ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

পাক-ভারত সীমান্তে গোলাগুলি, পাল্টাপাল্টি তলব-বাকযুদ্ধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৫
পাক-ভারত সীমান্তে গোলাগুলি, পাল্টাপাল্টি তলব-বাকযুদ্ধ ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: আবারও যুদ্ধাবস্থা ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে। রাশিয়ায় একটি সম্মেলনের ফাঁকে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ’ বৈঠকের পর সম্পর্কে উষ্ণতা ছড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করা হলেও এখন পুরোপুরি উল্টোটি ঘটছে সীমান্তে।

দেশ দু’টির সেনাবাহিনীই প্রতিপক্ষের শিবির লক্ষ্য করে গুলি ও মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করছে। এতে বেসামরিক লোকের হতাহতের খবরও দাবি করছে দু’পক্ষ। এজন্য অভিযোগ তোলা হচ্ছে পাল্টাপাল্টি। সীমান্তে যেমন চলছে গোলাগুলি, তেমনি কূটনীতিক পর্যায়েও চলছে হুংকার-পাল্টা হুংকার।

বুধবার (১৫ জুলাই) পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের ভিমবার শহরে নিয়ন্ত্রণ রেখার (লাইন অব কন্ট্রোল) পাশে ভারতীয় একটি গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে বলে ইসলামাবাদের দাবির পরই এ যুদ্ধাবস্থা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ উভয়পক্ষই সীমান্তে প্রায় যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টির জন্য পরস্পরকে অভিযুক্ত করেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, বুধবার ভোর থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনারা ভারতের বেশ ক’টি ঘাঁটি লক্ষ্য করে মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করে। এর পাল্টা জবাব দিতে থাকে ভারতীয় সেনারাও। দু’পক্ষের গোলাগুলিতে বিধ্বস্ত হয় সীমান্তবর্তী গ্রামের অনেক ঘর বাড়ি। নয়াদিল্লির কর্মকর্তাদের হিসাব মতে, এই গোলাগুলিতে চার গ্রামবাসী ও দুই সেনা সদস্য আহত হয়েছেন।

অপর দিকে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত করার আগে বুধবার সকাল থেকেই ভারতের সেনারা সীমান্তে কোনো ধরনের উস্কানি ছাড়া গোলাগুলি শুরু করে। তার পাল্টা জবাব দিতে শুরু করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী রেঞ্জার্সও। দু’পক্ষের গোলাগুলিতে পাকিস্তানের শিয়ালকোটে প্রাণ যায় চার গ্রামবাসীর। বিধ্বস্ত হয় সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামের অনেক বাড়িঘর।

এই গোলাগুলির প্রেক্ষিতে দু’পক্ষই আবার সীমান্তে ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার’ করার কথা জানিয়ে দিয়েছে।

পাল্টাপাল্টি হামলার প্রেক্ষিতে নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানি হাইকমিশনার আর ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করে সতর্ক করে দিয়েছে দু’দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অবশ্য, উভয় হাইকমিশনারই উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য প্রতিবেশী দেশের বাহিনীকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়ে এসেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।

বিকেল পর্যন্ত গোলাগুলি ও হাইকমিশনার তলব-পাল্টা তলবের প্রেক্ষিতে সন্ধ্যার আগে বৈঠকে বসেন ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের তিন মন্ত্রী। এদের মধ্যে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংও।

এ বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, আমরা শান্তি বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা আমাদের নিরাপত্তাকে নস্যাৎ হতে দেবো। যদি কোনো উস্কানি ছাড়া আর গোলাগুলি করা হয়, তবে তার কার্যকর ও সমান জবাব দেবো আমরা।

এছাড়া, ইসলামাবাদ যে গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে সেটা ভারতের নয় বলেও সাফ জানিয়ে দেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, এই ড্রোনের ডিজাইন চীনের। এটা বাণিজ্যিকভাবেও পাওয়া যায়।

উত্তেজনার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের বৈঠক ও তৎপরবর্তী সংবাদ সম্মেলন করে ভারত অবস্থান জানিয়ে দিলেও পাকিস্তানের তরফে হাইকমিশনার তলবের পর আর কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেওয়া হয়নি। তবে, বিবৃতি দিয়ে আসছে আন্তঃবাহিনী গণসংযোগ অধিদফতর (আইএসপিআর)। তারা এখনও দাবি করছে, নিয়ন্ত্রণ রেখায় থেমে থেমে গোলাগুলি চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৫
এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।