ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ব্রিটিশ তরুণদের সিরিয়া-ইরাক যুদ্ধে না যেতে ইমামদের আহ্বান

সৈয়দ আনাস পাশা, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫০ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৪
ব্রিটিশ তরুণদের সিরিয়া-ইরাক যুদ্ধে না যেতে ইমামদের আহ্বান ছবি: সংগৃহীত

লন্ডন: সিরিয়া ও ইরাকের যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ‍ব্রিটিশ মুসলিম তরুণের যোগদানে ব্রিটিশ সরকারের পাশাপাশি ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির মুসলমান কমিউনিটিতেও। এ উৎকণ্ঠা শুধু যুদ্ধে যোগদান করা তরুণদের জন্যই নয়, ব্রিটেনের শিয়া-সুন্নী সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক নিয়েও।



যুদ্ধরত ব্রিটিশ মুসলিম তরুণদের পক্ষ থেকে অন্য তরুণদেরও এই যুদ্ধে যোগ দেওয়ার আহ্বানও ব্যাপকভাবে উদ্বেগ ছড়িয়ে দিয়েছে কমিউনিটিতে। শিয়া-সুন্নী নির্বিশেষে পুরো মুসলিম কমিউনিটিই এখন ভুগছেন এমন এক অজানা আশঙ্কায়, যে আশঙ্কা নিজেদের তরুণ সন্তানদের নিয়ে, দুই সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য নিয়ে।

মুসলমান কমিউনিটির এই উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা প্রশমিত করতে ব্রিটেনের শতাধিক ইমাম ইরাক ও সিরিয়া না যেতে শনিবার এক খোলা চিঠিতে ব্রিটিশ মুসলমানদের প্রতি আহ্বান  জানিয়েছেন।

সম্প্রতি ইরাক ও সিরিয়া যুদ্ধের প্রতি ব্রিটিশ মুসলিম তরুণদের একটি অংশের ব্যাপক আগ্রহ, কারো কারো যুদ্ধে অংশগ্রহণ, রণাঙ্গন থেকে সমবয়সী তরুণদের যুদ্ধে যোগদানের আহ্বান ব্যাপকভাবে ভাবিয়ে তুলেছে ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের- এমন খবর প্রকাশের পর এই প্রথম শিয়া-সুন্নী নির্বিশেষে ঐকবদ্ধ হয়ে নেতৃস্থানীয় ব্রিটিশ ইমামরা এ আহ্বান জানালেন।

খোলা চিঠিতে তারা বলেন, সিরিয়া ও ইরাকের যুদ্ধ আক্রান্তদের প্রতি ব্রিটিশ মুসলমানদের সাহায্য সহযোগিতা অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে। তবে তা যেন হয় ব্রিটেনে থেকে নিরাপদ পন্থায়। ব্রিটিশ ইমামদের যৌথ স্বাক্ষরযুক্ত এ খোলা চিঠির অন্যতম মূল উদ্যোক্তা লিডস মক্কা মসজিদের ইমাম ক্বারী মোহাম্মদ আসীম বলেন, সিরিয়ার মানবিক বিপর্যয় ও ইরাকের ক্রমবর্ধমান সংঘাতে অবশ্যই আমরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। ব্রিটিশ মুসলমানরা ওইসব অঞ্চলের নিরীহ জনগণের মানবিক সাহায্যে ব্যাপকভাবে সাড়াও দিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, পবিত্র রমজানের প্রথম সপ্তাহ শেষ করছি আমরা। ব্রিটিশ মুসলমানদের প্রতি আমাদের একটিই বার্তা, সাম্প্রদায়িক বিভেদ বা সামাজিক অনৈক্যের বির‍ুদ্ধে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ।

ক্বারী আসীম বলেন, ব্রিটেনে শিয়া ও সুন্নী নির্বিশেষে আমরা মুসলমানরা যেমন ভাই ভাই, ঠিক তেমনি ব্রিটিশ হিসেবেও আমরা ভাই ভাই। সিরিয়া বা ইরাক যুদ্ধ যতই ভয়াবহ হোক ব্রিটেনে আমাদের এই অবস্থানে ওই যুদ্ধ কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না।

তিনি ঐক্যবদ্ধ মুসলিম কমিউনিটির এই অবস্থান সারা ব্রিটেনের মুসলমানদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।

লেস্টার সেন্ট্রাল মসজিদের ইমাম শাহিদ রেজা ওবিই বলেন, ইরাক ও সিরিয়ার মানবিক বিপর্যয়ে ব্রিটিশ মুসলমানদের অভূতপূর্ব সাড়া আমাদের গর্বিত করে। ক্রমবর্ধমান এই বিপর্যয় রোধে ব্রিটিশ মুসলমানরা মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়েই রাখবেন এমনটি আমরা আশাকরি। তবে এ সাহায্য যেন হয় ব্রিটেনে থেকে নিরাপদভাবে। কোন ধরনের সাম্প্রদায়িক উসকানি যেন আমাদের সামাজিক ঐক্য বিনষ্ট করতে না পারে।

ইমাম ও মসজিদগুলোর সঙ্গে কর্মরত সংগঠন ফেইথ অ্যাসোসিয়েটস এর চিফ এক্সিকিউটিভ শওকত ওয়াররাইচ শিয়া-সুন্নী যৌথ স্বাক্ষরিত খোলা চিঠিকে একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, যারা ইরাক বা সিরিয়া যাওয়ার চিন্তা করছেন, ব্রিটিশ শীর্ষস্থানীয় ইমামদের এই খোলা চিঠি আমাদের সেসব তরুণদের অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবার তাগিদ দেবে, তাদের রক্ষা করবে।

এদিকে, ইরাক ও সিরিয়া যুদ্ধে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণের যোগদানে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশি কমিউনিটিও। সম্প্রতি কয়েকজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণের খবর প্রকাশ হলে নিজ নিজ সন্তানের গতিবিধির প্রতি নজর রাখতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান কমিউনিটি নেতারা।

বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ইসলামের নামে রক্তের প্লাবন বইয়ে দিতে চায় যারা, তারা প্রকৃতপক্ষে কতটুকু সত্যিকার মুসলমান সেটি ভেবে দেখতে নিজ নিজ সন্তানদের তাগিদ দেওয়া উচিত অভিভাবকদের।
 

সিরিয়া ও ইরাকের চলমান গৃহযুদ্ধে ব্রিটিশ মুসলিম তরুণদের অংশগ্রহণের ব্যাপকতায় ব্রিটিশ সরকারের অভ্যন্তরে শুরু হওয়া তোলপাড়ের খবরে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশিসহ মুসলিম কমিউনিটিতে। উগ্রপন্থার প্রতি ঝুঁকে পড়া এ তরুণদের ব্রিটেনের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হিসেবেই দেখছেন সরকার এমন খবরে উৎকণ্ঠিত হয়ে ওঠেন অভিবাবকরা।

সিরিয়া যুদ্ধে চার শতাধিক ব্রিটিশ মুসলিম তরুণ অংশ নিচ্ছে- ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এক সময় এমন ধারণা করলেও এখন এটি দু’হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে তাদের আশঙ্কা। উগ্রপন্থার প্রতি কিছু মুসলিম তরুণ ঝুঁকছে এটিই শুধু একমাত্র উদ্বেগের কারণ নয় ব্রিটেনের, মূল উদ্বেগ হলো জঙ্গি গ্রুপের সঙ্গে ইতোমধ্যে সম্পৃক্ত হওয়া এসব তরুণ ব্যাপকভাবে অন্য তরুণদেরও তাদের পথে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।

সিরিয়া ও ইরাকের যুদ্ধে যেসব বিদেশি নাগরিক অংশ নিচ্ছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ব্রিটিশ বলে ধারণা গোয়েন্দাদের। আর যুদ্ধে অংশ নেওয়া এই গ্রুপের মধ্যে বাঙালি তরুণের সংখ্যাও রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক।

সিরিয়ায় প্রায় তিন বছর ধরে শিয়া সমর্থিত আসাদ সরকারের বিরদ্ধে লড়াই করছে সুন্নী বিদ্রোহীরা। এ সুযোগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কট্টরপন্থী সুন্নী গোষ্ঠীগুলো ইসলামিক রাষ্ট্র কায়েমের নামে সিরিয়ার সুন্নী বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেয়, যার মধ্যে অন্যতম একটি গোষ্ঠী হলো আইসিস।

পশ্চিমা সরকারগুলো ইরাকে প্রতিষ্ঠিত আইসিসকে আল কায়েদার সহযোগী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করত, এখন তাদের ধারণা এই সংগঠনটি আলকায়েদার চেয়েও ভয়ঙ্কর। সম্প্রতি এ সংগঠনটি ইরাকেও সরকার বিরোধী সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু করে। সিরিয়ার পর এখন ইরাকের এ যুদ্ধে যোগদানের জন্য মুসলিম তরুণদের আহ্বান জানাচ্ছে আইসিস।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।