপে হিসেবে উন্নত দেশগুলো ২০১০-২০১২ সালের মধ্যে তিন হাজার কোটি ডলার অর্থায়ন করবে এবং ২০২০ সাল নাগাদ সরকারি ও বেসরকারি ত্রে থেকে বাৎসরিক দশ হাজার কোটি ডলার অর্থায়নের ল্য নির্ধারণ করেছে।

তাৎণিক পদপে হিসেবে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ও কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে এই বছরেই যুক্তরাষ্ট্র এই খাতে অর্থায়ন বাড়িয়ে ১শ’ ৭০ কোটি ডলারে উন্নীত করেছে। এর মধ্যে ১শ’ ৩০ কোটি ডলার হলো কংগ্রেস কর্তৃক অনুমোদিত সহায়তা ও ৪০ কোটি ডলার হলো উন্নয়ন সহায়তা ও রপ্তানিঋণ।

যুক্তরাষ্ট্র নিজের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাস করতে এবং একটি পরিবেশবান্ধব জ্বালানিভিত্তিক অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে।   প্রেসিডেন্ট ওবামার ‘রিকভারি অ্যাক্ট’ এই ল্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় ঋণ ও প্রণোদনা প্যাকেজ ও বিনিয়োগের মতো বিভিন্ন উদ্যোগে আট হাজার কোটি ডলারেরও অধিক অর্থ প্রদান করেছে।   আমরা এ যাবৎ সর্বাধিক উচ্চাভিলাষী জ্বালানি অর্থনীতি ও কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে ‘টেইলপাইপ’ মান নির্ধারণ করেছি।   আমরা আমাদের সর্বাধিক দূষণের উৎসগুলো থেকে নিঃসরণ হ্রাস করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদপে নিচ্ছি।   আর প্রেসিডেন্ট ওবামা ঘরোয়া জ্বালানি (ডোমেস্টিক এনার্জি) ও জলবায়ু আইন পাসের জন্য এখনো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে যখনই আমার আলাপ হয় তখন সেই আলাপচরিতায় প্রায়শঃই তারা পরিবর্তনশীল জলবায়ুর সম্ভাব্য হুমকি ও এর সমসাময়িক প্রভাবগুলো সম্বন্ধে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকেন।   আমেরিকানরাও এই উদ্বেগের অংশীদার।   তবে, পরিবেশবান্ধব জ্বালানিভিত্তিক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য কাজ করে এমন একটি টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রসারের জন্য এখানে ও বিশ্বব্যাপী যে পদপেগুলো নেয়া হচ্ছে, তা দেখে আমি উৎসাহিত বোধ করছি।   কোনো রাষ্ট্রই যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে সুরতি নয়, তেমনি কোনো একটি রাষ্ট্র এককভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।

জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকিগুলো ও তা রোধের প্রচেষ্টা প্রত্যেক দেশের জন্যই একটি চ্যালেঞ্জ এবং এই বাধাগুলো আমাদের অতিক্রম করতে হবে।   একটি টেকসই, বিশুদ্ধ পরিবেশবান্ধব জ্বালানিভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য বিশ্বব্যাপী আমাদের প্রয়াসগুলো মানুষকে দারিদ্র্যের বেড়াজাল থেকে বের করে আনবে, বিশ্বব্যাপী জ্বালানিসেবা প্রদান করবে এবং আমাদের পরিবেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদগুলোকে সংরণ করতে সহায়তা করবে।   এই গ্রহকে সবার জন্য একটি বিশুদ্ধতর ও অধিকতর স্বাস্থ্যসম্মত বাসভূমি হিসেবে গড়ে তোলা নিশ্চিত করতে কোপেনহেগেন চুক্তি ও কানকুনে আসন্ন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বৈঠক এই রূপান্তর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে আমাদের সমষ্টিগত প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদপে।

নভেম্বর ২৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।