ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ডিভি লটারি নয়, মেধাভিত্তিক অভিবাসনের কথা বললেন ট্রাম্প

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৮
ডিভি লটারি নয়, মেধাভিত্তিক অভিবাসনের কথা বললেন ট্রাম্প প্রথম স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন অ্যাড্রেস দিচ্ছেন ট্রাম্প। ছবি-সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার রাতে তার প্রথম ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন অ্যাড্রেসে’ যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিসহ নানা ক্ষেত্রে পলিসিগত পরিবর্তন আনার আহবান জানিয়েছেন। এসবের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি, যা তিনি ঢেলে সাজাতে চান।

এক্ষেত্রে তিনি তার প্রশাসনের তরফে নানামুখি পদক্ষেপ ও অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন।   

যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে প্রেসিডেন্টের দেওয়া ঐতিহ্যবাহী বার্ষিক ভাষণ বা ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন অ্যাড্রেসে’ অভিবাসন নীতির আমূল পরিবর্তনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্য হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের জন্য এতোদিন ধরে প্রচলিত ‘লটারি’ বা দৈবচয়ন পদ্ধতিটি আর রাখা যাবে না। বরং অভিবাসন হবে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে।

ট্রাম্পের ভাষায়, "সময় এসেছে একটি মেধাভিত্তিক অভিবাসন পদ্ধতির দিকে ধাবিত হবার। এমন এক পদ্ধতি যা অভিবাসী হিসেবে তাদেরকেই অন্তর্ভুক্ত করবে যারা দক্ষ ও মেধাবী, যারা কাজ করতে চায়, যারা আমাদের সমাজে অবদান রাখবে এবং যারা আমাদের দেশকে ভালোবাসবে এবং সম্মানের চোখে দেখবে।

মার্কিন অভিবাসনের জন্য তিনি ৪টি ধাপের (‘ফোর পিলারস’) সংস্কার-নীতির প্রস্তাব করেন। এই চার ধাপের তিনটি হলো মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ, বিরামহীন অভিবাসনের অবসান ঘটানো এবং ডিভি লটারি নামে পরিচিত ডাইভারসিটি ভিসা উঠিয়ে দেওয়া।  

মেধাভিত্তিক অভিবাসন পদ্ধতি প্রবর্তনে একটি আইন প্রণয়নের জন্য তিনি কংগ্রেসের প্রতি আহবান জানান।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত এই নতুন অভিবাসন পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিবাসন প্রত্যাশী লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হবে। তবে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় মেধাবী পেশাজীবীর জন্য খুলে যাবে সুযোগের সুবর্ণ দুয়ার।

বার্ষিক ভাষণে তিনি বিশেষ ধরনের ১৮ লাখ অবৈধ অভিবাসীর বৈধ হওয়ার জন্য কয়েকটি উপায়ের প্রস্তাব করেন। শিশু অবস্থায় বাবা-মায়ের

হাত ধরে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো এসব অবৈধ অভিবাসী কয়েকটি ধাপের শর্তপূরণ করে যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ নাগরিক হতে পারবেন।

এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজ ও নৈতিক চরিত্র বা ভালোমানুষিতা।

তার রিপাবলিকান ও বিরোধী ডেমোক্রেট দল উভয় পক্ষই তার প্রস্তাবটিকে সমর্থন করবে বলে আশা প্রকাশ করে ট্রাম্প বলেন,

দেশের স্বার্থে সবাইকে ক্ষুদ্র মতভেদ ভুলে যেতে হবে।

বর্তমানে প্রচলিত অভিবাসন পদ্ধতিতে মান্ধাতা আমলের এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিপরীত বলে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ডিভি লটারির নামে দৈবচয়ন পদ্ধতির মাধ্যমে যার তার হাতে বাছবিচারহীননভাবে গ্রিন কার্ড তুলে দেওয়া হচ্ছে। ওদের যোগ্যতা, মেধা আছে কিনা বা এদের হাতে ভবিষ্যতে আমেরিকা নিরাপদ থাকবে কিনা তা মোটেই আমলে নেয়া হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না।

অতি সাম্প্রতিক নিউ ইয়র্কে দুটো পৃথক সন্ত্রাসী হামলা ডিভি লটারি ভিসা এবং চেইন ইমিগ্রেশনের কারণেই সম্ভব হয়েছে।  

এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়ার এই যুগে এ ধরনের ঝুঁকি নেওয়ার সুযোগ আর আমাদের নেই। আমাদের এখন অভিবাসনের মান্ধাতার আমলের পদ্ধতি বাদ দিয়ে ২১ শতকের উপযোগী অভিবাসন নীতি প্রবর্তন করতে হবে।

ট্রাম্পের দাবি রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটরা যদি ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এ বিষয়ে অভিন্ন অবস্থান নেয় তাহলেই ‘সবার আগে আমেরিকা’ কথাটি বাস্তবায়িত হবে।

ভাষণের পুরোটা সময়জুড়ে ট্রাম্প ছিলেন প্রাণবন্ত, টগবগে, উচ্ছল আর তেজী। মার্কিন সংবাদ মাধ্যমের ভাষায়, প্রেসিডেন্ট ওয়াজ ইন ‘বুলিশ মুড’।

তার এই বুলিশ মুডের পরিচয় মিলেছে নিজের শাসনামলের ইতিবাচক অর্জনের ফিরিস্তি দিতে গিয়ে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান বাড়ানো সহ নানা ক্ষেত্রে অর্জিত সফলতাকে তিনি ‘অসাধারণ সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অবিশ্বাস্য উন্নতি আর অসাধারণ সফলতা অর্জন করেছে।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের শাসনামলের মূল্যায়ন করতে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত অতিশয়োক্তি করতেও পেছপা হননি ট্রাম্প: ‘‘ আমেরিকান ড্রিম নিয়ে জীবনযাপন শুরু করার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আগে কখনো আসেনি। ’’

গুয়ান্তানামো বে-তে চালু থাকা মার্কিন নির্যাতন শিবির বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা তার নেই বলে জানান ট্রাম্প। বরং দৃঢ়তার সঙ্গে জানান, এটা চালু আছে চালু থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৮
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।