এক আবেদনের প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে ইরানের সংস্কৃতি ও গণমাধ্যম বিষয়ক আদালত টেলিগ্রাম বন্ধের ওই নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্রমান্বয়ে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর এ বিষয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সরকারের ‘সংস্কারবাদী’ মন্ত্রী-এমপিরা টেলিগ্রাম বন্ধের জন্য গত ডিসেম্বর থেকেই পীড়াপীড়ি করছিলেন। ওই ডিসেম্বরে অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও দুর্নীতির অভিযোগে সরকারের বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভ হয়েছিল, তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে টেলিগ্রামের দায় ছিল বলে মনে করেন রুহানির লোকেরা।
পর্যবেক্ষকদের ধারণা, আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে সৌদি আরবের সঙ্গে উত্তেজনা, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া, ইয়েমেন ও ইরাকের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাত্রাতিরিক্ত হস্তক্ষেপের প্রেক্ষিতে ইরানের ওপর যে আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে, তাতে দেশটির জনগণ হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তারা চায়, সরকার আর কোনও ব্যয়বহুল যুদ্ধে না জড়িয়ে জনগণের জীবনযাত্রার উন্নয়নে কাজ করুক। কিন্তু রক্ষণশীল নেতৃত্ব সে জায়গা থেকে সরে আসতে চায় না বলেই তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়।
ডিসেম্বর ছড়িয়ে পড়া ওই বিক্ষোভে ২৫ জনের প্রাণ যায়। গ্রেফতার করা হয় সাড়ে তিন হাজার বিক্ষোভকারীকে। টেলিগ্রাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে সেসময় দলীয় লোকদেরই সমালোচনায় পড়ে সরকার।
ইরানের প্রায় ৮ কোটি জনগণের মধ্যে প্রায় অর্ধেক লোকই টেলিগ্রাম ব্যবহার করে। ব্যবসা বা বিনোদনের জন্য সামাজিক যোগাযোগের এই প্লাটফর্মটিই এতোদিন চালু ছিল। টুইটার, ফেসবুক ও ইউটিউব বন্ধের পর এই মাধ্যমটিও অচল করে দেওয়ায় নতুন করে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে মুক্তচিন্তার মানুষদের মধ্যে।
অনেকে টেলিগ্রাম বন্ধের কারণে সমালোচনার তীর ছুড়ছেন প্রেসিডেন্ট রুহানির উদ্দেশে। তারা বলছেন, ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় তিনি মতপ্রকাশের ব্যাপারে আরও উদার হওয়ার অঙ্গীকার দিয়ে এখন টেলিগ্রামও বন্ধে করে দ্বিচারিতা প্রকাশ করেছেন।
টেলিগ্রাম বন্ধের কারণে স্থানীয় অনেক মানবাধিকার সংগঠনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এইচআরডব্লিউও নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলছে, মতপ্রকাশ ও অবাধ তথ্য প্রচারের ওপর এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত ‘অযৌক্তিক’।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১৮
এইচএ/