ঢাকা: আচ্ছা, ১০ বছরের বাচ্চার ওজন স্বাভাবিকভাবে কত হওয়া উচিত? হিসেব মতো, ৩১-৩৫ কেজি মানানসই। তবে ৪০-৪৫ কেজি হলেও খুব বেশি অবাক হওয়ার কিছু নেই।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি ইংরেজি সংবাদমাধ্যম বুধবার (২৯ জুন) অ্যারিয়া পারম্যানা নামে ১০ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে স্পেশাল স্টোরি করেছে। যা সাধারণ মানুষকে রীতিমতো অবাকই করে দিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, অ্যারিয়া পারম্যানা হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে কমবয়সী সর্বোচ্চ ওজনের শিশু। যার ওজন ১৯২ কেজি। তবে তার উচ্চতা সুনির্দিষ্ট করে বলা না হলেও অন্য সাধারণ ছেলের মতোই।
অ্যারিয়ার জন্ম ইন্দোনেশিয়ার জাভা প্রদেশের গ্রামের এক কৃষক পরিবারে। জন্মের সময় তার ওজন স্বাভাবিক ছিলো। তবে ধীরে-ধীরে কখন যে বাবা-মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে এতো মুটিয়ে গেছে, তা কেউ ঠাওরই করতে পারেনি। এখন সে এতো মোটা এবং ভারী হয়ে গেছে যে, সবার চক্ষু চড়কগাছ। এমনকি বাজারের কোনো পোশাক তার গায়ে খাটে না। তাই অগত্যা লুঙ্গি জাতীয় ঢিলেঢালা পোশাকই তাকে পরতে হয়।
গোটা গায়ের মাংস এতো বেশি থল-থলে হয়েছে অ্যারিয়া ঠিক মতো হাঁটতে পারে না। ফলে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। সমবয়সীরা যখন মাঠে খেলে, তখন তাকে চেয়ে-চেয়ে শুধু দেখতেই হয়। সহপাঠীরও তার সঙ্গে খুব একটা ভাব জমাতে আগ্রহ দেখায় না। তাই বেশির ভাগ সময় তার পরিবারের সঙ্গেই বাড়িতেই কেটে যায়।
প্রতিদিন সে অন্তত পাঁচবার খাবার খায়। খাবারের মধ্যে রয়েছে ভাতা, মাছ, গরুর মাংস, সবজি ও বিভিন্নরকম ভেজিটেবল স্যুপ। প্রতিদিন সে যে পরিমাণ খাবার খায়, প্রাপ্ত বয়স্ক দু’জন মানুষের দিব্যি চলে যাবে। ইদানিং পরিবার থেকে ডায়েট কন্ট্রোলের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হলেও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
অ্যারিয়া পারম্যানার মা রোকেয়া সোমাট্রি বলেন, ‘আমার ছেলে খুব দ্রুত স্খূলকায় হয়ে যাচ্ছে। ওর স্বাস্থ্যের জন্য আমি খুব উদ্বিগ্ন। ’ রোকেয়া সোমাট্রি (৩৫) ও অ্যাদি সোমাট্রি (৪৫) দম্পতি দ্বিতীয় সন্তান অ্যারিয়া প্যারামোনা। অন্য আট-দশটা শিশুর মতোই তার জন্ম হয়। জন্মের দু’বছর পর থেকে তার স্বাস্থ্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে।
বাবা অ্যাদি সোমাট্রি বলেন, ‘প্রথমের দিকে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম না। বরং ওকে নিয়ে সুখী ছিলাম এই ভেবে যে, আমাদের সন্তান সু-স্বাস্থ্যবান। কিন্তু এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। ’
রোকেয়া বলেন, অ্যারিয়া আমার প্রথম ছেলে আরদি এবং অন্যান্য ছেলেমেয়েদের চেয়ে মোটা ছিলো। কিন্তু সেই স্থূলতাই উদ্বিগ্নতার কারণ হবে ভাবতেই পারিনি।
বিশ্বের সবচেয়ে স্থূল এই শিশুকে বেশ কয়েকবার ডাক্তার দেখানো হয়েছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডাক্তার তার অতিরিক্ত ওজনের বিষয়ে ভীতিকর কোনো কিছু খুঁজে পাননি।
সে সব সময় ক্লান্ত থাকে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হওয়ায় হাঁসফাঁস করে বলে তার পরিবার জানায়। মাসে অ্যারিয়ার জন্য সর্ব সাকুল্যে খাবার বাবদ খরচ হয় সাড়ে ১০ হাজার টাকা (একশ পাউন্ড)। তবে বাবা অ্যাদি তাকে উন্নত হাসপাতালে নিয়ে ভালো ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজনীতা অনুভব করছেন।
তিনি বলেন, ওর চিকিৎসার জন্য অনেক অর্থ খরচ করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আমি গরিব কৃষক, ব্যয়বহুল ও উন্নতমানের হসপিটালে চিকিৎসা নিতে সাধ্যে কুলোয় না। আমি এখন ক্লান্ত। তবে আমি স্বপ্ন দেখি, আমার ছেলে একদিন আপনা-আপনিই স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৬
টিআই