ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

ঈদে সব কালিমা দূর হোক, সম্প্রীতি দৃঢ় হোক

ড. সরদার এম. আনিছুর রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৪
ঈদে সব কালিমা দূর হোক, সম্প্রীতি দৃঢ় হোক

ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদ মানে খুশি।

সোমবার বাংলাদেশে উদযাপিত হবে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। শিশু-কিশোর, যুবা-বৃদ্ধসহ সবার মনেই আনন্দের ধারা বয়ে যায় ঈদের দিনে। ঈদ আসে সত্য ও সুন্দরের জয়গান নিয়ে।

প্রতিটি মুসলিম হৃদয়ে জাগিয়ে তোলে অফুরন্ত প্রেম-প্রীতির নবজাগরণ। নতুন সুর বীণায় ছন্দময় করে তোলে প্রতিটি প্রান্তর; জনপদ। মানবকল্যাণের সব ধরনের উচ্ছ্বাস জাগিয়ে দেয় নবচেতনায় এবং নতুন মাত্রায়। দূর হয়ে যায় মনের সব কালিমা। তাই ঈদুল আযহার দিনে মানুষের সেই চেতনারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে নব উদ্যমে।

মুসলমানদের জীবনে ঈদুল আযহার গুরুত্ব ও আনন্দ অপরিসীম। উৎসব হিসেবে পবিত্র ধর্মীয় অনুভূতি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইসলামের জীবন আর ধর্ম একই সূত্রে গাথা। তাই ঈদ শুধু আনন্দের উৎস নয়, বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কর্তব্যবোধ, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের বৈশিষ্ট্য। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সম্প্রীতির ভাবটা এখানে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এলাকার মানুষ ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহে সমবেত হয়। এতে সবার মধ্যে একাত্মতা ও সম্প্রীতি ফুটে ওঠে-ইসলামের মহান ভ্রাতৃত্ববোধে সবাই উদ্দীপ্ত হয়। পরস্পর কোলাকুলির মাধ্যমে সব বিভেদ ভুলে গিয়ে পরস্পর ভাই বলে গৃহীত হয়।

ধনী-গরিবের ব্যবধান তখন আর থাকে না। ঈদের আনন্দ সবাই ভাগ করে নেয়। ফলে ধনী-গরিব, শত্রু-মিত্র, আত্মীয়স্বজন- সবাই পরস্পর ভ্রাতৃত্বের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকে। ঈদ মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভোলার জন্য, মানুষের মধ্যে প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি হওয়ার জন্য পরম মিলনের বাণী নিয়ে আসে। ঈদুল আযহায় যে কোরবানি দেওয়া হয়, তার মাধ্যমে মানুষের মনের পরীক্ষা হয়, কোরবানির রক্ত-মাংস কখনোই আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। কোরবানির মাধ্যমে দেখা হয় মানুষের হৃদয়কে। ঈদের মধ্যে আছে সাম্যের বাণী, সহানুভূতিশীল হৃদয়ের পরিচয়। পরোপকার ও ত্যাগের মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয় মানুষের মন।

হজরত ইবরাহিমের (আ.) ত্যাগের সেই ঐতিহাসিক শিক্ষাকে উঁচু করার জন্য প্রতি বছর আমাদের সামনে আসে পবিত্র ঈদুল আযহা। এক কথায়, মানুষের পশুত্ব মানবিকতার উদ্যত ও অহমিকার মূলোৎপাটন করতেই মূলত ঈদুল আযহার আগমন ঘটে মুসলিম জাহানে।

বিশ্বব্যাপী আজ যে হাহাকার ও বিপন্ন মানবতার চিৎকার, তা থেকে বিশ্ববাসীকে মুক্ত করতে ঈদুল আযহার শিক্ষা প্রতি বছর আমাদের সামনে এসে স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে। মানবতার কল্যাণ সাধনে ইসলাম যে ক'টি শিক্ষা মানুষের সামনে তুলে ধরে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঈদুল আযহার শিক্ষা।

ঈদুল আযহার পবিত্র এ দিনে পশু কোরবানি দেওয়ার মধ্যে রয়েছে মানব মনের সমস্ত পশু প্রবৃত্তির মূলোৎপাটন এবং আত্মশুদ্ধি ও মানবিক কল্যাণ চেতনাকে শাণিত করার জ্বলন্ত শিক্ষা। আর এতে নবজাগৃতি ও নবশক্তির উদ্বোধন ঘটে প্রতিটি মুসলিম অন্তরে।

এভাবে ধর্মীয় একটি উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে মানুষ ও সমাজকে তুলে আনার যে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি তা অবশ্যই গুরুত্ববহ এবং ইসলামী বিধানের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যকেই উন্মোচিত করে।

অতএব আসুন, ঈদুল আযহার দিনে প্রকৃত ঈদের খুশি নিয়ে মানবতার কল্যাণে যা পবিত্র কোরআনে ঘোষিত হয়েছে, 'বলো আমার নামাজ, আমার ইবাদতের সমস্ত অনুষ্ঠান, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছুই মহান আল্লাহর জন্য। আসুন সবাই সেই আলোকে জীবনকে গড়ে তুলি। মনের পশুবৃত্তিকে সংহার করে মানবতার জয়গানে মেতে উঠি। সেই সঙ্গে ত্যাগের মাধ্যমে সবার মনের কালিমা দূর হোক, আমাদের সমাজে গড়ে উঠুক দৃঢ় সম্প্রীতি। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে আমরা সবাই ভাইয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শান্তিতে বসবাস করি।
সবাইকে ঈদ মোবারক।

ইসলাম ডেস্ক মেইল: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।