মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বের মোট ৫২ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর মধ্যে জেনারেল সোয়েও রয়েছেন বলে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, মাউং মাউং সোয়ের নেতৃত্বে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন, নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এর জন্যে জেনারেল সোয়ে জন্য দায়ী।
কালো তালিকায় অন্যদের মধ্যে এশিয়ার দেশগুলোর নাগরিকদের মধ্যে রয়েছেন পাকিস্তানের চিকিৎসক ডা. মুখতার হামিদ শাহ। তিনি দারিদ্র্যের শিকার শ্রমিকদের অপহরণ করে অঙ্গ কেটে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
খবরে বলা হয়, এই কালো তালিকার আওতায় থাকা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দ করা হবে ও যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিক এই ৫২ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন করলে তাদেরও নিষিদ্ধ করা হবে।
এর আগে জেনারেল সোয়েকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে গত নভেম্বরে তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হওয়ার পর গত মাসে জেনারেল সোয়েকে বদলি করা হয়। তবে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাকে বদলির কারণ সম্পর্কে কিছু বলেনি।
গত ২৫ আগস্ট থেকে জঙ্গি অভিযানের নামে রাখাইনে দমন-পীড়ন চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় অধিবাসী মগরা।
সেখানে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে তারা। ওইদিন থেকেই বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গা ঢল নামে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসেবে এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
তাদের মধ্যে কেউ এসেছেন গুলিবিদ্ধ অবস্থায়, অনেকেরই শরীরে পোড়া ক্ষত। নারী-পুরুষ শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবাইকেই নির্যাতন করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।
যা বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বর্ণনায় বিভিন্ন সময় দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমেও উঠে এসেছে। মিয়ানমার বাহিনীর এই হত্যাযজ্ঞকে ‘জাতিগত নিধন’ অভিযানের বাস্তব উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ।
নিরীহ রোহিঙ্গাদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজ করলেও মিয়ানমার সেনাবাহিনী বলছে, এটা ছিল রোহিঙ্গা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান, সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করা হয়নি।
পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণের জন্য রাখাইনে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক তদন্ত দল পাঠাতে চাইলেও অনুমতি দিচ্ছে না ‘সেনা প্রভাবিত’ মিয়ানমার সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৭
এমএ/