ঢাকা, সোমবার, ২২ পৌষ ১৪৩১, ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫ রজব ১৪৪৬

ইসলাম

মৃত্যু সম্পর্কে হাদিস যা বলে

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২৫
মৃত্যু সম্পর্কে হাদিস যা বলে সংগৃহীত ছবি

মানুষ মরণশীল। ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে স্থায়ী নয় কেউ-ই।

দুনিয়ার টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে ছেড়ে একদিন পাড়ি জমাতে হবে ওপারে। যেখানে বন্ধু হবে না কেউ, হবে না শত্রুও।

নিজেকেই নিজের দায়িত্ব নিতে হবে। পবিত্র কোরআন শতাব্দীর পর শতাব্দী জীবন ও জগৎ সম্পর্কে কোটি কোটি মানুষের অন্তর্দৃষ্টি খুলে দিয়েছে, বদলে দিয়েছে ভেতর থেকে, খুলে দিয়েছে তাদের সম্ভাবনার দ্বার, দিয়েছে প্রশান্ত ও পরিতৃপ্ত জীবন। এই জীবনের সঙ্গে মৃত্যুও যে জড়িত তা-ও উল্লেখ আছে আল কোরআনে। শুধু কোরআনে নয়, হাদিসেও আছে মৃত্যু সম্পর্কে অনেক আলোচনা।

মৃত্যু সম্পর্কে হাদিস কী বলে?

ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার কাঁধ ধরে বললেন, ‘দুনিয়াতে এভাবে কাটাও যেন তুমি একজন মুসাফির বা পথিক। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪১৬; তিরমিজি, হাদিস : ২৩৩৩; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১১৪)

ইবনে ওমর (রা.) বলতেন, ‘তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে সকাল বেলার অপেক্ষা (আশা) করো না এবং সকালে উপনীত হয়ে সন্ধ্যা বেলার অপেক্ষা করো না। সুস্বাস্থ্যের দিনগুলোতে রোগব্যাধির (দিনগুলোর) জন্য প্রস্তুতি নাও এবং জীবদ্দশাটাকে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত করো। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪১৬; তিরমিজি, হাদিস : ২৩৩৩; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১১৪)

ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) একটি বর্গক্ষেত্র আঁকলেন, তার মাঝ বরাবর কয়েকটি সরল রেখা টানলেন, যা বর্গক্ষেত্র ভেদ করে বাইরে চলে গেছে। তিনি মধ্যবর্তী এ রেখাটির সঙ্গে যুক্ত আরো কতগুলো ছোট ছোট সরলরেখা (আড়াআড়িভাবে) টানলেন, তারপর বলেন, ‘এটা হলো মানুষ এবং এটা তার মৃত্যু, যা তাকে বেষ্টন করে আছে। (বর্গক্ষেত্র ভেদ করে) বাইরে বেরিয়ে যাওয়া রেখাটুকু হচ্ছে তার আশা-আকাঙ্ক্ষা। ছোট রেখাগুলো হলো তার জীবনের বিপদ-আপদ। একটি বিপদ থেকে ছুটতে পারলে অপর বিপদ এসে তাকে বিচলিত করে। আবার দ্বিতীয়টি থেকে রেহাই পেলে তৃতীয়টি তাকে নিষ্পেষিত করে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪১৭; তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৪; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৩১)

আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সাতটি জিনিস প্রকাশ পাওয়ার আগেই তোমরা নেক কাজের দিকে সত্বর অগ্রসর হও : তোমরা কি অপেক্ষা করছ এমন দারিদ্র্যের, যা অমনোযোগী (অক্ষম) করে দেয়; অথবা এমন প্রাচুর্যের, যা ধর্মদ্রোহী বানায়; অথবা এরূপ রোগ-ব্যাধির, যা (দৈহিক সামর্থ্যকে) তছনছ করে দেয়; অথবা এমন বৃদ্ধাবস্থার, যা জ্ঞান-বুদ্ধিকে লোপ করে দেয়; অথবা এমন মৃত্যুর, যা অলক্ষ্যেই উপস্থিত হয়; কিংবা দাজ্জালের, যা অপেক্ষমাণ নিকৃষ্ট অনুপস্থিত বস্তু; অথবা কিয়ামতের, যা অত্যন্ত বিভীষিকাময় ও তিক্ত। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৬)

আবু হুরায়রা বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা (দুনিয়ার) স্বাদ-আহ্লাদ নিঃশেষকারী মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করো। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৬)

ইবন ওমর (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে বসা ছিলাম। এ সময় একজন আনসার তার কাছে আসে। সে নবীকে (সা.) সালাম করে বলে, হে আল্লাহর রাসুল, সর্বাপেক্ষা উত্তম ঈমানদার কে? তিনি বলেছেন, তাদের মধ্যে যাদের চরিত্র উত্তম। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করে, সর্বাপেক্ষা পারদর্শী ঈমানদার কে? তিনি বলেন, যারা মৃত্যুকে বেশি স্মরণ করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী অধ্যায়ের জন্য উত্তমরূপে প্রস্তুতি গ্রহণ করে, এরাই সর্বোত্তম দূরদর্শী। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৫৯)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কেননা সে পুণ্যবান হলে সম্ভবত সে পুণ্য বৃদ্ধি করবে। আর পাপী হলে (পাপ থেকে) তাওবা করতে পারবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৩৯, ৫৬৭৩)

প্রত্যেকেরই মৃত্যুর সময় নির্ধারিত। এটা এক সেকেন্ডও এদিক-সেদিক হবে না। কখন মৃত্যু আসবে, মানুষ জানে না। মানুষ যেন মৃত্যুকে ভুলেই থাকে। দুনিয়ার আরাম-আয়েশের পেছনে ছুটে চলা দেখলে তো তা-ই মনে হয়। দুনিয়ায় মানুষের যত কর্ম, সবই সেদিন প্রকাশিত হবে। কোনো কিছু সেদিন আর গোপন থাকবে না। আমরা কেন ভুলে যাই- দৃশ্য-অদৃশ্য যা কিছু হয়; সবই আল্লাহপাক দেখেন। মানুষের মনের কথাও আল্লাহপাক জানেন। মানুষ মানুষকে ফাঁকি দিতে পারে; কিন্তু মহান রাব্বুল আলামিনকে ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব। এই চিন্তাটুকু মাথায় থাকা জরুরি। কোরআন মজিদে বলা হয়েছে, ‘হে নবী, আপনি বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়ন করতে চাও, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের কাছে পৌঁছবে। অতঃপর তোমরা অদৃশ্য ও দৃশ্যের জ্ঞানী আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। আর তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন তোমাদের সেসব কর্ম, যা তোমরা দুনিয়াতে করতে। ’ (সুরা : জুমুআ, আয়াত : ৮)

অতএব, প্রত্যেক মানুষ তার অন্তরে ভালো কাজের তাড়না অনুভব করে—সেই সঙ্গে অনুভব করে তার কুপ্রবৃত্তির তাড়নাও। কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখলেই আছে সুসংবাদ।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২৫
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।