ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

হারিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ঐতিহাসিক সব নিদর্শন

নুসরাত জাহান, আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১০
হারিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ঐতিহাসিক সব নিদর্শন

নমপেন: চলতি বছর কম্বোডিয়ার রাজধানী থেকে শতবর্ষ পুরোনো একটি স্কুল ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিলুপ্তির মিছিলে যোগ দিল ইন্দোচীনের সাবেক ফরাসি আমলের ঐতিহাসিক আরেকটি নিদর্শন।



আর আধুনিকায়নের যুগে একে একে হারিয়ে যাওয়া এসব নিদর্শনের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সংরক্ষণবাদীরা।    

১৯৫৪ সালে ফ্রান্স ইন্দোচীন থেকে চলে যায়। তারপরও বহুকাল কম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনামে ঝাঁপওয়ালা জানালা, বিস্তৃত ঝুল বারান্দা এবং পিচের টাইলস করা ছাদবিশিষ্ট ফরাসি ঔপনিবেশিক আমলের স্থাপত্যশৈলী নজরে পড়তো।

সম্প্রতি এসব অঞ্চলের শত শত ঐতিহাসিক চিহ্ণ বহনকারী ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। কেননা পুঁজিবাদের যুগে জমির দাম বাড়িয়ে দেওয়াসহ চোখ ধাঁধানো আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণের ওপর অধিক জোর দিচ্ছে দেশগুলোর সরকার ।    

কম্বোডিয়া ভিত্তিক স্থাপত্যবিদ্যা বিষয়ক ইতিহাসবিদ ড্যারিল কলিনস বলেন, ‘নমপেনে ঐতিহ্য রক্ষার ন্যূনতম প্রচেষ্টাও পরিলক্ষিত হয় না। এখানে ফরাসি ঔপনিবেশিক আমলের ভবনগুলো একে একে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। ’

অস্ট্রেলিয়ার এ ইতিহাসবিদ আরও বলেন, ‘এটা গভীর দুঃখের একটি বিষয় এবং একসময় এর জন্য আমাদের অনুতাপ করতে হবে। ’

অতি সম্প্রতি আধুনিকায়নের জোয়ারের তোপের মুখে পড়েছে কম্বোডিয়ার সবচেয়ে পুরাতন প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১৯০৮ সালে নির্মিত ইকোল প্রোফেশনালে নামের ওই বিদ্যালয় ভবনটি ধ্বংস করা হয়।  

কিন্তু একসময় কম্বোডিয়ার এ রাজধানীটিই ‘পার্ল অব এশিয়া’ নামে জগদ্বিৎখ্যাত ছিলো। এ অঞ্চলের সবচেয়ে সুন্দর শহর হিসেবে বিবেচনা করা হতো এ শহরটিকে। আর এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ফরাসি আমলের প্রশস্ত পথ, যতেœর সঙ্গে পরিচর্যা করা বাগান ও দৃষ্টিনন্দন বাড়িগুলোর।     

কিন্তু এগুলোর অধিকাংশই উদ্বেগজনক গতিতে হারিয়ে যাচ্ছে বলে সংরক্ষণবাদীরা অভিযোগ করেন। এমনকি কম্বোডিয়ার নৃশংস খেমাররুজ শাসকের হাত থেকে বেঁচে গেলেও নগরায়নের হাত থেকে রেহাই পায়নি অধিকাংশ ভবন।

সংরক্ষণবাদীদের এক হিসেব মতে, গত ১৫ বছরে  নমপেনের ৩০ শতাংশ প্রাচীন ভবন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।  

তবে শুধু ইতিহাসবিদ বা সংরক্ষণবাদীরাই নয় বরং অধিকাংশ জনগণই ঐতিহ্য ধ্বংসের বিরুদ্ধে সোচ্চার।

নমপেনের রাজকীয় প্রাসাদের কাছে ঔপনিবেশিক আমলের ধূলিস্যাৎ হয়ে যাওয়া ভিলার সামনে কোমল পানীয় বিক্রেতা ছেঙ্গ ময়ুন (৭৬) বলেন, ‘আমাদের ফরাসি আমলের ভবনগুলো ধ্বংস করা উচিত নয়। এগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা উচিত, ঠিক আগের মতোই সৌন্দর্য নিয়ে আসতে হবে এতে। ’

তবে সীমিত তহবিল ও ভবনের মালিকদের আগ্রহের অভাবের কারণে নমপেনের এ ভবনগুলো রক্ষা করা কঠিন বলে দেশটির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা স্যামরাইঙ্গ ক্যামসান জানান।  

তিনি বলেন, ‘প্রাচীন এসব ভবন রক্ষা করা সম্ভব নয়। কেননা কেউ আমাদের কথা শোনে তো কেউ শোনে না। ’

সাবেক আরও দুই ফরাসি উপনিবেশ লাওস ও ভিয়েতনামের অবস্থাও একই রকম। কেননা বর্তমানে ভিয়েতনামের রাজধানীতে ফরাসি আমলের মাত্র একশটির মতো ভবন টিকে আছে।

কিন্তু প্রাশাসনিক জটিলতার কারণে টিকে থাকা এসব ভবনও রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে হ্যানয়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হোয়াং দাও নিহ জানান।  

এক্ষেত্রে পর্যটক আকর্ষণের জন্য এই তিনটি দেশে সরকারের ফরাসি আমলের ঐতিহ্য রক্ষা করা উচিত বলে সংরক্ষণবাদীরা মনে করেন।

এ সম্পর্কে কলিনস বলেন, ‘এ ভবনগুলো শহরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ এর ভিত্তিতে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। ’

কিন্তু এ বিষয়ে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন বলেন, ‘তারা পুরাতন ভবনগুলো সংরক্ষণ করতে চান। কিন্তু এগুলো যখন ভেঙ্গে পড়বে তখন এর দায়ভার কে নেবে?’ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি নমপেনে ৫৫৫ মিটার টাওয়ার নির্মাণের ঘোষণা দেন।

হুস সেন বলেন, ‘অতিরিক্ত সংরক্ষণবাদী হওয়া উচিত নয়। গগণচুম্বী ইমরাতগুলো ক্রমেই নির্মাণ করা হবে। আসুন আমরা সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করি। ’

আর সরকারের এ ঘোষণা যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে প্রশ্নাতীতভাবে তা সংরক্ষণবাদীদের এ লড়াইকে আর দুরূহ করে তুলবে। এএফপি অবলম্বনে।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।