ঢাকা: ১৯২৮ সালে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস টেক্সাসে চেপে হাভানার বন্দরে ভিড়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৩০তম প্রেসিডেন্ট কেলভিন কুলিজ। এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় নয় দশক।
দীর্ঘ বছর পর রোববার (২০ মার্চ) হাভানায় পা রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। আর এর মধ্য দিয়েই দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
৮৮ বছর আগে কেলভিন কুলিজ সাগরপাড়ি দিয়ে হাভানায় পৌঁছালেও রোববার ওবামা সেখানে পৌঁছান দুনিয়াখ্যাত মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাহন এয়ারফোর্স ওয়ান-এ চেপে হাওয়ায় ভেসে। তার সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী মিশেল ওবামা এবং দুই কন্যা মালিহা ও শাসা।
এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের উৎসাহ-উদ্দীপনারও শেষ নেই।
কিউবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভেঙে পড়তে শুরু করে স্নায়ুযুদ্ধের সময়। আর তা চরম আকার ধারণ করে ১৯৫৯ সালে। এ বছর দেশটিতে সমাজতন্ত্রের বিপ্লব ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেন ফিদেল কাস্ত্রো। ১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশটি পরিচালনা করেন।
১৯৭৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে জাতিকে নেতৃত্ব দেন। তার সরকারের সূচনালগ্ন থেকেই রাজনৈতিক ও পররাষ্ট্র নীতির ভিন্নতার কারণে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে পড়তে শুরু করে কিউবার। ১৯৬১ সালে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, দেশটির ওপর বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করে মার্কিন সরকার।
মূলত পুঁজিবাদী মার্কিন প্রশাসন কিউবার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে মেনে নিতে পারেনি। সেই সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদী মতাদর্শ ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে ফিদেল কাস্ত্রোর অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের রোষাণলে পড়েন তিনি। তার ওপর তার ‘একলা চলো নীতি’ এ রোষকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
কৃষি নির্ভর দেশ কিউবা। প্রাকৃতিক সম্পদেও যথেষ্ট সমৃদ্ধ। দেশটির মাটি উর্বর হওয়ায় আঁখ, তামাক, সাইট্রাস ফল, কফি, শিম, ধান ও আলুসহ বিভিন্ন ফসলের ফলনও বেশ। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির ওপর ভর করে ফিদেল কাস্ত্রো তার রাজনৈতিক সংগ্রাম চালিয়েছেন। যে কারণে বিভিন্ন সময় বিশ্ব মুদ্রাবাজরে ধস নামলে কিউবায় এর কোনো প্রভাবই পড়েনি।
২০০৮ সালে ফিদেল কাস্ত্রো ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালে নেতৃত্বে আসেন তার ভাই রাউল কাস্ত্রো। ক্ষমতায় আসার সূচনালগ্ন থেকে ভাইয়ের নীতিতে দেশ পরিচালনা করলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হন রাউল। এরই ধারায় ২০১১ সাল থেকে বরফ গলতে শুরু করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাউল-ওবামার চেষ্টার ফলেই ৮৮ বছর পর হাভানায় পা রাখতে চলেছেন কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এবার দেখার বিষয়, তার এ সফর কিউবা-আমেরিকা সম্পর্কোন্নয়নে কতখানি প্রভাব ফেলে।
এ সফরের জন্য প্রায় ১৫ মাস আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন ওবামা। যে ঘোষণার আওতায় কিউবা থেকে আমেরিকায় সরাসরি ফ্লাইট চালুসহ বিভিন্ন বিষয়ে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনার কথা জানানো হয়।
তবে ওবামার এ সফরেই কিউবার ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলো উঠে যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ওবামা জানান, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে না, তবে তা শীথিল হতে পারে।
চলতি সপ্তাহে ওবামা প্রশাসান বেশ কিছু প্রদক্ষেপ নিয়েছে, যার ফলে অনেক ইস্যুতেই যুক্তরাষ্ট্রের নমনীয় হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, সোমবার (২১ মার্চ) কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রোর সঙ্গে এক দাফতরিক বৈঠকে মিলিত হবেন ওবামা। সেই সঙ্গে রাতের খাবারও খাবেন তারা একত্রে। এ নিয়ে হোয়াইট হাউজ বলছে, এই সফরের মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্কে সত্যিকার অর্থেই বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।
এ সফর নিয়ে কিউবার জনগণকে উদ্দেশ্য করে মঙ্গলবার (২২ মার্চ) বারাক ওবামা বক্তব্য রাখবেন। বিরোধী মতাদর্শীদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন তিনি। এ সময় দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে প্রীতি বেসবল ম্যাচও অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
দু’দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং কিউবার পুরাতন স্থাপত্যশিল্প ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে উভয় দেশের ভূমিকা কী হবে, সে বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। তবে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে ওবামার সাক্ষাৎ হবে না বলে আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছে হোয়াইট হাউজ।
এদিকে, কিউবা সরকার ও কাস্ত্রো পরিবারের সঙ্গে ওবামার এ সু-সম্পর্ককে ভালো চোখে দেখছেন না উভয় দেশের অনেকেই। এ তালিকায় কিউবার নাগরিকদের একাংশ যেমন রয়েছেন, একইভাবে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতা।
আর তাই বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে রাউল-ওবামার এ উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা সময়ই বলে দেবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩২ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৬
টিআই