ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

আইএসআইএস’র ভয়ঙ্কর চোখ ভারতের দিকে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৩ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৪
আইএসআইএস’র ভয়ঙ্কর চোখ ভারতের দিকে ছবি: সংগৃহীত

আইএসআইএস’র ভয়ঙ্কর চোখ পড়েছে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে। ইরাকে ব্যাপক সহিংসতা ছড়ানোর পর ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইএসআইএস)‘র প্রধান আবু বকর আল বাগদাদী গোটা মুসিলিম বিশ্বে তার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছেন।

খেলাফত বিস্তার করছেন বলেও দাবি করছেন তিনি। যা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী।  

এই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে নৃশংস সন্ত্রাসী শক্তি হিসেবে পরিচিত আইএসআইএস এখন বিশ্বে ইসলামী শক্তির একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে। ভারত তার একটি বড় লক্ষ্যস্থল।

ইরাক, সিরিয়া, ইসরাইল, ফিলিস্তিত, লেবানন, জর্ডান, সাইপ্রাস ও তুরস্কও রয়েছে এর দৃষ্টিসীমায়।

তবে অধিকাংশ ভারতীয় মুসলমানই মনে করেন জিহাদী শক্তিগুলো ইসলামকে নিয়ে উপহাস করছে। নিজেদের খেলাফত বিস্তৃত করার যে ঘোষণা আইএসআইএস দিয়ে তা স্রেফ ইসলামের অপমান বলেই মনে করছেন ভারতীয় মুসলিমরা।

তাদের এই যুদ্ধ কোনোভাবেই পবিত্র জিহাদ হতে পারে না, এই যুদ্ধ রক্তাক্ত ও সহিংস। ভারতীয় এক মৌলানা নাম প্রকাশ না করে দেশটির একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মসজিদে মসজিদে নামাজের সময় আইএসআইএস’র আচরণের প্রতিবাদ হচ্ছে।

সুন্নি মুসলমানরা কোনোভাবেই বিশ্বাস করেন না, খেলাফত ফিরে আসতে পারে। আইএসআইএস ইসলামের মূল ও বৈধ ধারার বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছে।
ইসলাম শান্তির ধর্ম, ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। আইএসআইএস যা করছে তা কখনোই পবিত্র যুদ্ধ হতে পারে না, এটি সম্পূর্ণ রক্তক্ষয়ী সহিংসতা। তারা শিশু ও নারীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে যা সম্পূর্ণরূপে ইসলাম বিরোধী। এছাড়াও রমজানমাসে কোনো যুদ্ধ-বিগ্রহ চলে না। কিন্তু আইএসআইএস ইরাকে তাদের সহিংসতা বন্ধের কোলো লক্ষণই দেখাচ্ছে না।

মহানবী (সঃ) এর পর তার অনুসারীরা ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে একেকজন খলিফার নেতৃত্বে দল গঠন করেন। এই ইসলামের প্রচার নিয়ে খলিফারা ভারতবর্ষেও আসেন। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে ১০০ বছর আগেই। ভারতীয় মুসলমানরা নতুন এই খেলাফতের দাবি মেনে নিচ্ছেন না। কোনো সুন্নি মুসলমানই তাদের সমর্থন করবে না। একজন মৌলানা বলেন, এরা ইসলাম রক্ষা করছেন না, এরা যা করছে তা জাহেলিয়াতের সামিল।

তবে এর পরেও ভারত ঝুঁকিতে রয়েছে। কিছু কিছু পকেট রয়েছে যেখ‍ানে ওয়াহাবি মতাদর্শের বিশ্বাসীরা রয়েছেন। তাদের ওপর ভরসা করে আইএসআইএস ভারতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এরই মধ্যে একটি কাউন্সিল গঠনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু ভারতীয় এরই মধ্যে আইএসআইএস’র হয়ে লড়াইয়ে নেমেছে। ভারতের গবেষণা ও বিশ্লেষণ বিভাগ অবশ্য এদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারনে কাজ শুরু করেছে। আইএসআইএস যখন তাদের কাউন্সিল গঠনে উদ্যোগী হয়েছে তখন এই ভারতীয় বংশোদ্ভুতদেরই ব্যবহার করছে। ভারতের ভেতরেই কিছু কিছু চরমপন্থি রয়েছে যারা আইএসআইএস দ্বারা উদ্বুদ্ধ। এদের চিহ্নিত করে বিষয়টি প্রতিহত না করলে বিপদ বাড়বে।

বিষয়টি নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। ওসামা বিন লাদেনেরও কিছু ভক্ত ভারতে ছিলো, তাকে হত্যা করার পর ভারতের কেরালায় কয়েকটি স্থানে প্রতিবাদও হয়েছে। ঠিক তেমনি আবুবকর আল বাগদাদীরও কিছু ভক্ত তৈরি হতে পারে, যা মোটেই কাম্য নয়, বলেন একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

আইএসআইএস আজ যে খেলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাইছে, তা একসময় বিন লাদেনেরও স্বপ্ন ছিলো। বিশেষজ্ঞদের মতে আল কায়েদার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিধর এই আইএসআইএস। ইয়েমেনের কয়েকটি শহরে দল নিতে চেষ্টা করে ব্যর্থ ছিলো আল-কায়েদা, সেখানে আইএসআইএস এরই মধ্যে ইরাকের বেশ কিছু এলাকা নিজেদের কব্জায় নিয়ে নিয়েছে।

তবে লষ্কর-ই-জংভি অবশ্য এরই মধ্যে তাদের সমর্থন ঘোষণা করলেও তেহরিক-ই-তালিবান, লষ্কর-ই-তৈয়বার মতো জঙ্গী দলগুলো এখনো আইএসআইএসকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানায়নি।

আল-কায়েদাকে খুব একটা পাত্তাও দিচ্ছেনা আইএসআইএস। আল-কায়েদা প্রধান আয়মান-আল-জাওয়াহিরির কয়েকটি নির্দেশ তারা উড়িয়ে দিয়েছে। আর আল-কায়েদা সিরিয়া ও ইরাকে তাদের অবস্থান হারাচ্ছে, সেসব স্থানে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে আইএসআইএস। জঙ্গীদেরও ‍খুব একটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না আল-কায়েদা। তাদের অনেকের মধ্যেই এখন আইএসআইএস-এ যোগ দেওয়ার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।

এদিকে আল কায়েদা মনে করছে, আইএসআইএস-এর পতন হবে নিজে নিজেই। তারা যেমন দ্রুত গজিয়ে উঠেছে শেষও হয়ে যাবে তেমনি দ্রুত। আইএসআইএস’র কোনো নিয়মতান্ত্রিকতা নেই। তাদের সহিংসতা স্থানীয় জনগণকে বিপর্যস্ত করছে, আর সে কারণেই তাদের পতন অনিবার্য।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, আইএসআইএস’র পতন খুব অল্প সময়েই দেখা যাবে এমনটা নয়। তাদের হঠাতে সময় লাগবে, আর তা করতে ক্ষয়-ক্ষতিও কম হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, সিরিয়া ও ইরাকে আইএসআইএস’র একের পর এক যুদ্ধক্ষেত্র জয় আল-কায়েদাকে বিপাকে ফেলেছে। গত জানুয়ারি থেকে অনেক জাতীয়তাবাদী, মূলধারার ইসলামী শক্তি এমনকি আল-কায়েদার শাখা জাবহাত আল নুসরা আইএসআইএসকে প্রতিহত করতে পারেনি।

নৃশংসতার যে উদাহরণ আইএসআইএস একের পর এক সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এটি অত্যন্ত সুগঠিত একটি দল যার হাতে রয়েছে ৪ বিলিয়ন ডলারের তহবিল। যেখানে সেখানে হত্যাকাণ্ড চালানোর পাশাপাশি ইসলামী শাসন কায়েম করাও এর অন্যতম লক্ষ্য।

বাংলাদেশ সময় ১২২০ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।