ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

অন্যের হক আদায় করতে হবে সময়মতো 

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৯ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৪
অন্যের হক আদায় করতে হবে সময়মতো 

ঋণ ও অন্যের অধিকার আদায় ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দুইটি বিধান। তাই অপর মুসলমানের প্রত্যেকটি অধিকার যথাযথ পালন করতে হবে।

 

ঋণ নিলে তা নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করে দেওয়া অত্যাবশ্যক। লেনদেন বা ঋণ বিষয়ে ইসলাম আমাদের বারেবারে সতর্ক করেছে। কোনো মানুষের ধন-সম্পদ অবৈধ পন্থায় ভোগ না করতেও সতর্ক করেছে। অন্যের প্রাপ্য আদায় করে দেওয়া এবং এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করা ইবাদতও বটে।  

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৮) 
একজন মুসলমানের ওপর অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য হলো, অন্যের সকল হক-অধিকার পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রদান করা। পাশাপাশি সে ঋণ ও অধিকার নিয়ে খামখেয়ালি বা গড়িমসি, অনধিকার চর্চা করা এবং প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন না করা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ধনী ব্যক্তির (ঋণ আদায়ে) গড়িমসি করা জুলুম। ’ (বুখারি ও মুসলিম শরিফ) 

ধনী-সামর্থ্যবান ব্যক্তি গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া ঋণ আদায়ে অবহেলা করা হারাম। এটি প্রতিপক্ষের প্রতি অন্যায়। এমন কার্যকলাপের কারণে একালে ও পরকালে লজ্জিত হতে হবে।  

ইসলাম ঋণ ও লেনদেনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। অনেক বড় মান-মর্যাদা দিয়েছ। একজন ফিকহ শাস্ত্রজ্ঞ এটিকে ‘দ্বিনের অর্ধেক’ বলেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) রাসুল (সা.) সম্পর্কে বর্ণনা করেন, ঋণগ্রস্ত মৃত ব্যক্তির লাশ (জানাজার জন্য) হাজির করা হলে রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করতেন, ‘সে কি অপরিশোধিত কোনো ঋণ রেখে গেছে? যদি বলা হতো, তিনি পরিশোধ করে গেছেন, তাহলে তিনি তার (জানাজা) নামাজ পড়াতেন। অন্যথায় বলতেন, তোমরা তোমাদের সাথীর জানাজা পড়ে নাও। ’ (বুখারি ও মুসলিম) 

আমাদের মাঝে এমনও আছে যারা ঋণ নিয়ে খুব উদাস মনোভাব পোষণ করেন। ঋণদাতার অধিকারের প্রতিও সজাগ দৃষ্টি রাখে না। রাসুল (স.) বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় প্রাণ উৎসর্গকারী শহিদের ঋণ ব্যতীত তার অন্য সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। ’ 

হাশরের ময়দানে ঋণদাতাকে তার প্রতিপক্ষের নেক আমল দিয়ে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যের প্রতি অন্যায়-নিপীড়ন করেছে বা কারো অধিকার হরণ করেছে, সে অর্থ-কড়ি দিয়ে তা পরিশোধের সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আগে যেন মিটিয়ে দেয়, অন্যথায় তার প্রতিদান হিসেবে প্রতিপক্ষের নেক আমল ঋণদাতাকে দেয়া হবে, এমনকি তার কাছে ঋণ-সমপরিমাণ নেক আমল না থেকে থাকে, তবে ঋণদাতার বদ আমল প্রতিপক্ষের ঘাড়ে তুলে দেয়া হবে। ’ (বুখারি শরিফ) 

অন্য মুসলমান ভাই থেকে ঋণ গ্রহণকালে তা যথাযথ সময়ে পরিশোধের মনোভাব তৈরি করতে হবে। লেনদেন প্রদানে শুদ্ধ ও সুন্দর নিয়ত থাকবে। হৃদয়ে সুস্পষ্ট সংকল্প করতে হবে। এর দ্বারা আল্লাহ তার জন্য পরিশোধের পথ-পাথেয় যোগাবেন। সকল বাধা-বিপত্তি দূর করে দেবেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যের সম্পদ গ্রহণ করে এবং তা আদায়ের পূর্ণ ইচ্ছা রাখে; আল্লাহ তায়ালা তার পক্ষ থেকে তা আদায়ের ব্যবস্থা করেন। আর যে তা গ্রহণ করে বিনাশের ইচ্ছা করে; আল্লাহ তায়ালা তাকে ধ্বংস করে দেন। ’ (বোখারি) 

অন্য দিকে আল্লাহতাআলা ঋণদাতাকে তার প্রতিপক্ষের প্রতি সদয় হতে বলেছেন। ইচ্ছে থাকার পরও ঋণ প্রদানে অক্ষম হলে তাকে সময় দিতে হবে। ‘যদি ঋণগ্রহীতা অভাবগ্রস্ত হয়, তবে তার সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দেওয়া উচিত। আর যদি ক্ষমা করে দাও, তবে তা খুবই উত্তম, যদি তোমরা উপলব্ধি করো। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮০) 

ঋণ গ্রহণের পর কোনো বিপদাপদে মুখোমুখি হয়ে যদি কেউ নিজ দুর্বলতা অবলীলায় স্বীকার করে। তার ঋণ মাফ করার প্রত্যর্পণের দায়িত্ব নিয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক ব্যবসায়ী ছিলেন যিনি মানুষদের ঋণ দিতেন, পরে যখন ঋণ গ্রহীতাকে অপারগ দেখতেন, তিনি তার ছেলেদের ডেকে বলে দিতেন, অমুক ব্যক্তির কাছে দেনা দাবি করো না। হয়তো এর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের মাফ করে দিবেন। পরে আল্লাহ তাকে মাফ করে দিয়েছেন। ’ (বুখারি ও মুসলিম শরিফ) ।  

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৪
এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।