জার্মানির বন শহরে অনুষ্ঠিত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আলোচনা দরিদ্র ও ধনী দেশগুলোর তুমুল দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে রোববার শেষ হয়েছে। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিরকর প্রভাব মোকাবেলায় বিশ্বের আরেক দফা ব্যর্থতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ইউএনএফসিসিসি’র নির্বাহী সচিব ইভো ডি বোর বলেন, ‘গত ডিসেম্বরে শ্বাসরুদ্ধকর কোপেনহাগেন সম্মেলনের পরে জাতিসমূহের মধ্যে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। তাদের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই আলোচনা আগামী মেক্সিকোর কানকুন শহরে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনের পূর্ব প্রস্তুতি। সম্মেলনটি এ বছরের ২৯ নভেম্বরের থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘কানকুনে কার্বন নিঃসরণ, দরিদ্র দেশগুলোকে সহায়তা প্রদান ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কার্যকর সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। ২০০৭ সালে বালি সম্মেলনে চুক্তি করেছিলাম কোপেনহেগেনে আমরা সমঝোতায় পৌঁছাব। আমরা তা পারিনি। চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য কানকুন সম্মেলন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আশ্চর্য হলেও, জলবায়ু চুক্তি একটি আইনী কাঠামোয় রূপ দেওয়ার জন্য আমাদের দক্ষিণ আফ্রিকা সম্মেলন পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হতে পারে। আমার মনে হয়, কানকুন সম্মেলন ব্যর্থ হলে এই চলমান প্রক্রিয়ায় মারাত্মক আস্থাহীনতা জন্ম নিবে। ’
এদিকে বনে অনুষ্ঠিত তিনদিনের আলোচনায় উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অনাস্থা দেখা দিয়েছে: কোপেনহেগের চুক্তি সামনে এগিয়ে নেয়া হবে নাকি তা কবর দেয়া হবে।
২৪ জাতির সমর্থনে কোপেনহেগেন চুক্তি রূপ পায়। এই চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়, বিশ্বের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস-এর নিচে রাখতে হবে, জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত জাতিগুলোকে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২০ সাল পর্যন্ত বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা প্রদান করতে হবে।
বিপর্যয় রোধে চুক্তিটা আবার রোববার আবার সামনে আনা হয়। তবে এটা ১৯৪টা দেশের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে জানানো হয়, চুক্তিটি ভবিষ্যতে কাজের জন্য একটি প্লাটফর্ম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি জোনাথান পার্শিং জানান, কোপেনহেগেন থেকে সামনে এসেছে আমাদের পৃথক একটি পরিকল্পনা দরকার। তিনি এও বলেন, যেসব দেশ কোপেনহেগেন চুক্তি অমান্য করেছে তারা আর্থিক সহায়তার আওতায় পড়বে না। উল্লেখ্য, ক্যারিবীয় ও লাতিন আমেরিকার বামপন্থী সরকারগুলো এই চুক্তিকে অগণতান্ত্রিক ও জাতিসংঘের নীতির বিরোধী বলে অভিহিত করে।
কয়েক দশকের মধ্যে পৃথিবীর জলবায়ৃ ব্যবস্থার বিপর্যয়ে লাখ লাখ মানুষ দুর্দশার মধ্যে পড়বে। বন্যা, খরা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ঝড় আরো তীব্র আকার ধারণ করবে।
বাংলাদেশ সময় ০৪২৯ ঘণ্টা