এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত বেসরকারি ফলাফলে ৬০ সংসদীয় আসন নিয়ে এগিয়ে আছে রাজাকের এক সময়কার রাজনৈতিক গুরু ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের পাকাতান হারাপান (পিএইচ)। আর ক্ষমতাসীন বারিসান ন্যাশনাল (বিএন) পেয়েছে ৫৩ আসন।
কোনও দল ১১২টি আসন পেলেই সরকার গঠন করতে পারবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল সমমনা কাউকে নিয়ে এই সংখ্যক আসন দেখিয়েও সরকার গড়তে পারবে।
উন্নয়নের দিক থেকে মালয়েশিয়াকে এশিয়ার ইউরোপ বলা হলেও দেশটিতেও রয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন। সেখানে কারচুপি করে নির্বাচনে জেতার অভিযোগ পুরনো। গত কয়েক বছরে নাজিব রাজাকের প্রধান সমালোচকে পরিণত হওয়া আধুনিক মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মাহাথির এই অভিযোগকে আরও বেশি আওড়েছেন এবার। ফলাফল বিরুদ্ধে গেলে দু’পক্ষই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত সহিংসতায় গড়ায় কি-না, সে নিয়ে সন্দিহান বিশ্লেষকরা।
নির্বাচনকে ঘিরে দেশটির সাধারণ জনগণ দুই জোটের হয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেন। মঙ্গলবার (৮ মে) দেশটির স্থানীয় সময় রাত ১২টায় শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক গত ৬ এপ্রিল পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। এবারের নির্বাচনটি ক্ষমতাসীন জোটের জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হতে চলেছে বলে মত দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
মাহাথির মোহাম্মদ যদি নির্বাচনে অংশ না নিতেন, তাহলে এ নির্বাচন একপেশে হতো বলে অনেকের ধারণা। তার সাবেক দল ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনকে এ নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন মাহাথির মোহাম্মদ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের কর্মকাণ্ডে হতাশ হয়ে ২০০৩ সালে এ দল থেকে পদত্যাগ করেছিলেন মাহাথির। সেখান থেকে পদত্যাগের পর মাহাথির নিজেই একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। সে দল সরকার বিরোধী জোটে যোগ দেয়।
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদকে আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি বলা হয়। তিনি ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। তার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দল ইউএমএনও টানা পাঁচবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। টানা ২২ বছর পর ২০০৩ সালের ৩০ অক্টোবর তিনি স্বেচ্ছায় প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন।
অপরদিকে স্টেট ফান্ড অর্থ কেলেঙ্কারি এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে নিয়ে তেমন সন্তুষ্ট নন মালয়েশিয়ার সাধারণ জনগণ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে তিনি ৭০০ মিলিয়ন ডলার নিজের অ্যাকাউন্টে সরিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে রাজাক বলেছেন, এ অর্থ সৌদি সরকারের কাছ থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া।
এতো কিছুর পর ভোটগ্রহণ শেষে এখন ফলাফলের অপেক্ষা। যার মাধ্যমে হবে রাজাক যুগের অবসান, নতুবা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি!
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৮
জেডএস