ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

‘তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে নিহত হয়েছিলেন ১০ হাজার মানুষ’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭
‘তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে নিহত হয়েছিলেন ১০ হাজার মানুষ’ তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে অভিযানের পর চীন এ বিষয়ে কথা বলাও নিষিদ্ধ করে। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ১৯৮৯ সালে বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে চীনের গণতন্ত্রপন্থিদের বিক্ষোভে সেনাবাহিনীর কঠোর দমন অভিযানে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। দীর্ঘ ২৮ বছর পর প্রকাশিত এক তার বার্তায় এমনটা জানা গেছে।

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, বেইজিংয়ে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত লন্ডনে পাঠানো এক তার বার্তায় দাবি করেছিলেন-তিয়েনআনমেনে সেনাবাহিনীর অভিযানে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।

সম্প্রতি এই কূটনৈতিক বার্তাটি ব্রিটেনের জাতীয় আর্কাইভ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে।

তৎকালীন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত অ্যালান ডোনাল্ডের ভাষায়, ‘নিহতের আনুমানিক ন্যূনতম সংখ্যা হচ্ছে ১০ হাজার। ’

তবে তার দেওয়া এই হিসাবে তখনকার নিহতের সংখ্যা সম্পর্কে অন্যদের অনুমান থেকেও প্রায় ১০ গুণ বেশি।

ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত অ্যালান ডোনাল্ডের সম্প্রতি প্রকাশিত বার্তায় চীনা সেনাবাহিনীর অভিযানের নৃশংসতার চিত্রের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।

তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে গণতন্ত্রপন্থিদের বিক্ষোভ সাত সপ্তাহ ধরে চলে। এরপর ৩ ও ৪ জুন রাতে ট্যাংক নিয়ে বিক্ষোভস্থলে ঢুকে যায় সেনাবাহিনী।  

ডোনাল্ড তার বার্তায় বলেন, তিয়েনআনমেন স্কোয়ারের বিক্ষোভকারীদের ওপর সেনাবাহিনীর আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) থেকে সরাসরি গুলি চালানো হয়। এরপর সেসব মানুষের ওপর এই এপিসি চালিয়ে দেওয়া দেয় সেনাবাহিনী।

‘ওই অভিযোগে চারজন ছাত্রী আহত হয়েছিল, যারা বাঁচার জন্য প্রাণভিক্ষা চায়। পরে তাদের সেনাবাহিনীর অ্যাম্বুলেন্সে করে চিকিৎসা দেওয়া হয়,’ জানিয়েছিলেন ডোনাল্ড।

‘সৈন্যরা তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে হাজির হওয়ার পর বিক্ষোভরত ছাত্রদের সেই জায়গা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য একঘণ্টা সময় দেয়। কিন্তু কার্যত পাঁচ মিনিট পরই সেনাবাহিনী তাদের আক্রমণ শুরু করে। ’

ওই কূটনীতিক বার্তায় বলা হয়, ‘ছাত্ররা হাতে হাত বেঁধে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় তাদের ওপর গুলি চালিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর এসব মৃতদেহের ওপর দিয়ে বারবার সাঁজোয়া গাড়ি চালিয়ে তাদের পিষ্ট করে ফেলা হয়। ’

‘এরপর বুলডোজার দিয়ে নিহতদের দেহাবশেষ সরিয়ে ফেলা হয়। হোস পাইপ দিয়ে পানি ছিটিয়ে পরিষ্কার করে ফেলা হয় তিয়েনআনমেন স্কোয়ার। ’

ফরাসি বিশেষজ্ঞ জ্যঁ পিয়েরে ক্যাবেস্টান বলেন, তখন বেইজিংয়ে যে পরিমাণ মানুষের সমাগম ঘটেছিল তাতে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের এই রিপোর্ট অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়।

তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে থেকেই বেইজিংয়ে অবস্থান করেছিলেন তিনি।

১৯৮৯ সালের জুনে চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়, তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে সেনাবাহিনীর অভিযানে ২০০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। এছাড়া পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ১২জনের মৃত্যু হয়।  

এদিকে ঘটনার প্রায় ৩ দশক পরও চীনে গণতন্ত্রপন্থিদের এই বিক্ষোভ এবং সেনাবাহিনীর অভিযান নিয়ে কোনো কথা বলা যায় না। এমনকি দেশটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যবই বা সংবাদমাধ্যমেও এ নিয়ে কোনো লেখা কিংবা আলোচনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।