জনতাত্ত্বিক গণহত্যা চলছে চীনে। ডেমোগ্রাফিকাল জেনাসাইড।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি) শি-র নেতৃত্বে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করছে। সন্তান ধারণের অধিকার থেকে শুরু করে নাগরিকদের ব্যক্তিজীবনেও হস্তক্ষেপ করছে প্রশাসন। সামাজিক সংস্থাগুলির অস্তিত্বকে করা হয়েছে শুধু সরকারমুখী। সন্তান ধারণের মতো মৌলিক অধিকারও কেড়ে নিচ্ছে সিসিপি। চীনের এই দানবিক কাজকর্মের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারীরা। তাদের মাতৃত্ব আজ বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে।
জিনজিয়াং প্রদেশে উইগুর মুসলিম নারীদের মধ্যে চীন তাদের পরিবার পরিকল্পনা নীতিকে কঠোরভাবে রূপায়ণ করতে গিয়ে লুণ্ঠন করছে মানবাধিকারকে। নারীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের গর্ভপাত করতে বাধ্য করা হচ্ছে। উইগুর নারীদের বন্ধ্যাত্বকরণেও বাধ্য করছে সিসিপি। গোপনে তাদের মাতৃত্বের অধিকারও ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
উইগুরদের সংখ্যা কমিয়ে আনতেই সিসিপি এ ধরনের বর্বরোচিত কাজকর্ম করে চলেছে। তারা চাইছে উইগুরদের ভবিষ্যতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তুলতে। উত্তরসূরীও যাতে রেখে যেতে না পারেন চীনে বসবাসকারী উইগুররা তারই জন্য সচেষ্ট সিসিপি। প্রযুক্তির ব্যবহার করে নারীদের সন্তান গর্ভধারনের অধিকারও আজ বিপন্ন করে তোলা হচ্ছে। শুধু উইগুরদেরই নয়, কাজাখ ও তিব্বেতিয়ানদের সঙ্গেও একই আচরণ করা হচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলেও সিসিপি মোটেই বিষয়টিকে আমল দিতে নারাজ। অবাধে চলছে জনতাত্ত্বিক গণহত্যা।
সংখ্যালঘু নারীদের ওপর চলছে গণ বন্ধ্যাত্বকরণ। বন্ধ্যাত্বকরণের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ডিভাইস। উইগুর মুসলিমদের মধ্যে ৮০ শতাংশই এই বন্ধ্যাত্বকরণের শিকার। এছাড়া উইগুর নারীদের বাধ্য করা হচ্ছে অন্য সম্প্রদায়ের পুরুষকে বিয়ে করতে। কারণ তাতে করে বাড়বে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ। কমবে মুসলিম জনসংখ্যা। ভ্রুণ অবস্থাতেই উইগুরদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলতে মরিয়া চীন। এর জন্য জিনজিয়াঙের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। নামে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হলে কী হবে, আসলে এগুলি সবই জেলের থেকেও খারাপ। সেখানে নরকযন্তচ্রনা ভোগ করছে নারীদের। চীনের এই অন্তঃকরণ শিবির গুলিতে নারীদের বাধ্যতামূলকভাবে করা হচ্ছে বন্ধা। লুকিয়ে থাকার কোনও উপায় নেই। চীনা পুলিশ তাঁদের ধরে এনে ভরছে এই অঘোষিত জেলে। সেখানেই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তাঁদের মাতৃত্বের অধিকার। যন্ত্রের সাহায্যে নারীত্ব হরণের পাশাপাশি রয়েছে গর্ভনিরোধক বড়ি খাওয়ারও নির্দেশ। নির্দেশ অমান্য করার কোনও উপায় নেই। বরং হাসিমুখেই মানতে হচ্ছে রকারি নির্দেশ। নইলে বিচ্ছিন্নতাবাদী বা জঙ্গি তকমা লাগিয়ে শুরু হবে বিচারের নামে প্রহসন এবং আরও কঠোর শাস্তি।
এ ধরনের নৃশংসতা মানুষের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার করেছে। আর এটাই চাইছে সিসিপি। সংখ্যালঘু নারীরা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সন্তান জন্ম দেওয়ার বিষয়ে বিন্দুমাত্র স্বাধীনতা পাচ্ছেন না। তাদেরকে সমাজের চোখে নীচু করে রাখা হয়েছে। সংখ্যালঘু নারীদের বিন্দুমাত্র মর্যাদা নেই চীনের কাছে। উইগুর নারী হয়ে জন্মানো নাকি অপরাধ। তাই তাদের পুড়িয়ে মারারও বিধান আছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির। মুসলিম নারীদের সকল অধিকারই ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। সন্তান ধারণের অধিকার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত। ইচ্ছামতো জুলুমও চলছে নারীদের ওপর। বাধা দিলেই পরিবারের ওপর নেমে আসছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। সিসিপির পৈশাচিক আচরণ মুখ বুঝে সহ্য করছেন উইগুর নারীরা। তাদের আর্তনাদেও জাগছে না বিশ্ব মানবিকতা। অবশ্য, অগণতান্ত্রিক চীনের এই অমানবিক আচরণের অনেকটাই থেকে যাচ্ছে গোপন। কারণ সেখানে গণমাধ্যমেরও স্বাধীন মত প্রকাশ বা সঠিক তথ্য পরিবেশনের বিন্দুমাত্র অধিকার নেই। তবু পাশ্চাত্যের মিডিয়া উপগ্রহের ছবি আর পালিয়ে আসা উইঘুরদের সাহায্যে কিছুটা হলেও আলোকপাত করতে পেরেছে নারীদের ওপর অমানবিক অত্যাচারের।
সম্প্রতি চীন উইগুর নারীদের বিয়ে করার জন্য হ্যান চীনাদের আকর্ষিত করতে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। তাদের উতসাহ দেওয়া হচ্ছে উইগুর মুসলিমদের বিয়ে করার জন্য। এটাও এক ধরনের গণহত্যা। শি সরকার সরাসরি হ্যান যুবকদের বলছে, 'আসো। মেশো। সংসার করো। ' সরকারি উদ্যোগে গণ ধর্ষণের বন্দোবস্ত করারই নামান্তর চীন সরকারের এই উদ্যোগ। স্বামীদের জোড় করে শ্রম শিবিরে পাঠিয়ে নারীদের ভোগ্যপণ্য করে তোলা হচ্ছে। যৌণ পণ্যে পরিণত করা হয়েচে মুসলিম নারীদের। বাধ্য করা হচ্ছে হ্যান যুবকদের বিয়ে করতে বা বিয়ের নামে বাদ্য করা হচ্ছে হ্যান যুবকের ভোগদাসী হয়ে উঠতে। হ্যান যুবকরা উইঘুর নারীদের ভোগ করার বিনিময়ে বোনাস হিসাবে পাচ্ছে সরকারি চাকরি বা আর্থিক সহায়তা।
সংখ্যালঘুরা এমনিতেই খুব গরীব। গরীব নারীদের মধ্যে অশিক্ষা আর তথাকথিত সভ্যতার অভাবকে পুঁজি করে চীন চাইছে তাঁদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে আরও পিছিয়ে রাখতে তাঁদের। উইঘুরদের জমসংখ্যা যাতে কোনও অবস্থাতেই বৃদ্ধি না পায় তারজন্য শারীরিক ও মানসিক একাধিক শাস্তির বিধান রয়েছে জিনজিয়াং প্রদেশে। মুসলিমদের কোনঠাসা করতে সব ধরনের মানবাধিকারই লঙ্ঘিত হচ্ছে চীনে।
উইঘুরদের মতোই চীনের ভয়ঙ্কর অত্যাচারের শিকার তিব্বতীয়রাও। তিব্বতে চীন যেধরনের অত্যাচার চালাচ্ছে তার থেকেই বোঝা যায় দেশের ভিতরে তিব্বতিরা কতোটা অত্যাচারের মধ্যে রয়েছেন। সিসিপি তিব্বতীয় নারীদেরও গর্ভ নিয়ন্ত্রন করছে। পুলিশ দিয়ে গর্ভপাত করাটা চীনে এখন জলভাত হয়ে গিয়েছে। মেয়েদের ঋতুচক্রে পর্যন্ত আঘাত হানছে চীন। তিব্বতীরাও গণহত্যার শিকার। সরকারই যৌণ ব্যবসাকে প্রসারিত করতে চাইছে। আবার নারীদের চাকরির ক্ষেত্রে কুমারিত্বের প্রমাণ দিতে হচ্ছে। তিব্বতী নারীদেরকেও অসম্মান করে চলেছে সিসিপি। তিব্বতীদের মানসিক বিকাশই নাকি হয়নি। তাঁরা যদি নিজেদের রাজনৈতিক মতামত ব্যক্ত করেন বা কোনও প্রতিবাদে অংশ নেন, তবে বলা হয় তাঁরা নাকি মানসিক প্রতিবন্দ্বী। এরপর চলে যথেচ্ছ অত্যাচার, যৌণ নির্যাতন। মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়ে উঠেছে নিত্যদিনের বিষয়।
শি প্রশাসনের আগ্রাসন নীতি নজিরবিহীন। মানবাধিকারকে তছনছ করে দিয়ে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে তাঁদের তূলনা দুনিয়া বোধহয় দ্বিতীয় উদাহরণ নেই। মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও তাঁরা সংখ্যালঘুদের দিতে চাননা। উইঘুর বা তিব্বতীরা হারিয়ে ফেলেছেন তাঁদের স্বাভাবিক ছন্দে বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকার। চীনের এধরনের আচরন অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার লোক কম। মুসলিমরা সেখানে নির্যাতিত হলেও পাকিস্তান বা তুর্কি প্রশাসন এবিষয়ে নিরব। চীনের আর্থিক সহায়তা বন্ধের ভয়ে আরব দুনিয়াও কোনও কথা বলছেনা। ফলে উইঘুর নারীদের আর্তনাদ নিয়ে মুসলিম দুনিয়ার তেমন মাথাব্যাথাও নেই। তবে আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়া প্রতিবাদ শুরু করেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা।
চীনের এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি বরদাস্ত করাটাও অন্যায়। নারীদের বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও কেড়ে নিচ্ছে তাঁরা। ইসলাম ধর্মের প্রসার রোধে হত্যা করা হচ্ছে ভ্রুণ। গর্ভ নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে পুলিশ-মিলিটারি দিয়ে। এটা সভ্য জগতের পক্ষেই অপমনাজনক। নারীর সমানাধিকার নিয়ে গোটা দুনিয়া যেখানে সরব, চীন তার উল্টো পথে চলছে। তাই গোটা দুনিয়ার উচিত হাতে হাত মিলিয়ে সিসিপির এই গণহত্যা লবন্ধে অবিলম্বে চীনকে বাধ্য করা। এই ভাবে গণহত্যা চালিয়ে যাওয়াটা হবে মানব জাতির পক্ষেই লজ্জাজনক। মুসলিম নারীদের মানবাধিকার সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে চীনকে বাধ্য করা জরুরি। সেটাই করুক বিশ্ব, চাইছেন উইগুররা।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৩ গণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২০
নিউজ ডেস্ক