ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

রহস্যময় ‘পৃথিবীর শেষ’ গর্তের নতুন মোড়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৪
রহস্যময় ‘পৃথিবীর শেষ’ গর্তের নতুন মোড়

ঢাকা: হঠাৎ করেই শীতের দেশ সাইবেরিয়াতে দেখা যায় বড় এক গর্ত। কিন্তু কেউ জানে না গর্তটি কী করে হলো।

এনিয়ে বিজ্ঞানীরা পড়ে যান মহাচিন্তায়। এ গর্তটি গত সপ্তাহে রাশিয়ার ইয়ামাল পেনিনসুলাতে চিহ্নিত করা হয়। সাধারণভাবে এটিকে ডাকা হচ্ছে ‘পৃথিবীর শেষ’ বলে।

স্থানীয় জনসাধারণ ধারণা করছিলেন, গর্তটি এলিয়েন, উল্কাপাত বা কোনো মিসাইলের আঘাতে ঘটেছে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের ধারণা গ্যাস বিস্ফোরণের কারণে সৃষ্টি হয়েছে গর্তটি।

সম্প্রতি রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা সরেজমিনে দেখে এসেছেন পুরো ব্যাপারটি। তাদের সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, গর্তের চারিদিক অনেকটা কৃষ্ণগহ্বরের মতো। প্রথমদিকে তাপের সম্ভাব্য প্রমাণ হিসেবে এটা দেখা হয়েছিল। তারা ধারণা করছেন, গর্ত তৈরির সময় বিস্ফোরণ থেকে এই তাপ তৈরি হতে পারে।

এ ব্যাপারে সাইবেরিয়ান টাইমস জানায়, তারা (বিজ্ঞানীরা) প্রায় ৩০০ ফুট গভীর একটি গর্ত খুঁজে পেয়েছেন। গর্তের একদম নীচে একটি বরফের হৃদ থাকতে পারে। ভূগর্ভস্থ বরফের দেওয়ালে বিপুল জলরাশি ক্রমাগত ধাক্কা দিয়ে চলেছে।

তারা আরও জানায়, প্রথম দিকে ভাবা হয়েছিল গর্তটি চওড়ায় ১৬৪ থেকে ৩২৮ ফুটের মধ্যে। কিন্তু এটি আসলে অতটা চওড়া নয়।

রাশিয়ান সায়েন্টিফিক সেন্টার অব আর্কটিক রিসার্চ-এর জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. আন্দ্রে প্লেখানভ প্রকাশ করেন, গর্তের নির্মাণ সম্পর্কে ধারণা পেতে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। হতে পারে এটি গত বছর বা দু’বছর আগে থেকে সৃষ্টি হচ্ছিল।

গর্ত আবিস্কারের পর অনেকে বলেন, এখানে এলিয়েনের ইউএফও যান অবতরণ হয়ে থাকতে পারে।

এ বিষয়ে ড. প্লেখানভ বলেন, আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এটা আভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার কোনো প্রভাব। এটা অনেকটা ভূগর্ভস্থ বরফ অঞ্চলে বমি করার মতো।  

এটা যে কোনো বিস্ফোরণ ছিল না, অ‍ামি এ ব্যাপারে জোর দিতে চাই।   কিন্তু এটা একটা নির্গমন। তাই সেখানে তাপ ছেড়ে যাওয়ার কোনো ব্যাপার ঘটছে না।

গর্ত চিহ্নিত স্থানে সবশেষ অভিযানটি ছিল ইয়ামাল কর্তৃপক্ষের আয়োজনে। তাদের সাথে ছিলেন রাশিয়ার সেন্টার ফর স্টাডি অব দ্য আর্কটিক ও ক্রায়োস্ফেয়ার ইনস্টিটিউট অব দ্য অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস এর বিশেষজ্ঞরা।

তারা গর্তের মাটি, পানি ও বাতাসের নমুনা সংগ্রহ করেন। রাশিয়ার জরুরি অবস্থা মন্ত্রণালয়ের একজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন তাদের সঙ্গে।  

সাব-আর্কটিক সায়েন্টিফিক রিসার্চ সেন্টারের আনা কুরচাটোভা বলেন, গর্তটি পানি, লবণ ও গ্যাসের সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে। হতে পারে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে আভ্যন্তরীণ বিস্ফোরণ এটি তৈরি হওয়ার কারণ।

গ্যাস বরফ ও লবণের সঙ্গে মিশে গর্তটির উপরের অংশ তৈরি হয়েছে, যোগ করেন আনা।

গর্তটি চিহ্নিত করা হয় রাশিয়ার ইয়ামাল পেনিনসুলাতে। ইয়ামাল হলো ইউরোপে গ্যাস রপ্তানির ক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রধান গ্যাস উৎপাদন অঞ্চল।
এরকম একটি অঞ্চলে গর্ত তৈরি হওয়ায় সবার মধ্যে বিস্ময়ের জন্ম নিয়েছে।

সেটি ধরা পড়ল ড. প্লেখানভের কথায়ও, আমি বহুবার ইয়ামাল গিয়েছি। কিন্তু আমি কখনই এরকম কিছু দেখিনি।  

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, হয়ত দেখা না গেলেও গর্ত তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আট হাজার বছর আগে।

হতে পারে এরকমটা আবার ঘটবে। যদি তত্ত্ব ঠিক হয়, তাহলে আমরা ইয়ামাল পেনিনসুলার মতো একটি দূর্লভ প্রাকৃতিক বৈচিত্রের সাক্ষী হব, শেষে যোগ করলেন ড. প্লেখানভ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘণ্টা, ২২ জুলাই, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।